Advertisement
E-Paper

মোহালি থেকে কল্যাণী, শাস্ত্রী থেকে সৌরভ, একই দর্শন

তিন দিনে টেস্ট জেতার পর মোহালির প্রেস কনফারেন্স রুমে বিরাট কোহলির পাশে বসে রবীন্দ্র জাডেজা সগর্বে বলেছিলেন, ‘‘এ আর কী উইকেট দেখলেন, রাজকোটে এর থেকেও খারাপ উইকেটে বল করেছি।’’

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৮
নায়ককে অভিনন্দন। গনিকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত মনোজরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

নায়ককে অভিনন্দন। গনিকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত মনোজরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

তিন দিনে টেস্ট জেতার পর মোহালির প্রেস কনফারেন্স রুমে বিরাট কোহলির পাশে বসে রবীন্দ্র জাডেজা সগর্বে বলেছিলেন, ‘‘এ আর কী উইকেট দেখলেন, রাজকোটে এর থেকেও খারাপ উইকেটে বল করেছি।’’

সোমবার একই দিনে কুড়িটা উইকেট পড়ার পর কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি মাঠে দু’বার ওপেন করতে নামা বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরন সাফ বলে দিলেন, ‘‘এর চেয়ে খারাপ আর কী হবে বলুন এই উইকেটের?’’

এর পর আর সন্দেহ থাকছে না যে, মোহালি থেকে কল্যাণী, রবি শাস্ত্রী থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— ভারতের ক্রিকেট দর্শন একই। ঘরের মাঠে ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দাও।

বাংলার ১৪২-এর জবাবে ওড়িশা ১০৭। বাংলা ফের ২৩-০। কল্যাণীর স্কোরবোর্ড দিনের শেষে এই কথা বললেও সারা দিনের নাটকটা কিন্তু এতে ফুটে ওঠেনি।

সাত সকালে যেটা হল, তাকে বাংলার ব্যাটিং বিপর্যয় ছাড়া আর কী বলবেন? আট ওভারের মধ্যে বাংলার ২১-৩ হয়ে যাওয়াটা কিন্তু স্পিন অস্ত্রের কামাল নয়। বরং উইকেটের ভয়াবহ অসমান ও অনিয়মিত বাউন্সের জের। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, মনোজ তিওয়ারি, সায়নশেখরের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানরাও বলের গতিবিধি বুঝতে পারলেন না! তিনজনের আউটই যেন একে অন্যের অ্যাকশন রিপ্লে। ওড়িয়া পেসার সূর্যকান্ত প্রধানের শর্ট পিচ বল এমন থমকে ব্যাটসম্যানদের কাছে এল যে, কী শট খেলবেন বুঝতেই পারলেন না তাঁরা। বল ব্যাটে-গ্লাভসে ধাক্কা খেয়ে ফরোয়ার্ড শট লেগে প্রতীক দাসের হাতে জমা পড়ে গেল।

এই বেহাল ব্যাটিং-দশা দেখে ক্রিকেট মহলে অনেকে মনে করছেন, এই দলে লক্ষ্মীরতন শুক্ল নামক এক ব্যক্তি থাকলে তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে হয়তো এই অবস্থা সামাল দিতে পারতেন। যেমন সামলেছিলেন ২০০২-এর নভেম্বরে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে শিলিগুড়িতে একই রকম উইকেটে অপরাজিত ৪১-এর ইনিংস খেলে।

বিকেলে অনুরাগ ঠাকুরের রাজ্য হিমাচলের ম্যাচ রেফারি শক্তি সিংহকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, এমন প্রায় আন্ডার-প্রিপেয়ার্ড উইকেটে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ হওয়া সম্ভব কি না, তখন তিনি রাজকোটের উদাহরণ দিয়েই বললেন, ‘‘কেন হবে না? হয়েছে তো। এখানকার উইকেট নিয়ে বোর্ডকে যা রিপোর্ট দেওয়ার দেব।’’ হায়দরাবাদ ও ঝাড়খন্ডের বিরুদ্ধে জাডেজাদের (সৌরাষ্ট্র) দুই ম্যাচেই তো প্রথম দিন কুড়ি উইকেট পড়েছিল। কিন্তু এর পরেও রাজকোট যখন পার পেয়ে গিয়েছে, তখন বাংলারই বা দোষ কোথায়? গত মরসুমে আমদাবাদের মোতেরায় গুজরাত-হরিয়ানা ম্যাচে প্রথম দিনও তো ২৬ উইকেট পড়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সুতরাং ভারতীয় ক্রিকেটে এ আর এমন কী?

যতই হোক হোম অ্যাডভান্টেজ বলে কথা। এ দিন কল্যাণীর মাঠে হাজির সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা অল আউট হওয়ার পর তো বলেই দিলেন, ‘‘ছ’পয়েন্ট তো পেতে হবে। এ রকম উইকেট ঠিকই আছে।’’ অথচ এই সৌরভই গত মরসুমে ঘরের মাঠে গ্রিনটপে খেলার ফতোয়া জারি করেছিলেন! সে দর্শন এখন উধাও। টিম ইন্ডিয়ার মতো বাংলাও এখন স্পিন-মন্ত্রেই মালা জপছে।

সিএবি প্রেসিডেন্টের এক ঘনিষ্ঠ কর্তার মন্তব্য, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেট যখন একই দর্শনে চলছে, তখন আমরাই বা কেন প্রজ্ঞান ওঝাকে নিয়ে আসার ফায়দা তুলব না?’’ তাই বোধহয় এ দিন বিকেলে কল্যাণী ছাড়ার সময় সৌরভের মুখে সেই পরিচিত স্বস্তির হাসিটা লেগে ছিল।

সকালে যখন মাঠে ঢোকেন, তখন বাংলার স্কোরবোর্ড দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বটে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। ৯৪-৮। তবে বুঝেও নেন, তাঁর দলের ব্যাটিংয়েরও যা হাল হয়েছে, প্রজ্ঞান-গনি ও নবাগত অনুরাগ তিওয়ারিরাও বিপক্ষের একই হাল করে ছাড়বেন। হলও তাই। আমির গনি-র ছ’উইকেট ও প্রজ্ঞান-অনুরাগরা দু’টি করে উইকেট পেলেন। আকাশে ওঠা দু’টো ক্যাচ না পড়লে হয়তো একশোর মধ্যেই গুটিয়ে যেত ওড়িশা।

তবে ওপেনার ঈশ্বরন যে ভাবে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রায় সওয়া তিন ঘণ্টা ব্যাট করে গেলেন, তাতে তাঁর জাতটা বুঝে নেওয়া গেল। বিকেলে বললেন, ‘‘এই ধরণের উইকেটে বল শেষ পর্যন্ত দেখে খেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেটাই করে গেলাম।’’ মাঠে উপস্থিত নির্বাচকদের প্রধান সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘সেঞ্চুরি না পেলেও এই উইকেটে এটাই দুশো’র সমান।’’ অভিমন্যুও এই ইনিংসটাকে তাঁর অন্যতম সেরা ইনিংস মানছেন। শ্রীবৎস, পঙ্কজ, চাণ্ডিলা, গনিরা যে রোগে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে এলেন, সেই তাড়াহুড়োর ভাইরাস একবারই আক্রমণ করে ঈশ্বরনকে, আর তাতেই তিনি সেঞ্চুরির সামনে এসেও স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান।

এখন বাংলার লক্ষ্য বিপক্ষের উপর দু’শোর বোঝা চাপিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে পাঠানো। মনোজরা নিশ্চিত চতুর্থ ইনিংসে দু’শো এই বাইশ গজে পাহাড় প্রমাণ। গনিও বলছেন, ‘‘দেড়শো তুললেই আমরা এগিয়ে থাকব। দুশোয় জয় নিশ্চিত।’’ ওড়িশা অধিনায়ক নটরাজ বেহরাও কার্যত তা স্বীকার করছেন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেই হয়তো যবনিকা নেমে যাবে এই ম্যাচের।

দিনের শেষে সেরা জোকটা এক সিএবি কর্তার। ‘‘বিরাট কোহলি কাল ফোন করে নাগপুর টেস্টটা কল্যাণীতে সরাতে বললে অবাক হব না।’’

বাংলা: ১৪২ (অভিমন্যু ৮৮) ও ২৩-০। ওড়িশা ১০৭ (গনি ৬-৩৪, প্রজ্ঞান ২-২৫)।

ravi shastri sourav ganguly winning strategies rajib ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy