ইডেনকে আঁধার করে নিভল ফ্লাডলাইট।-নিজস্ব চিত্র
নিউজিল্যান্ড ১৪৫-৮ (২০ ওভার)
বাংলাদেশ ৭০ (১৫.৪ ওভার)
বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে আচমকা ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ বাউন্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ল সিএবি। শনিবার আপাত নির্বিষ বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচকে ঘিরে যে নাটক হল, তাতে সিএবি-র অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ফের চাগাড় দিল বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
জোড়া ধাক্কার প্রথমটা বাংলাদেশ ইনিংসের মাঝে ‘ই’ ব্লকের টাওয়ারের আলো নিভে যাওয়া। দ্বিতীয়টি পিচ। যার জেরে ফাইনালের আগে কার্যত বেসামাল সিএবি কর্তারা।
ফ্লাডলাইট কেলেঙ্কারির নেপথ্যে উঠে আসছে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। অভিযোগ উঠছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পাল্টাতে গিয়ে তিনিই বিভ্রাট ঘটান।
সিএবিতে এই দুই কম্পনের ‘আফটার শক’ হল রাত এগারোটা পাঁচ মিনিটে। যখন ফ্লাডলাইটের টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে গেলেন, ‘‘একজন ওই টাওয়ারের ফ্লাডলাইটের সুইচ অফ করে দিয়েছিলেন। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। সিস্টেমে কোনও সমস্যা ছিল না।’’
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি গত শনিবার বৃষ্টিবিঘ্নিত পাকিস্তান ম্যাচ সাফল্যের সঙ্গে উতরে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিএবিতে অন্তর্ঘাতের ‘কালসাপ’ ঢুকে পড়ল? সৌরভ উত্তর না দিলেও তাঁর যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়া বলে যান, ‘‘এক ব্যক্তির সুইচ অফ করে দেওয়ার ফুটেজ পেয়েছি। তবে সেটা তিনি ইচ্ছাকৃত, না ভুল করে করেছেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’’ তবে সিএবি-রই একটা মহল থেকে অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আবার কারও কারও প্রশ্ন, সৌরভের সিএবি-তে এই গাফিলতি হবে কেন? বিষয়টি পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলা হবে কি না তা জানতে চাওয়া হলে সিএবি প্রেসিডেন্ট বা অভিষেক কেউই কোনও মন্তব্য করেননি।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন বিকেলে ইডেনে?
ঘড়ির কাটায় তখন পাঁচটা সাতচল্লিশ। বাংলাদেশ ইনিংসের ১১ ওভার শেষ হয়েছে। হঠাৎ নিভে যায়, ‘ই’ ব্লকের ফ্লাডলাইট। যার ফলে খেলা বন্ধ থাকে ১২ মিনিট। ইডেনে এই আলোবিভ্রাট নতুন নয়। এর আগে প্রসূন মুখোপাধ্যায় জমানায় প্রথম আইপিএলে ডেকান চার্জার্স-কেকেআর ম্যাচে ও ২০০৯-এর ডিসেম্বরে ভারত-শ্রীলঙ্কা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে আলো চলে গিয়েছিল ইডেনে।
সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনের বেলা ইডেনে সিইএসসি-র সংযোগ থাকলেও রাতে ফ্লাডলাইট জ্বললে পুরোটাই জেনারেটরে কাজ করে। বিদ্যুৎ সংযোগের এই পরিবর্তনটা হয় ফ্লাডলাইট জ্বলার এক ঘণ্টা আগে।
ঘটনার পর পরই সিএবি-র তরফে প্রথমে বলা হয়েছিল, ওই বাতিস্তম্ভের ব্যাক আপ জেনারেটর ফল্ট হওয়াতেই এই বিপত্তি। কিন্তু পরে যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে জানান, ম্যাচের বিরতিতে সিইএসসি-র সংযোগ থেকে জেনারেটরে বিদ্যুৎ সংযোগ পরিবর্তন করতে ভুলে গিয়েছিলেন ইডেনের ফ্লাডলাইট রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার এক কর্মী। পরে তিনি সংযোগ স্থানান্তর করতে গেলে এই বিপত্তি হয়। পরে নাকি সত্তরোর্ধ ওই কর্মীকে দিয়ে তাঁর ভুলের মুচলেকা লিখিয়ে নেন সিএবি কর্তারা। যদিও ওই ‘বৃদ্ধ কর্মী’-র নাম জানাননি তাঁরা।
পরে সুবীরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ফাইনালে প্রতিটি বাতিস্তম্ভে দু’জন করে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার রাখা হবে। ফাইনালে আশা করি আলোকবিভ্রাট হবে না।’’
ইডেনে এ দিন সমস্যার দ্বিতীয় নাম পিচ। টস জিতে এ দিন ব্যাটিং নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ম্যাচের প্রায় শুরু থেকেই বল পিচে পড়ে থমকে যাচ্ছিল। কিউয়িদের ইনিংস নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষ হয়ে যায় ১৪৫ রানে। জবাবে ১৫.৪ ওভারেই বাংলাদেশ অলআউট ৭০ রানে।
ম্যাচ শেষে দু’দলই দুষে যায় ইডেনের পিচকে। বাংলাদেশ কোচ হাতুরাসিংহে বলছিলেন, ‘‘উইকেট স্লো হয়ে গিয়েছিল। এই উইকেটে ১২০ রান হলে লড়া যেত।’’ আর নিউজিল্যান্ডের রস টেলরও বলে গেলেন, ‘‘বল থমকে আসছিল।’’
ইডেনের পিচ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সুজন মুখোপাধ্যায় যদিও বলছেন, ‘‘তিনটে উইকেটের মধ্যে দু’টোতেই ঘাস ছিল না। তাই এই অবস্থা। ফাইনালে অন্য উইকেট তৈরি হচ্ছে। সেখানে ঘাস রয়েছে।’’
এ দিন ম্যাচের একমাত্র প্রাপ্তি বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের ২২ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়া। যে প্রসঙ্গে কিউয়িরাও উচ্ছ্বসিত। রস টেলর বলেই যান, ‘‘এ বার সাসেক্সে ওর সঙ্গে খেলব। একই বোলিং অ্যাকশনে স্টকবল ও শক বল দু’টোই দিতে ওস্তাদ মুস্তাফিজুর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy