Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নাটকীয় ইস্তফায় সিএবি-তে ডামাডোল বাধালেন রাজু

বাংলা রঞ্জি অভিযান যখন মাঝপথে, টুর্নামেন্টে যখন মোটামুটি ভদ্রস্থ দেখাচ্ছে মনোজ তিওয়ারির টিমকে, ঠিক তখন বাংলার নির্বাচক কমিটি নিয়ে তীব্র ডামাডোলে পড়ে গেল সিএবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৪
Share: Save:

বাংলা রঞ্জি অভিযান যখন মাঝপথে, টুর্নামেন্টে যখন মোটামুটি ভদ্রস্থ দেখাচ্ছে মনোজ তিওয়ারির টিমকে, ঠিক তখন বাংলার নির্বাচক কমিটি নিয়ে তীব্র ডামাডোলে পড়ে গেল সিএবি।

বিদর্ভ ম্যাচের ঠিক পাঁচ দিন আগে বাংলার নির্বাচক প্রধান সিএবিতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন, তিনি সরে যাচ্ছেন। বলে দিলেন, টিম ভাল খেলছে। কর্নাটক, দিল্লি, হরিয়ানার বিরুদ্ধে পয়েন্ট তুলছে। যারা রঞ্জি অভিষেক করেছে, তারাও ভাল করছে। অতএব— তিনি এখন বিশ্রামে যেতে চান! অভূতপূর্ব যে ঘটনার পর প্রবল বিভ্রান্তি শুরু হয়ে গিয়েছে সিএবিতে। অনেকে বুঝতে পারছেন না, এমন পরিস্থিতিতে বিদর্ভ ম্যাচের দল নির্বাচনী বৈঠকের কী হবে? সেটা তো আর দু’দিন বাদে, বুধবার। প্রধান নির্বাচক ছাড়াই কি তা হলে দল নির্বাচন করে ফেলা হবে?

সোমবার সিএবিতে বাংলার অনূর্ধ্ব-তেইশ দল নির্বাচনী বৈঠক ছিল। প্রধান নির্বাচকের সেখানে আসার কথাও ছিল। সিএবি-র কেউ কেউ বললেন যে, গাড়ি পাঠানো হবে কি না জানতে চাওয়া হলে রাজু নাকি তা ফিরিয়ে দেন। বলে দেন, আসছেন না। কিন্তু তখনও জানা যায়নি যে, নির্বাচক প্রধান পদত্যাগই করে ফেলেছেন। নির্বাচক হিসেবে নিজের টার্ম শেষ করার আগে।

সন্ধেয় বাংলার প্রধান নির্বাচককে ফোন করা হলে তিনি বললেন যে, কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অসূয়া নেই। ‘‘আমি মনে করি, ভাল সময় থাকতে থাকতেই সরে যাওয়া ভাল। আর টিম তো ভাল খেলছে, তাই না? যাদের আমরা নির্বাচন করেছি, নতুন যাদের এনেছি, প্রত্যেকে সফল,’’ বলছিলেন রাজু। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সিএবির বিরুদ্ধে ক্ষোভে তাঁর এমন আচমকা সিদ্ধান্ত কি না? শুনে নির্বাচক প্রধান বলে দেন, ‘‘একদম না। কোনও ব্যাপার নিয়েই আমার ক্ষোভ নেই।’’ নির্বাচক প্রধান বললেন না বললেও এটা সত্যি যে, ক্ষোভ আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠহল যা বলছে। বহু দিন ধরে পুঞ্জীভূত হয়ে সোমবার তা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

যেমন, দল নির্বাচনী বৈঠকে অনেক সময় নাকি নতুন ক্রিকেটার আমদানি নিয়ে পরোক্ষ ভাবে কথা শোনানো হয়েছে। যেমন, শ্রীলঙ্কায় যে ভাবে অন্য এক নির্বাচককে টিমের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা নাকি পছন্দ হয়নি প্রধান নির্বাচকের। তিনি নাকি ব্যাপারটা জানতেনই না। নির্বাচক কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সঙ্গে তাঁর ঠোকাঠুকি প্রথম দিন থেকে ছিল। আবার সিএবি তাঁকে গাড়ি পাঠানোর প্রতিশ্রতি দিলেও সেটা রাখেনি বলে নাকি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। শেষ ব্যাপারটা হল, বাংলা টিমে ‘অজ্ঞাতকুলশীল’ সায়ন মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি। অনূর্ধ্ব তেইশ না খেললেও যাঁকে তিনি এনেছিলেন।

যে সমস্ত অভিযোগ শোনামাত্র ওড়াচ্ছে সিএবি-র একাংশ। এদের মত, রাজু নিজেই ইস্তফা দেওয়ায় শাপে বর হল। নির্বাচক প্রধান সাম্প্রতিকে সিএবি-বিরোধী নানা মন্তব্য করেছেন, যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। তা ছাড়া মাঠেও সে ভাবে যেতেন না। প্রশ্ন উঠছে, এ সব কেন হবে? কেন কয়েকটা কাগজ ভরসা করে তিনি দিনের পর দিন নির্বাচনী বৈঠক চেয়ার করে যাবেন? আর গাড়ি পাঠালেই যে তিনি আসেন, এমন তো নয়। বিদর্ভ ম্যাচের দল নির্বাচনী বৈঠক নিয়েও এঁরা কেউ টেনশনে নেই। বলা হল, অতীতে নির্বাচনী বৈঠক রাজু ছাড়া হয়েছে। বলা সত্বেও তিনি আসেননি। এ বার তা হলে অসুবিধে কোথায়?

কিন্তু বিসদৃশ ব্যাপারটা হল, বাংলার বর্তমান নির্বাচক কমিটিতে দু’জন এমনিই ছিলেন যাঁদের টার্ম ইতিমধ্যে শেষ। রঞ্জি মরসুম মাঝপথে পড়ে গেলেও নানা কারণে নতুন নির্বাচক কমিটি করা যায়নি। এ বার রাজুও নেই। চার জনের কমিটিতে পড়ে মাত্র এক, যিনি সরকারি ভাবে নির্বাচক। তা হলে? কেউ কেউ বললেন, এমন অভূতপূর্ব অবস্থায় অন্তর্বর্তিকালীন নির্বাচক কমিটি করা যেতে পারে যারা রঞ্জি শেষ হওয়ার পর্যন্ত চালিয়ে দিলেন। দীপ দাশগুপ্ত থেকে শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়— নানা নামও উড়ছে। কেউ কেউ বললেন, আগামী দু’-তিন দিনে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর সিএবি প্রেসিডেন্ট? তিনি কী ভাবছেন?

রাতে ফোনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমি কাল রাজুদার সঙ্গে কথা বলব। দেখব, উনি ফিরতে চান কি না। যদি একান্ত না হয়, তা হলে দেখতে হবে। সে রকম হলে কালই নতুন নির্বাচক কমিটি করে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Mukherjee resignation cab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE