সঙ্গী: টেস্টে দেশের দুই সেরা কিপার, ঋদ্ধিমান ও পার্থিব।
ক্রিকেটের নতুন নিয়ম। এ বার থেকে উইকেটকিপারের চোট লাগলে তাঁর জায়গায় নামানো যেতে পারে পরিবর্ত উইকেটকিপার। আগে পরিবর্ত ফিল্ডার পাওয়া যেত কিন্তু দলের মধ্যে থেকে কাউকে উইকেটকিপিং গ্লাভস পরতে হতো।
পাল্টে যাওয়া এই নিয়মের হাত ধরে ফিরে আসতে চলেছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক প্রথা। বিদেশ সফরে এখন থেকে ফের দেখা যেতে পারে দ্বিতীয় উইকেটকিপার। বেশ কয়েক দশক ধরেই যে চল অন্তত ভারতীয় ক্রিকেট থেকে উঠেই গিয়েছে। বিরাট কোহালিদের দলে বিদেশে দ্বিতীয় উইকেটকিপার রাখার প্রথা ফিরতে পারে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই।
নতুন বছরের গোড়াতেই এ বি ডিভিলিয়ার্সদের দেশে টেস্ট সিরিজ রয়েছে। সেখানে ঋদ্ধিমান সাহা যে প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে যাবেন, তা নিয়ে কোথাও কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য এ বার ঋদ্ধির সঙ্গে নেওয়া হতে পারে আরও এক জনকে। যাতে কোনও কারণে যদি ম্যাচ চলাকালীন প্রথম উইকেটকিপারের চোট লাগে বা কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, নতুন নিয়মকে অস্ত্র করে বিকল্প ফিল্ডার হিসেবে উইকেটকিপার নামানো যায়। দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবেও ঋদ্ধির বিকল্প হিসেবে নেমে পড়তে পারবেন সেই উইকেটকিপার।
কে হবেন সেই দ্বিতীয় উইকেটকিপার? অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য দৌড়ে এগিয়ে পার্থিব পটেল। দেশের মাঠে গত বছর ইংল্যান্ড সিরিজের সময় ঋদ্ধিমান চোট পাওয়ার পরে দলে ঢুকে পার্থিব ভাল কিপিং তো করেইছিলেন, ব্যাট হাতেও সফল হয়েছিলেন। ঋদ্ধি সুস্থ হয়ে উঠতে তাঁকেই এক নম্বর কিপার হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু ভারতীয় দলের টেস্ট ক্রিকেটের মার্কশিটে পার্থিব বেশ ভাল নম্বর নিয়ে বসে আছেন। তাই বহু দিন পরে বিদেশ সফরে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে তাঁকেই দেখা যেতে পারে।
ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে আর যাঁরা উইকেটকিপার আছেন, তাঁরা কেউ ঋদ্ধির মতো টেস্ট স্পেশ্যালিস্ট নন। বাংলার উইকেটকিপারকে দেশের এক নম্বর কিপার তো বটেই, বিশ্বের অন্যতম সেরাও মানেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালি। তাঁর কাছাকাছি কেউ নেই। অভিজ্ঞ দীনেশ কার্তিক বা তরুণ ঋষভ পন্থ— দু’জনকেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটের কিপার বলে মনে করা হচ্ছে। সে দিক দিয়ে পার্থিব অনেকের চেয়ে এগিয়ে। ভারতীয় দলের জন্য নতুন করে ধার্য করা কঠোর ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করলে তিনিই হতে পারেন ঋদ্ধির সঙ্গী।
পার্থিবের এখন বয়স ৩২। ২০০২ সালে ১৮ বছরের ‘শিশুসুলভ’ মুখ নিয়ে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় দলের হয়ে। কাকতালীয় ভাবে সেটাও ছিল বিদেশ সফর। ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, স্টিভ হার্মিসনদের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর। টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনও সম্ভবত হতে যাচ্ছে আর একটি বিদেশ সফরে। মাঝে পনেরো বছরের তফাত। যদি সত্যিই পার্থিব ফিট থেকে কোহালিদের দলের সঙ্গে কেপ টাউনের (নতুন বছরে সেখানেই প্রথম টেস্ট) উড়ানে উঠে পড়তে পারেন পার্থিব, ছোটখাটো ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
এমনিতে দেশের মাঠে খেলা হলে চোদ্দো বা পনেরো জন ক্রিকেটারকে নিয়ে ভারতীয় দল তৈরি হয়। বিদেশ সফরে গেলে এতদিনকার রেওয়াজ ছিল, ষোলো জন নিয়ে যাওয়ার। এ বারে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আঠেরো জনের দল নিয়ে যেতে চাইছেন শাস্ত্রী-কোহালিরা। তার কারণ হচ্ছে, বিদেশ সফরের জন্য বিশেষ ভাবে একটি গ্রুপকে তৈরি করা। শাস্ত্রী এবং কোহালির নেতৃত্বে এই দল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিদেশে টেস্ট ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্সের উপর। ভারতীয় বোর্ডের কাছে তাঁরা বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৮ জনের স্কোয়াড পাঠানোর জন্য। সেটা মঞ্জুর হয়ে যাবে ধরে নিয়েই একটি জায়গা রাখা হচ্ছে দ্বিতীয় উইকেটকিপারের জন্য।
ভারতীয় ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই যদিও দ্বিতীয় উইকেটকিপার নিয়ে যাওয়ার প্রথা উঠে গিয়েছে। ১৯৮৫ সালে ভারত যে শ্রীলঙ্কা সফর করেছিল তাতে একমাত্র উইকেটকিপার ছিলেন সদানন্দ বিশ্বনাথ। শ্রীলঙ্কা তা-ও ঘরের কাছে। এমনকী, ১৯৯০-তে নিউজিল্যান্ড সফরে পর্যন্ত একমাত্র উইকেটকিপার হিসেবে কিরণ মোরেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সফরে পরিবর্ত কিপারের নাম? ভারতের হয়ে সাতটি ওয়ান ডে খেলা ওপেনার ভি বি চন্দ্রশেখর। মাঝেমধ্যেই যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন নিয়মের হাত ধরে কিরণ মোরেদের ইতিহাস এতদিন পরে পাল্টে যাওয়ার মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy