নায়ক: ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোলের পরে মহমেডানের ফিলিপ আজার উৎসব। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। নিজস্ব চিত্র
দিপান্দা ডিকার কায়দায় প্রথম গোলটার পর তাঁর অভিনব হামাগুড়ি উৎসব দেখে যুবভারতীতে ঘুরপাক খেতে শুরু করল একটাই প্রশ্ন। কিসের জন্য সাদা-কালো স্ট্রাইকারের এই উচ্ছ্বাস? তা হলে কী মোহনবাগানের ডিকার মতো তাঁরও কোনও সদ্যজাত সন্তান আছে? যাঁকে গোল উৎসর্গ করছেন তিনি। বিরতির পরে চুয়াত্তর মিনিটে সুপার সাব হিসাবে খেলতে নেমে ইস্টবেঙ্গলকে লিগ খেতাব থেকে ছিটকে দেওয়ার নায়ক টিটে নারহা ফিলিপ আজা কিন্তু বলে দিলেন, ‘‘গোল করলেই আমি উচ্ছ্বাসে রকম হামাগুড়ি উৎসব করে থাকি। আমাদের ওখানে অনেকেই এটা করে। এটা কাউকে উদ্দেশ করে করিনি।’’
সদ্য বিশ্বকাপ খেলে আসা জনি আকোস্তাকে ছিটকে দিয়ে দশ মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে যিনি মঙ্গলবার অঘটন ঘটালেন, সেই আজা আসলে পাড়ায় পাড়ায় ‘খেপ’ খেলা বেড়ানো এক অনামী ফুটবলার। ঘানার অনামী দল বাসালি ক্লাবে খেলতেন এক সময়। কিন্তু সেখানে টাকা পেতেন না। তাই ভাগ্য ফেরাতে চলে এসেছিলেন ভারতে। বেড়ানোর ভিসা নিয়ে, মাত্র দু’মাসের জন্য। কলকাতা বা শহরতলীর পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন টুনার্মেন্টে হয়ে প্রায়শই দেখা যায় অচেনা-অজানা প্রচুর বিদেশি ফুটবলারকে খেলতে। ভাড়া করা ফুটবলার হিসাবে ওঁরা খেলে বেড়ান। তাদের সঙ্গেই এজেও ভিড়ে যান। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরে যান তিনি। ভাল বিদেশি স্ট্রাইকারের খোঁজে ছিলেন মহমেডান কর্তারা। ‘খেপ’ খেলার এক এজেন্টের মাধ্যমে তাঁরা খোঁজ পান আজার। তাঁকে ট্রায়ালে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় মহমেডান কোচ রঘু নন্দীর। দু’বছরের চুক্তিতে তাঁকে সই করিয়ে নেন সাদা-কালো কর্তারা। মঙ্গলবার ছিল লিগে আজার দ্বিতীয় ম্যাচ। রাতারাতি তারকা হয়ে যাওয়া স্ট্রাইকার বলছিলেন, ‘‘এর আগে খেপ খেলতে একবার ভারতে এসেছিলাম। মহমেডানে সই করার পর আমার লক্ষ্য ছিল নিজেকে প্রমান করা। ইস্টবেঙ্গল বড় দল। ওদের বিশ্বকাপার স্টপারকে দেখছিলাম রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। খুব স্লো। জানতাম, আমার গতির সঙ্গে ও পারবে না। নেমেই সেটা কাজে লাগিয়েছি।’’
ছোট ডার্বিতে নেমেই কোনও বিদেশির জোড়া গোল, বহু দিন দেখেনি ময়দান। ঘানার আক্রা শহরের এক অনামী ফুটবলারের সৌজন্যে সেটা দেখল শহর। পিছিয়ে পড়া মহমেডানকে তিনি শুধু টেনে তুলে জেতানই, বৃষ্টি মাঠে খেপ খেলা ফুটবলাররা যে কী ভয়ঙ্কর সেটাও প্রমাণ করে দিয়েছেন আজা।
লিগ খেতাবের দৌড়ে আগেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল। রঘু নন্দীর মহমেডান তাদের ছিটকে দেওয়ার পর, লাল-হলুদে অসন্তোষ চরমে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, বিশ্বকাপার জনি আকোস্তার পারফরম্যান্স ও দায়বদ্ধতা নিয়েও। আকোস্তা মাঠে নামার আগে ইস্টবেঙ্গল সাত ম্যাচে এক গোল খেয়েছিল। কোস্টা রিকার স্টপার নামার পর তিন ম্যাচে ছয় গোল খেয়েছে সুভাষ ভৌমিকের দল। আজা, আনসুমানা ক্রোমা, পিন্টু মাহাতো, নরহরি শ্রেষ্ঠারা গোল করে গিয়েছেন তিরিশ বছরের লাল-হলুদ বিদেশিতে টপকে। যার জেরে আকোস্তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম টিপ্পনি কাটা চলছে। লাল-হলুদের ফুটবল সচিব রজত গুহ এতটাই ক্ষুব্ধ যে বলে দিলেন, ‘‘আকোস্তাকে এনে কী লাভ হল? পা বাঁচিয়ে খেলছে। মহমেডানের প্রথম গোলটার সময় ওভাবে পা তুলে নেবে! দলের ফোকাসটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য।’’ প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিকের ভবিষ্যৎ নিয়েও। তিনি অবশ্য ম্যাচের পর কোনও কথা না বলেই বাড়ি চলে যান। সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠিয়ে দেন কোচ বাস্তব রায়কে। তবে লিগের মাঝে স্প্যানিশ কোচকে এনে গ্যালারিতে খাতা-পেন দিয়ে বসিয়ে রাখাটা ইস্টবেঙ্গলের পুরো দলের উপর প্রভাব ফেলেছে কী না তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। লাল-হলুদ কোচ বাস্তব অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দেননি। বলে দিয়েছেন, ‘‘এটা হওয়ার কোনও কারণ নেই।’ তবে মহমেডান কোচ রঘু বললেন, ‘‘ঘাড়ের উপর বিদেশি কোচ এনে বসিয়ে রাখলে কেউ সুস্থ ভাবে কোচিং করতে পারে? আমি হলে তো ছেড়ে চলে যেতাম। স্প্যানিশ কোচ আসার পর থেকেই ইস্টবেঙ্গল খারাপ খেলছে।’’ প্রথম বড় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ময়দানের পোড় খাওয়া কোচের এটাই সেরা সাফল্য। বলছিলেন, ‘‘আঠাশ বছর কোচিং করাচ্ছি। আজকের দিনটা আমার কাছে স্মরণীয় দিন।’’
আজার মতো রঘুরও তো আজ প্রমাণের দিন ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy