Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আইপিএল দেখে হবে না নির্বাচন, বলে দিলেন বিরাট

ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালির চোখে এখন কী ভাসছে, সেটা নিশ্চিত করে তিনিই বলতে পারবেন। কিন্তু বিশ্বকাপ কাউন্টডাউনের শেষ ল্যাপে এসে ভারত অধিনায়কের ক্রিকেট মস্তিষ্ক যে ওভারটাইম খাটতে শুরু করেছে একটা লক্ষ্যকেই সামনে রেখে, তা তাঁর কথাবার্তায় পরিষ্কার। লক্ষ্যটা বুঝতে কোনও আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই। অর্জুনের পাখির চোখ এখন একটাই— বিলেতের মাঠে বিশ্বজয়।

ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালির চোখে এখন কী ভাসছে, সেটা নিশ্চিত করে তিনিই বলতে পারবেন।

ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালির চোখে এখন কী ভাসছে, সেটা নিশ্চিত করে তিনিই বলতে পারবেন।

কৌশিক দাশ
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

ব্যাটটা হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে ‘রাজা’ এক বার চার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। কিং কোহালি কি শুক্রবার সকালে উপ্পলের নেটে দাঁড়িয়ে তাঁর বর্তমান সাম্রাজ্যের উপরেই তখন চোখ বোলালেন? না কি তাঁর সুদূরপ্রসারিত দৃষ্টিতে ধরা পড়ল কোনও এক অদূর ভবিষ্যতের ছবি, যেখানে ইংল্যান্ডের বুকে বিশ্বজয়ের পরে উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা?

ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালির চোখে এখন কী ভাসছে, সেটা নিশ্চিত করে তিনিই বলতে পারবেন। কিন্তু বিশ্বকাপ কাউন্টডাউনের শেষ ল্যাপে এসে ভারত অধিনায়কের ক্রিকেট মস্তিষ্ক যে ওভারটাইম খাটতে শুরু করেছে একটা লক্ষ্যকেই সামনে রেখে, তা তাঁর কথাবার্তায় পরিষ্কার। লক্ষ্যটা বুঝতে কোনও আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই। অর্জুনের পাখির চোখ এখন একটাই— বিলেতের মাঠে বিশ্বজয়।

যে রাস্তায় হাঁটা শুরু হচ্ছে আজ, শনিবার, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে। যার ২৪ ঘণ্টা আগে কোহালির কথা শুনে স্পষ্ট, তিনি এই সিরিজকে কাপ প্রস্তুতির মঞ্চ তো বটেই, একেবারে চূড়ান্ত মঞ্চ হিসেবেই দেখছেন। কেউ যদি ভেবে থাকেন, কেন এর পরে তো আইপিএল আছে। সেখানে দারুণ কিছু করে দেখানোর একটা সুযোগ তো থাকছেই। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে তো আর বিশ্বকাপের দল বাছা হবে না। যাঁরা এই ধারণায় বিশ্বাসী, তাঁদের ভুল ভাঙিয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং কোহালি। বলে দিচ্ছেন, বিশ্বকাপ দল গড়ার সময় আইপিএলের পারফরম্যান্স মোটেই মাথায় রাখা হবে না।

নকিং থেকে শুরু হয়ে থ্রোডাউনে শেষ করেছেন অনুশীলন পর্ব। তার পরেই সটান সাংবাদিকদের সামনে। প্রশ্নটা উড়ে এল তখনই। বিশ্বকাপের আগে তো আইপিএল আছে। আপনাদের যে দু’একটা জায়গা নিয়ে সমস্যা, সেগুলো তো আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখে সমাধান করে ফেলতে পারেন। বিশ্বকাপ দল নির্বাচনের সময় আইপিএলের পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই মাথায় রাখবেন? ভ্রু দুটো কুঁচকে কোহালি এমন ভাবে তাকালেন প্রশ্নকর্তার দিকে যে, অনুচ্চারিত উত্তরটা বুঝে নিতে অসুবিধে হল না— কে বলল আপনাকে? এর পরে অবশ্য উত্তরটা কোনও রকম রাখঢাক না করেই দিয়ে দিলেন— ‘‘বিশ্বকাপ দল নির্বাচনে আইপিএল কোনও প্রভাব ফেলছে, এমনটা আমি দেখছি না। আমাদের আগেই ঠিক করে নিতে হবে, ভাল দল কোনটা। আর বিশ্বকাপে আমরা দলের ক্রিকেটারদের থেকে ঠিক কী চাইছি। আইপিএলের জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গির কোনও পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না। দু’এক জন যদি আইপিএলে ভাল খেলতে না পারে, তা হলে তাদের জন্য বিশ্বকাপের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটা আমি মনে করি না।’’ যে কথার উল্টোটাও সত্যি। কোনও ক্রিকেটার তাই আইপিএল পারফরম্যান্সকে ‘চিচিং ফাঁক’ মন্ত্রে বদলে কাপ-দরজা খুলতে পারবেন না!

বিশ্বকাপে দলের স্বার্থে নিজের ব্যাটিং অর্ডারও বদলে ফেলতে রাজি ভারত অধিনায়ক। কিছু দিন আগে ভারতের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বকাপে প্রয়োজন হলে কোহালিকে চার নম্বরেও ব্যাট করতে হতে পারে। কোচের সঙ্গে গলা মিলিয়ে কোহালিও শুক্রবার বলে গেলেন, ‘‘যদি কোনও ম্যাচে বা ম্যাচের আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, আমি চারে নামলে দলের সুবিধে হবে, তা হলে অবশ্যই নামব।’’

কোহালি এও বলছেন, তিন থেকে চার নম্বরে এলে তাঁর কোনও সমস্যা হবে না। অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আমি অনেকবারই চার নম্বরে ব্যাট করেছি। তাই মনে হয় না, খেলার ধরন পাল্টানোর কোনও প্রয়োজন আছে। তিন বা চার নম্বরে ব্যাট করার টেমপ্লেটটা তো একই রকম। যে কোনও পরিস্থিতিতে আমি আমার নিজের খেলার উপর ভরসা রাখি। তাই দলের স্বার্থে ব্যাটিং অর্ডারে নেমে আসতে আমি পুরোপুরি তৈরি।’’

কোহালি আর তাঁর বাহিনী যখন উপ্পলের রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, গেট দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে ঢুকে পড়েছে টিম বাস। অ্যারন ফিঞ্চদের কাছে অবশ্য এটা বিশ্বকাপ প্রস্তুতির চূড়ান্ত স্টেশন নয়। তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ পাচ্ছেন এর পরে। কিন্তু দল গোছানোর পর্বটা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে খুঁত মেরামত করার পালাও। ফিঞ্চ ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আর ফাটকা নয়। ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের ওয়ান ডে সিরিজে দেশে সাত নম্বরে ম্যাক্সওয়েলকে খেলিয়েছিলেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে ‘ম্যাড ম্যাক্স’-এর ব্যাটিং দেখার পরে তাঁকে আবার প্রথম দিকেই নামানো হচ্ছে। চলছে রিস্টস্পিনারদের বিরুদ্ধে দুর্বলতা মেরামতির চেষ্টাও। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন পরামর্শদাতা শ্রীধরন শ্রীরাম আগের দিন আনন্দবাজারের কাছে তুলে ধরেছিলেন ভারতীয়-ঘূর্ণি সামলানোর জন্য তাঁর নীল নকশা। এ দিন ফিঞ্চ বলে গেলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় আমরা কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালকে সামলাতে সমস্যা পড়ে গিয়েছিলাম। ওরা দুর্দান্ত। কিন্তু এখন আমরা পরিশ্রম করছি স্পিনের বিরুদ্ধে সমস্যাগুলো কাটিয়ে তোলার জন্য। দেখা যাক এই সিরিজে কী হয়।’’

অন ইয়োর মার্ক, গেট সেট,...! একটু অপেক্ষা করুন। আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই আম্পায়ার বলবেন... নাহ, ‘গো’ নয়, ‘প্লে’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE