Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
সচিনের এসএমএসে উদ্বুদ্ধ, ছুঁলেন ক্রিকেট-ঈশ্বরকে

রঞ্জি অভিষেকেই সেঞ্চুরি মুম্বইয়ের বাঙালি পৃথ্বীর

বছর কয়েক আগে চার ফুটেরও কম এক বাঙালি বালকের ব্যাটিং বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সের নেটের বাইরে থেকে এক জোড়া স্পেশ্যাল চোখ নিরীক্ষণ করেছিল এক দিন।

সেঞ্চুরির হাসি পৃথ্বীর। ছবি: টুইটার।

সেঞ্চুরির হাসি পৃথ্বীর। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
Share: Save:

বছর কয়েক আগে চার ফুটেরও কম এক বাঙালি বালকের ব্যাটিং বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সের নেটের বাইরে থেকে এক জোড়া স্পেশ্যাল চোখ নিরীক্ষণ করেছিল এক দিন। বৃহস্পতিবার বালক থেকে মেরেকেটে কিশোর হয়ে ওঠা সেই ব্যাটসম্যান রাজকোটে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে রঞ্জি সেমিফাইনালের শেষ দিন ক্রিজে নামার বেশ কিছুক্ষণ আগে স্পেশ্যাল চোখ জোড়ার মালিকের থেকে ‘পেপ টক’ পান। যার পর ১৭ বছর ৫৭ দিন বয়সি ব্যাটসম্যান বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, তিনি আজ ব্যর্থ হতে পারেন না। কিছুতেই না! সে যতই তিনি এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাত্র চার করে থাকুন না কেন।

তিনি— পৃথ্বী সাউ ১২০ রান করে মুম্বইকে ছয় উইকেটে জিতিয়ে রঞ্জি ফাইনালেই শুধু তুললেন না, ছুঁলেন তাঁকে ‘পেপ টক’ দেওয়া কিংবদন্তির নজিরকেও। তিনি— ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর সচিন তেন্ডুলকর। সচিনের মতোই টিনএজার হিসেবে রঞ্জি অভিষেকেই সেঞ্চুরির কীর্তি রচিত হল মুম্বইয়ের নতুন ক্রিকেট প্রতিভা পৃথ্বীর ব্যাটে। আদতে যিনি প্রবাসি বাঙালি। এ দিন সকালে মুম্বই কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের মোবাইলে পাঠানো এক লম্বা এসএমএসে সচিন এই লিখে আগের দিন দু’রানে অপরাজিত পৃথ্বীকে উৎসাহ দেন যে, ‘পৃথ্বীর জন্য আমার সব শুভেচ্ছা রইল। এটা একটা বিরাট সুযোগ। ওকে বোলো সেঞ্চুরি করতে।’ মুম্বই কোচ সেই মেসেজ সকালে মাঠে নামার আগে ড্রেসিংরুমে পৃথ্বীকে দেখালে তিনি নাকি হেসে একটা শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন— নিশ্চয়ই!

টিনএজার পৃথ্বীর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই সেঞ্চুরির দাপটে মুম্বই ২৫১ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র চার উইকেট খুইয়ে টার্গেটে পৌঁছে যায়। খুদে ওপেনার পৃথ্বী সাড়ে চার ঘণ্টা ক্রিজে থেকে১৭৫ বল খেলে মারেন ১৩ বাউন্ডারি, একটা ছক্কা। ঈশ্বর সদা সাহসীদের সহায় হন, এই প্রবাদও পৃথ্বীর ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিতে ফের এক বার প্রমাণিত। ৯৯ রানের মাথায় তিনি থার্ড ম্যানে কট আউট হন। হতাশ পৃথ্বী প্যাভিলিয়ন মু‌খী হওয়ার উদ্যোগ নিলে আম্পায়ার নিজেই আটকান কিশোর প্রতিভাকে। নিয়ম মতো পরখ করে নিতে চান, বোলার বিজয় সুন্দর ওই ডেলিভারি ‘নো’ করেছিলেন কি না। এবং দেখা যায়, আম্পায়ারে আশঙ্কাই সঠিক। পরের বলেই পৃথ্বী একশোয় পৌঁছলে গোটা মুম্বই দলের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপক্ষ টিম এবং মাঠের গুটিকয়েক দর্শক তাঁকে যে ভাবে অভিনন্দিত করেন তার একটাই বর্ণনা হয়— ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন!

‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পৃথ্বী খেলার পর বিসিসিআই-এর ওয়েবসাইটে বলেন, ‘‘আমার কোচ (চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত) আর টিমের সিনিয়র প্লেয়াররা আমাকে যে ভাবে গাইড করেছেন তার জন্য ওঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কোচ আমাকে বলেছিলেন, আদিত্য তারে, অভিষেক নায়ারের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা কী ভাবে ম্যাচের জন্য নিজেদের তৈরি করে সেটা দেখো। সে ভাবে নিজেকে তৈরি রাখার চেষ্টা করো।’’

রঞ্জি সেমিফাইনালে মুম্বই দলে পৃথ্বীকে নেওয়ার জন্য দু’জনের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন নির্বাচক প্রধান মিলিন্দ রেগে। দিলীপ বেঙ্গসরকর এবং রাহুল দ্রাবিড়। দেখা যাচ্ছে, জহুরির চোখ ভুল করেনি।

৪১ বারের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন মুম্বইয়ের এটা ৪৬ নম্বর ফাইনাল। ইনদওরে ১০ জানুয়ারি থেকে সামনে গুজরাত। যারা অর্ধ শতাব্দীরও পরে রঞ্জি ফাইনাল খেলছে। আর কী আশ্চর্য! আঠাশ বছর আগে গুজরাতের বিরুদ্ধেই তাঁর রঞ্জি অভিষেকে ১০০ নট আউট ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। পৃথ্বীর কাছে রঞ্জি ফাইনালের ‘পেপ টক’ এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prithvi Shaw Sachin Ranji Trophy Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE