মুয়ালপুইয়ের পাহাড়ে ঘেরা রাজীব গাঁধী স্টেডিয়াম যেন ফুটবলের ধর্মশালা!
আইজল শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে হলেও অদ্ভুত রকমের শান্ত পরিবেশ মুয়ালপুইয়ের। বৃহস্পতিবার প্রায় সারা রাত ধরে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার পরে রোদ ওঠায় এ দিন আরও মোহময়ী দেখাচ্ছিল মুয়ালপুই-কে। আইজল এফসি ম্যাচের চিন্তায় থমথমে মুখে ঘুরতে থাকা সনি নর্দে, কাতসুমি ইউসা-দেরও মন ভাল হয়ে গিয়েছিল শুক্রবার দুপুরে স্টেডিয়ামে পা দিয়েই। কিন্তু সবুজ-মেরুন শিবিরে স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হল না। অনুশীলনে কুঁচকিতে চোট পেয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিলেন অন্যতম প্রধান স্ট্রাইকার ড্যারেল ডাফি!
মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন মনে মনে ডাফি-জেজে লালপেখলুয়া জুটিকে ফরওয়ার্ডে রেখেই আইজল-বধের মহড়া শুরু করে দিয়েছিলেন। মিনিট পনেরো অনুশীলনের পরেই বিপর্যয়। কুচঁকিতে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন স্কটিশ স্ট্রাইকার। বাকি সময়টা আইসপ্যাক লাগিয়ে সাইড লাইনের ধারে বসেই দেখলেন সতীর্থদের প্রস্তুতি।
অনুশীলন শেষ হওয়া মাত্রই ডাফির কাছে ছুটে আসেন সনি। মোহনবাগান কোচ অবশ্য দাবি করছেন, ডাফির কিছুই হয়নি। আজ, শনিবার আইজল ম্যাচে খেলতেও সমস্যা হবে না। সবুজ-মেরুন অন্দরমহলের ছবিটা কিন্তু পুরোপুরি উল্টো। জানা গিয়েছে, টিম হোটেলে ফিরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ডাফি-কে সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ডাফি যদি শুরু থেকে খেলতে না পারেন তা হলে কী হবে? জেজে-র সঙ্গে বলবন্ত সিংহ-কে খেলানোর প্রস্তুতিও সেরে রাখলেন সঞ্জয়। অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে মাঠের মধ্যেই আলোচনা করলেন সনির সঙ্গে।
আইজল শিবিরে চোট-আঘাতের কোনও উদ্বেগ নেই। ফুটবলাররা বেশ খোশমেজাজে আছেন। শুক্রবার সকালে ঘন কুয়াশার মধ্যেই অনুশীলন করেন তাঁরা। কোচ খালিদ জামিলের জন্মদিন ছিল শুক্রবার। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘আইজলের কোচ হিসেবে আমার সেরা প্রাপ্তি হচ্ছে ফুটবলারদের মানসিকতা। ওরা হৃদয় দিয়ে খেলে। আর সমর্থকরাই আমাদের প্রেরণা’’ আইজল সমর্থকদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান কোচও। সাংবাদিক বৈঠকে সঞ্জয় বললেন, ‘‘আইজলের দর্শকদের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা আমাকে মুগ্ধ করে। নির্বাসিত থাকায় দুর্ভাগ্যবশত গত বছর আই লিগে আমি টেকনিক্যাল এরিয়ায় বসতে পারিনি। তবে বাইরে থেকেই উপভোগ করেছিলাম।’’
মাঠের বাইরে থেকেই গত বছর তিনি দেখেছিলেন আইজলের কাছে হেরে আই লিগ খেতাবের দৌড় থেকে মোহনবাগানের ছিটকে যাওয়া। এ বারও অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে মাত্র এগারো পয়েন্ট পেয়েছেন সনি-রা। শনিবার কী হবে? এই একবারই বিরক্ত হলেন সঞ্জয়। বললেন, ‘‘অ্যাওয়ে ম্যাচে আমরা ভাল খেলতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে মোহনবাগানই লিগ টেবলের শীর্ষে। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন দু’বছর আগে আই লিগ জয়ের ঘটনা। বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধেও আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচই খেলেছিলাম। ফুটবলে অসম্ভব কিছুই নয়।’’
তবে এই ম্যাচের আগে সবচেয়ে সমস্যায় জেজে! আইজলের ফুটবল তারকা এখন তিনি। গ্রাম থেকে সবুজ-মেরুন স্ট্রাইকারের বাবা ও মা আসছেন ম্যাচ দেখতে। নিজের শহরের বিরুদ্ধেই নামতে হবে শনিবার। উভয়সঙ্কটে পড়া জেজে কোচের পাশে বসেই বললেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়াই একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু আইজলের বিরুদ্ধে গোল করলেও উৎসব হয়তো করতে পারব না!’’
পাহাড়ে আজ শুধুই খেতাবি ফয়সালার ম্যাচ নয়। চলবে আবেগের রক্তক্ষরণও!
শনিবার
আইজল এফসি বনাম মোহনবাগান (দুপুর, ২.০৫)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy