রাহুল দ্রাবিড়। ফাইল ছবি
ভারতীয় ক্রিকেটে কোচেদের দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক, একাধিক বিষয়ে মাথা ঘামাতে হয়। কোচেরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে এই কাজগুলি করতে পারেন, তার জন্য জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচিং ম্যানুয়ালের খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে। পুরো কাজটাই হয়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের তত্ত্বাবধানে।
কোচিং মডিউলে পরিবর্তন এনে তা আধুনিক কোচেদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই মডিউলে ‘কর্পোরেট প্রবলেম সলভিং ক্লাস’ নামে নতুন একটি বিষয় চালু করা হয়েছে, যেখানে মাঠের বাইরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে ভবিষ্যতের কোচেদের। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পেসার ক্ষেমল ওয়াইনগঙ্করের মাথা থেকে বেরিয়েছে এই কোর্স। ক্ষেমল এখন কর্পোরেট জগতে চাকরি করেন। কিন্তু ক্রিকেটকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন তিনি।
গোটা ব্যাপারটা দ্রাবিড়ের মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও জানা গিয়েছে, তিনি কোনওদিন নিজে ক্লাস নেন না। বরং তিনি বাকিদের সঙ্গে ক্লাসে যোগ দেন। যখন কোনও ক্রিকেটার বা অন্য কোনও বিষয়ের সমাধান খুঁজতে বলা হয়, তখন দ্রাবিড় যোগ দিয়ে সেই কাজে সাহায্য করেন। সেই সাহায্যেই সেখানকার শিক্ষার্থীদের ভাবনাচিন্তা বদলে দেয়।
এই ক্লাসের অভিনবত্ব কী?
কোচিং কোর্সের সঙ্গে যুক্ত থাকা একজন বলেছেন, “সবার আগে দরকষাকষি এবং আলাপ-আলোচনার পার্থক্য শেখানো হয় আমাদের। বলা হয়, সমস্যার সমাধান না করলেও চলবে। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে তা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, “ধরুন কোর্সের নির্দেশক ক্ষেমল আমাদের মধ্যে থেকে দু’জনকে বেছে নিল। এদের মধ্যে একজন কোচ এবং আর একজন নির্বাচকের ভূমিকা পালন করবে। দু’জনকেই ওয়ার্কশিট দেওয়া হল। এ বার যে নির্বাচক হয়েছে তার কাজ দলে তিনজন ক্রিকেটারকে ঢোকানো। কারণ তার উপর একাধিক রাজ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে। অন্য দিকে কোচকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলে দু’জন ক্রিকেটারকে নিতে, যার মধ্যে একজন জায়গা পাবে প্রথম একাদশে।”
এখানেই রয়েছে আলাপ-আলোচনায় জায়গা। দু’জনকেই নিজেদের দাবি একে অপরকে বোঝাতে হবে এবং সমাধানসূত্র বের করতে হবে। কোচের দিকে নজর রেখে দেখতে হবে তিনি কার সাহায্য নিচ্ছেন? সহকারী কোচ, দলের অধিনায়ক নাকি তথ্য সংবলিত পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টের? নির্বাচকের ক্ষেত্রে দেখা হবে তিনি কী ভাবে কোচকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। রাজ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গেই বা কী ভাবে যোগাযোগ রাখছেন।
এরপর লেভেল ২ কোচেদের নিজের শহরে ফিরে গিয়ে কোনও একজন ক্রিকেটারকে বেছে নিয়ে তাঁর সঙ্গে আগামী তিন মাস কাটাতে হবে। ওই ক্রিকেটারের বোলিং বা ব্যাটিং বা দুটোরই ভিডিয়োর বিশ্লেষণ করে একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করতে হবে এবং ঠিক কী বিষয়ে ওই কোচেরা আলাদা করে নজর রাখছেন তা জানাতে হবে।
দ্রাবিড়ের উপদেশ কী থাকে? কোচিং কোর্সের সঙ্গে যুক্ত থাকা ওই ব্যক্তি বলেছেন, “দ্রাবিড় আমাদের বলেছেন কোচ হিসেবে কখনও শুধু ভুল খোঁজার পিছনে না দৌড়তে। একজন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে তাঁর ভাল দিকগুলি খুঁজে বের করে সেগুলি উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন উনি। এখনকার কোর্সে ক্রিকেটারদের কথা অনেক বেশি ভাবা হয়।”
বাংলার অরিন্দম দাস, সৌরাশিস লাহিড়ি, রণদেব বসু-সহ অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারই এই কোর্সে অংশ নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy