যুব বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে লুইস নর্টন দে মাতোসের তৈরি করা স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। যে কায়দায় পর্তুগিজ কোচ যুক্তরাষ্ট্রকে আটকাতে গিয়েছিলেন, তা সঠিক কি না তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেন প্রাক্তন তারকারাও। এমনকী, টেকনিক্যাল কমিটির শনিবার সকালের সভাতেও ময়নাতদন্তের মুখে পড়ল মাতোসের পারফরম্যান্স। সেখানেও সদস্যরা দু’ভাগ।
কেউ ভারতের অতি রক্ষণাত্মক মনোভাবের সমালোচনায় মুখর, কেউ আবার মনে করছেন এটাই সঠিক স্ট্র্যাটেজি ছিল। দেশের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলে দিচ্ছেন, ‘‘মাতোসের তৈরি করা ছকের জন্যই ভারতের ঘাড়ে চেপে বসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলা উচিত ছিল। কম গোল খাব, এই মনোভাবটা টিমের মধ্যে শুরুতে ঢোকানো মানে হার মেনে নেওয়া।’’
দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে বসে শনিবার সকালে পি কে-র তির যখন পর্তুগীজ কোচের দিকে, তখন কলকাতার বাড়িতে বসে ভারতীয় ফুটবলের আর এক কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী কিন্তু উল্টো কথা বলছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অনেক শক্তিশালী টিম। তাদের বিরুদ্ধে মাতোস যা করেছেন, সেটাই সঠিক পথ। কারণ খেলা দেখে ভারতের রক্ষণই সবথেকে ভাল বলে আমার মনে হয়েছে। মাতোস তাই আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলতে চেয়েছিল। পেনাল্টিটা না হলে লড়াইটা জমত। হয়তো পাল্টা আক্রমণে গোলও পেয়ে যেত ভারত।’’
আরও পড়ুন: কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে কোন বাঙালি? সাক্ষাৎকারে অকপট মাতোস
শুক্রবার দিল্লির নেহরু স্টেডিয়ামে বসে তিন গোলে হার দেখার পর কিংবদন্তি পিকে-র সমালোচনাকে সমর্থন করেছেন প্রাক্তন অলিম্পিক্স অধিনায়ক বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও। তেমনই আবার চুনীর পাল্টা ভাবনার সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন আই এম বিজয়ন এবং ভাইচুং ভুটিয়া। আর সিনিয়র ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর মন্তব্য, ‘‘মাতোসের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কিছু বলব না। তবে ছেলেরা যে লড়াইটা করেছে সেটা দারুণ লেগেছে। পরের ম্যাচে ওরা আরও ভাল খেলবে।’’
পেলের কসমসের বিরুদ্ধে টিম নামানোর উদাহরণ টেনে এনে তৎকালীন মোহনবাগান কোচ পিকে-র মন্তব্য, ‘‘কসমসের চেয়ে তো আর এই যুক্তরাষ্ট্র ভাল টিম নয়। সে দিন ম্যাচে নামার আগে তো সবাই বলছিল, পাঁচ-সাত গোল খাব। খেয়েছিলাম কি? বাবলু ভট্টাচার্য (সুব্রত), গৌতম সরকার, মহম্মদ হাবিবকে জি়জ্ঞাসা করুন কীভাবে ওদের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে দিয়েছিলাম। হারব না, এই মনোভাবটা ওদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। অমরজিৎ-অনিকেতদেরও তো দেখলাম একটা জেদ ছিল। ছোট ছোট ছেলেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে কুর্নিশ করতেই হবে। কিন্তু কোচ যদি ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ানের মতো পিছন থেকে দড়ি টেনে ধরেন তা হলে ছেলেরা দৌড়বে কী করে? শুরুতেই ওদের ভয় পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। আট জন ডিফেন্স করা মানে তো তাই।’’
গ্রুপ লিগে ভারতের পরের ম্যাচ কলম্বিয়ার সঙ্গে সোমবার। টুর্নামেন্টে টিঁকে থাকতে হলে ওই ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট পেতেই হবে। দেশের জার্সিতে বহু টুনার্মেন্টে শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে কোচিং করানো পি কে বলে দিলেন, ‘‘শুরু থেকেই একটা ঝড় তুলে বিপক্ষকে চমকে দিতে হয়। তখন গোল না পেলে ব্যালান্সড ফুটবল খেলুক ভারত। এবং খেলা হোক মাটিতে বল রেখে।’’ চুনীও মনে করেন, ‘‘কাজটা কঠিন, তবে জেতার একটা চেষ্টা করা যেতেই পারে। ঘানার সঙ্গে পারব না আমরা। কলম্বিয়ার সঙ্গে পারা যেতে পারে।’’
পিকে-র সমর্থনে দাঁড়িয়ে বদ্রুর আবার মন্তব্য, ‘‘মাঠে বসে আমি আর প্রদীপ আলোচনা করছিলাম, শুধু দৌড়ে যাচ্ছে টিমটা। আক্রমণে ঝলক কই? মাতোস কী করল?’’ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য প্রশংসা করলেন টিমের গোলকিপার ধীরাজ মাইরাংথেমের। বললেন, ‘‘ছেলেটার গ্রিপিং ছাড়া সব কিছু ভাল। শুধু ঘুষি মেরে বল মারার প্রবণতা থাকলে ভাল কিপার হওয়া যায় না। ঠিকঠাক ঘষামাজা করলে দেশ একজন ভাল কিপার পাবে।’’ পাশাপাশি সংবর্ধনা বিভ্রাটে জেরবার হওয়ার পর ভাস্করের মন্তব্য, ‘‘বিশ্বকাপে ভারতের আরও ভাল খেলা প্রত্যাশা করেছিলাম।’’ সেটা মেনে নিচ্ছেন আইএম বিজয়নও। ‘‘এত দর্শকের সামনে প্রথম ম্যাচে ওরা ঘাবড়ে গিয়েছিল হয়তো। কোচ হয়তো ভেবেছিলেন, বিরতি পর্যন্ত আটকে দিয়ে পরে আক্রমণে উঠবেন। দ্বিতীয় ম্যাচটা দেখুন।’’ শ্যাম থাপার নেতৃত্বে এ দিন দিল্লিতে টেকনিক্যাল কমিটির সভায় কাটাছেঁড়া হয় মাতোসের টিমের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। যা খবর তাতে, যুব বিশ্বকাপে বাকি দু’ম্যাচে লজ্জাজনক হার হলে মাতোসের চাকরি নিয়েই টানাটানি শুরু হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy