Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দিল্লির ভরসা বাংলার তাপস

শনিবার তাপসের দল দিল্লির ম্যাচ ছিল অভিষেক বচ্চনের দল জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্সের বিরুদ্ধে। তার আগে দুপুরবেলা টিম হোটেলের লবিতে বসে তাঁর উত্থানের যে গল্প শোনালেন চন্দননগরের ছেলে তা শুনে নড়েচড়ে বসতে হল।

প্রো কবাডি লিগে জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্স বনাম দবঙ্গ দিল্লি ম্যাচ। শনিবার হায়দরাবাদে। ছবি: এপি

প্রো কবাডি লিগে জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্স বনাম দবঙ্গ দিল্লি ম্যাচ। শনিবার হায়দরাবাদে। ছবি: এপি

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

নির্মেদ চেহারা। সঙ্গে চোয়াল চাপা জেদ। পরিচয় জানতে চাইলে ১৯ বছরের বঙ্গসন্তান বলে দেন, ‘‘আমি চন্দননগরের তাপস পাল।’’ একটু থেমে তার পরেই হো হো করে হাসতে থাকেন হুগলি জেলার এই টিনএজার।

কে এই তাপস পাল? ইনি অভিনেতা বা রাজনৈতিক নেতা নন। এ বারের প্রো-কবাডি লিগে সুযোগ পাওয়া তৃতীয় বঙ্গসন্তান। প্রথম জন রাজেশ মণ্ডল। যিনি গত কয়েক বছর ধরেই খেলছেন এই লিগে। এ বার তিনি রয়েছেন পুণেরি পল্টন-এ। দ্বিতীয় জন অমরেশ মণ্ডল যিনি প্রতিভার জোরে এ বারই ট্রায়াল দিয়ে ঢুকেছেন বাংলার দল ‘বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স-এ। প্রতিযোগিতার তৃতীয় মুখ হলেন এই তাপস পাল। অমরেশের মতো প্রতিভার জোরেই এ বারের প্রো দাবাঙ্গ দিল্লির বিশ্বস্ত ‘রাইট কর্নার’ হয়ে উঠেছেন আবির্ভাবেই।

শনিবার তাপসের দল দিল্লির ম্যাচ ছিল অভিষেক বচ্চনের দল জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্সের বিরুদ্ধে। তার আগে দুপুরবেলা টিম হোটেলের লবিতে বসে তাঁর উত্থানের যে গল্প শোনালেন চন্দননগরের ছেলে তা শুনে নড়েচড়ে বসতে হল।

চন্দননগরের বকুবপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা তাপসের। গ্রামের ক্লাবেই কবাডিতে হাতেখড়ি। বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের সংসার। সংসারে চরম অনটন। তাপসের কথায়, ‘‘পুণেরি পল্টনের রাজেশ মণ্ডল আমাদের চন্দননগরের ছেলে। প্রো-কবাডি লিগে দু’বছর ওর ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সে দিনই বুঝে যাই ঘরের অভাব-অনটন সরিয়ে খেলা চালিয়ে গেলে এক দিন কিছুটা হলেও পরিবারে স্বাচ্ছ্যন্দ আসবে। সেটা এখন কিছুটা হলেও ফিরেছে পরিবারে।’’

পরিবারে সম্পদ বলতে কিছু জমি। সেখানে দুই ভাই চাষবাস করেই এত দিন সংসার চালাতেন। সে কথা বলতে গিয়ে তাপসের গলা আবেগে ধরে আসে। দাবাঙ্গ দিল্লির অলরাউন্ডার বলে চলেন, ‘‘ছয় বছর বয়স যখন বাবা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ড ও পায়ে বড় চোট পেয়েছিলেন তখন ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। এখনও তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। পরিবার চালানোই কষ্ট হত। কিন্তু দাবাঙ্গ দিল্লিতে সুযোগ পাওয়ায় তিন মাসে ছয় লক্ষ টাকা পাচ্ছি। এতে সংসারের হাল কিছুটা হলেও তো ফিরেছে।’’

আলো ঝলমলে এই পেশাদার কবাডি লিগে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রথমে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। সেখানে প্রশংসিত হয়েছিল তাপসের রক্ষণাত্মক খেলা। এর পর গুজরাত ও মুম্বইয়ে শিবিরের পর তাঁকে বেছে নেন দাবাঙ্গ দিল্লির সংগঠকরা।

তাপস বলছেন, ‘‘যে দিন দাবাঙ্গ দিল্লি দলে সুযোগ পেলাম, সে দিন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমিও রাজেশদার মতোই প্রো-কবাডি লিগে খেলব, ভাবতেই পারছিলাম না। প্রথম ম্যাচে নামার আগে আজ সকালেই রাজেশদার টিপস নিয়েছি। আমাকে বড় খেলোয়াড় হতেই হবে। খেলতে হবে ভারতীয় দলেও।’’ ম্যাচেও এ দিন জিতল তাপসের দল দাবাঙ্গ দিল্লি। ৩০-২৬ পয়েন্টে তাঁরা হারাল অভিষেক বচ্চনের টিম জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্সকে। টিমের জয় দেখতে এ দিন সাত সকালেই হায়দরাবাদে স্বপারিষদ অভিষেক। টিমের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং ও করলেন। কিন্তু তাতেও প্রথম ম্যাচে জয় এল না। শেষ পর্যন্ত হাসি রইল তাপসের দিল্লি টিমের মুখেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pro Kabaddi Dabang Delhi Tapas Pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE