Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪
আনন্দবাজারের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতীয় ক্রিকেটের গ্রেটদের প্রসঙ্গে রবি শাস্ত্রী

কিংবদন্তিদের তালিকায় সেরা পাঁচে কোহালি, ধোনি

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ উপলক্ষে কটকে এসে আনন্দবাজার-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘কোহালি ইতিমধ্যেই গ্রেটদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

মুগ্ধ: কোহালি ও ধোনি যে ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে অভিভূত রবি শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র

মুগ্ধ: কোহালি ও ধোনি যে ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে অভিভূত রবি শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
কটক শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৪
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন এই প্রজন্মের দুই মহাতারকা। তাঁদের নাম? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহালি। যাঁর এমন মন্তব্যে নতুন ঝড় উঠতে বাধ্য, তিনি— ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ উপলক্ষে কটকে এসে আনন্দবাজার-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘কোহালি ইতিমধ্যেই গ্রেটদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আরও অনেক দূর যাবে। অন্তত আরও সাত-আট বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো খেলবেই।’’ এর পরেই যোগ করেন, ‘‘আমার মতে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা কিংবদন্তির তালিকায় আর এক জন অবশ্যই ঢুকে পড়েছে। ভুবনেশ্বরের খুব কাছেই তার বাড়ি— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।’’

ভারতীয় দলের হেড কোচের মতে, সর্বকালের সেরা পাঁচ ভারতীয় ক্রিকেটার বাছতে বসলে তিনটি নাম চিরন্তন ভাবেই লেখা হয়ে গিয়েছে। সুনীল গাওস্কর, কপিল দেব এবং সচিন তেন্ডুলকর। তাঁদের আগে বা পরের প্রজন্মে অনেক বিখ্যাত এবং বিশেষ দক্ষতার ক্রিকেটার এসেছেন। কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে সকলকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের দুই ‘মহাবলী’ ধোনি এবং কোহালি।

এবং, কোহালিদের হেড স্যার নিশ্চয়ই জানবেন। এই পাঁচ ক্রিকেটারকেই খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে যে তাঁর! ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েলিংটনে যখন রাতারাতি উড়ে গিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটাচ্ছেন শাস্ত্রী, ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল গাওস্কর। ১৯৮৫-তে মেলবোর্নে পাকিস্তানকে হারিয়ে সেই ঐতিহাসিক বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জয় এবং ভারতীয় ক্রিকেটে আলোড়ন ফেলে দিয়ে আউডি জেতা। তখনও অধিনায়ক গাওস্কর। আবার তার দু’বছর আগে কপিলের নেতৃত্বে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্যও ছিলেন। সচিনের সঙ্গে খেলেছেন, কমেন্ট্রি বক্স থেকে তাঁর ব্যাটিং বিশ্লেষণ করেছেন বহু দিন ধরে। আর কোচ হিসেবে ধোনি এবং কোহালি দুই অধিনায়ককেই সামলেছেন তিনি।

তাঁর সঙ্গে কোহালির সুসম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে চর্চা অব্যাহত। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘হ্যাপি ক্যাপ্টেন-কোচ কাপ্‌ল’ আখ্যা পেতে পারেন তাঁরা। এই সম্পর্কের রহস্য কী? শাস্ত্রী এক কথায় জবাব দিয়ে দিচ্ছেন। ‘‘বিশ্বাস এবং সততা।’’ তার পরে যোগ করছেন, ‘‘আমরা দু’জনেই যা বলি, সামনে বলি। বিশ্বাসের মোড়কে এই দলকে তৈরি করার মন্ত্রে বিশ্বাসী দু’জনেই। তার সুপ্রভাব টিমের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে।’’

আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি হোক প্রতিভা অন্বেষণের মঞ্চ, চায় ভারত

এক নিঃশ্বাসে শাস্ত্রী এ-ও বলে দিচ্ছেন যে, ভারতীয় দলে কোহালি-ই বস্‌। কোচের কাজ সহায়তা করার। ‘‘অধিনায়কই বস্‌। আমাদের কাজ সমস্ত রকম পরিবেশ এবং পরিস্থিতির জন্য অধিনায়ক এবং টিমকে তৈরি করা। কোচ নানা রকম পরামর্শ বা বিকল্পের কথা তুলে ধরতে পারে কিন্তু টিমকে পরিচালনা করতে হবে অধিনায়ককেই।’’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যোগ করছেন, ‘‘কঠিন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে অধিনায়ককে সেই সাহস দেখাতে হয়। সেই কারণেই আমি বলি, অধিনায়কই বস্‌।’’

সেরার সেরা

এখানেই শেষ নয়। শাস্ত্রী মনে করছেন, ভবিষ্যতে কোনও এক দিন ক্রিকেট গবেষণাবিদকে লিখতে হতে পারে যে, বিরাট কোহালি ক্রিকেট খেলাটাকেই পাল্টে দিয়েছিলেন। ‘‘বিরাটকে সব সময়ই ক্ষুধার্ত দেখি। আজ যে সাফল্য পেল, সেটা ওর কাছে দ্রুত অতীত হয়ে যাবে। সেটাকে খুব তাড়াতাড়ি সিস্টেম থেকে বের করে দেবে। কাল আবার নতুন দিন, নতুন করে স্টান্স নাও। বিরাটের এই কর্মপদ্ধতিটা নতুন টেমপ্লেট হয়ে থেকে যাবে পেশাদার ক্রিকেটে। এরকম দুর্ধর্ষ, আপসহীন মনোভাব আমি আর কখনও দেখিনি।’’ বলছেন এমন একজন, যিনি খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার এবং কোচের জীবন মিলিয়ে তিরিশ বছরের উপর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত রয়েছেন।

কোহালি যে কিংবদন্তিদের তাড়া করতে শুরু করেছেন, সেটা হালফিলের ক্রিকেট পরিসংখ্যানও বলবে। অনেক কম সংখ্যক ম্যাচ খেলে তিনি ভিভিয়ান রিচার্ডস, সচিন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিংদের রেকর্ড দুমড়ে দিতে শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির তালিকায় ইতিমধ্যেই কোহালি উঠে এসেছেন অষ্টম স্থানে। পেরিয়ে গিয়েছেন ভারতের অন্যান্য সব কিংবদন্তিদের। একটা উদাহরণই যথেষ্ট। সচিন তেন্ডুলকরের পরে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর ছিল সব ফর্ম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে ৫০৯ ম্যাচে ৪৮ সেঞ্চুরি। আর কোহালির সেখানে অনেক কম সংখ্যক ম্যাচে (৩২০) ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ৫২ সেঞ্চুরি। ভারতীয়দের মধ্যে আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির সংখ্যায় এখন সচিনের পরেই তিনি। টেস্ট, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি— সমস্ত ধরনের ক্রিকেটে কোহালির পঞ্চাশের উপর গড় রেখে এগিয়ে চলাটাও অবিশ্বাস্য!

আর ধোনি? যেখানে কথাই আছে ধোনি ততটা সফল টেস্ট ক্রিকেটার নন, তাঁকে সর্বসেরাদের তালিকায় স্থান দিচ্ছেন কেন? শাস্ত্রীয় ভঙ্গিতে এল জবাব, ‘‘শুনুন ভাই, একটা ছেলে বিশ্বকাপ ফাইনালে বুক চিতিয়ে কোচকে বলছে, আমি আগে ব্যাট করতে যাব। আর কখন? না, তাঁর দল সেই সময়ে সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকছে। ঘরের মাঠে সীমাহীন চাপের মধ্যে সেই ছেলে ফাইনালে ব্যাট ঘোরাতে ঘোরাতে নামছে আর কী বেপরোয়া ভঙ্গিতে ছক্কা মেরে বিশ্বকাপ এনে দিচ্ছে! ক্রিকেট কোথায়, এ তো চলমান রূপকথা!’’

এখানেই না থেমে শাস্ত্রী বলে চলেন, ‘‘২০১১ বিশ্বকাপ জয় ভারতীয় ক্রিকেটকে মহাশক্তিতে পরিণত করেছে। এর পর ভারতীয় ক্রিকেটের বাণিজ্যিক বাজারেও কী রকম অভূতপূর্ব জোয়ার এসেছে, সেটাও দেখুন। সেটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।’’ অধিনায়ক ধোনির কামাল তুলে ধরে শাস্ত্রী যোগ করেন, ‘‘এরকম জয়ের রেকর্ড কোনও অধিনায়কের নেই। বিশ্বকাপ জিতেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা ছাড়াও ফাইনাল, সেমিফাইনালে খেলেছে।’’ ধোনির টেস্ট রেকর্ড নিয়ে তর্ক ওঠার আগেই থামিয়ে দিচ্ছেন শাস্ত্রী। ‘‘ভারতীয় দল টেস্টে এক নম্বর হয়েছিল ধোনির অধিনায়কত্বেই। সেটাও বাদ দিন। শুনুন, বিশ্বকাপ হল বিশ্বকাপ। তার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না! ক্রিকেটে বিগেস্ট শো অন আর্থ মানা হয় বিশ্বকাপকেই।’’

গাওস্কর, কপিল, সচিন, ধোনি, কোহালি। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা পঞ্চক? তর্কটা তুলে দিলেন এমন একজন যিনি আশ্চর্যজনক ভাবে পাঁচ জনের সঙ্গেই ভারতীয় ড্রেসিংরুমে সময় কাটিয়েছেন। হয় সতীর্থ ক্রিকেটার হিসেবে নয়তো কোচের ভূমিকায়!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE