এজবাস্টনে তৈরি হচ্ছেন শোয়েব মালিক। শনিবার। ছবি: এপি
পাকিস্তানের নেটে রিভার্স সুইপের বিশেষ অনুশীলন দেখে তাঁর কথা মনে পড়ে যাবে। রিভার্স সুইপের জনক যে তাঁকেই বলা হয়। এজবাস্টনে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের আগে তাঁকে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক মনে হবে কারণ, তিনি বার্মিংহামেই থাকেন চল্লিশ বছর ধরে। আনন্দবাজার-এর সঙ্গে ফোনে কথা বললেন বিখ্যাত মহম্মদ ভাইদের অন্যতম এবং হানিফ মহম্মদের ছোট ভাই মুস্তাক মহম্মদ।
ক্রিকেট দেখেন কি না: হ্যাঁ, অবশ্যই দেখি। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই ক্রিকেট হোক না কেন, আমি চোখ রাখার চেষ্টা করি। লর্ডস বা এজবাস্টনে হলে তো দেখিই।
রবিবার মাঠে আসবেন কি না: টিকিট তো কেউ পাঠায়নি আমাকে। তা হলে আর যাব কী করে? (কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ, আহত মনে হল)
ভারতে জন্ম: দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে আমরা চলে এসেছিলাম। আমার বয়স তখন ছিল পাঁচ বছর। রাজকোটে কাথিয়াওয়াড়ের কাছে অবস্থিত জুনাগড়। সেখানেই আমরা থাকতাম। আমার বাকি সব ভাই ওখানেই বড় হয়েছে। ১৯৪৭ সালে আমরা পাকিস্তানে চলে যাই।
ভারত নিয়ে স্মৃতি: ছোটবেলার কথা খুব বেশি মনে নেই। কারণ, তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। তবে ১৯৬১ সালে আমি ভারতে খেলতে গিয়েছিলাম। তখনকার কথা অবশ্যই মনে আছে। দারুণ সমর্থন পেয়েছিলাম আমরা। তবে আমি সবচেয়ে খুশি হলাম, যখন শুনলাম আমার জন্মস্থান রাজকোটে প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছে।
রবিবারের মহারণ নিয়ে: ভাল ম্যাচ হবে। ভারত ফেভারিট। তবে পাকিস্তানের হারানোর কিছু নেই বলে ওরাও একশো শতাংশ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। তবে শুনছি, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নাকি ভাল নয়। আশা করব বৃষ্টি হবে না। চাইব, সমর্থকরা ভাল একটা ম্যাচ দেখুক। আমি যেতে পারব না। টিকিট নেই!
বর্তমান দলের কাউকে চেনেন কি না: ভারতের কারও সঙ্গে আলাপ নেই। পাকিস্তানের ছেলেদের চিনি। এজবাস্টনেই আমি ওদের নেটে গিয়েছিলাম। কয়েকটা ঘণ্টা খুব ভাল কাটিয়ে এসেছি ওদের সঙ্গে।
দ্বৈরথের ইতিহাস নিয়ে: দারুণ স্বাস্থ্যকর একটা দ্বৈরথ। এটা থেকেই যাবে। খেলাধুলোর দুনিয়ায় খুবই স্পেশ্যাল ম্যাচ হল ভারত বনাম পাকিস্তানের। এটাকে এ রকমই থাকতে দেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কারণে দু’দেশের মধ্যে ম্যাচ হয়ই না। ভারত-পাকিস্তান আরও খেলা হওয়া উচিত।
বর্তমান প্রজন্মের কাকে ভাল লাগে: পাকিস্তানের বাবর আজম ছেলেটা ভাল। পাকিস্তান সুপার লিগেও ভাল খেলেছে। ইয়াসির, মহম্মদ আমির এবং নতুন অধিনায়ক সরফরাজও ভাল। এখনকার ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরাট কোহালি আর সুরেশ রায়নার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আগেকার ক্রিকেটারদের মধ্যে রাহুল দ্রাবিড়কে চিনি। সুনীল গাওস্কর আমার ভাল বন্ধু। কিন্তু সবচেয়ে ভাল বন্ধু বিষাণ সিংহ বেদী। দিল্লিতে গেলে আমি বিষাণের বাড়িতেই থাকি।
অতীতের ভারত-পাক দ্বৈরথ কেমন ছিল: তখন তো ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ হতো না। শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই দু’দেশের দ্বৈরথ হওয়ার সুযোগ ছিল। আমি একটাই সিরিজে খেলেছিলাম। ১৯৭৮-এ বিষাণ খুব শক্তিশালী এবং তরুণ একটা দল নিয়ে পাকিস্তানে খেলতে এসেছিল। সেটাই ছিল কপিল দেবের অভিষেক সিরিজ। ভারতের ওই দলটা বেশ ভাল ছিল। আমাদের দলেও তখন ইমরান খান তরুণ এবং প্রতিশ্রুতিমান। জাভেদ মিয়াঁদাদ ছিল। দারুণ সিরিজ হয়েছিল। সুনীল (গাওস্কর) অসাধারণ খেলেছিল। আমাদের দলের হয়ে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিল জাহির আব্বাস। ওই সিরিজটায় জাহির প্রচুর রান করেছিল। ভারতের ওই তরুণ দল কিন্তু আমাদের সকলের মন জিতে নিয়েছিল। খুবই ভাল লেগেছিল ওই দলটাকে। বিশেষ করে কপিল দেব। সেটাই ছিল কপিলের প্রথম সিরিজ। আমরা নিশ্চিত ছিলাম ওকে দেখে যে, এই ছেলে অনেক দূর যাবে। পাঁচ বছর পরে সেই ছেলেই ভারতের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল। আমাদের ধারণাটা ঠিক প্রমাণিত হয়েছিল।
রিভার্স সুইপের আবিষ্কার এবং পরবর্তী কালে এই শটের রমরমা: মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে একটা কাউন্টি ম্যাচে হঠাৎ করেই আমি এই শটটা খেলেছিলাম। লেগসাইডে ছ’জন ফিল্ডার নিয়ে বল করছিল টিটমাস (ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অফস্পিনার ফ্রেড টিটমাস, যিনি ২০১১ সালে মারা যান)। লেগসাইডে শট নেওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু আমি দেখলাম অফের দিকে থার্ডম্যান থেকে ডিপ পয়েন্ট অঞ্চলটা ফাঁকা। ব্যাট ঘুরিয়ে রিভার্স খেললাম আর বলটা বাউন্ডারি হয়ে গেল। সেটাকেই বলা হয় প্রথম রিভার্স শট। পরবর্তীকালে অনেকেই বলেছেন, আমি এই শটটার জনক। প্রথম নাকি আমার ব্যাট দিয়েই বেরিয়েছিল এই শট। শুনে ভাল লাগে যে, আমি একটা নতুন শট উদ্ভাবন করতে পেরেছিলাম। আর একটা কথাও ভাবি যে, আজকের দিনে এই টি-টোয়েন্টির যুগে খেললে নিশ্চয়ই এই শটটা আমাকে আলাদা অ্যাডভ্যান্টেজ দিত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy