মাত্র সাড়ে চার মাস আগের কথা। ২৭ নভেম্বর, ২০১৪।
জ্যাসন জিলেসপিকে টিভিতে বলতে শোনা গেল, ‘‘ছেলেটা তো ভেঙে পড়েছে। অনুশোচনায় রীতিমতো কাঁপছে।’’
মার্ক টেলর বলে দিয়েছিলেন, ‘‘এই যন্ত্রণাটা ওকে বহুকাল ধরে কুরে কুরে খাবে। আশা করি ও নিজেকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে পারবে। তবে সময় লাগবে।’’
ওয়াকার ইউনিস তো প্রশ্নই তুলে দিয়েছিলেন, ‘‘জীবনে আর কখনও মাঠে নামতে পারবে তো ছেলেটা?’’
তাঁর মারণ বাউন্সারে ফিল হিউজের প্রাণ যাওয়ার বারো দিন পরই মাঠে ফিরে এসেছিলেন শন অ্যাবট। প্রথম ওভারে চারটে ডট বলের পর কুইন্সল্যান্ড ব্যাটসম্যান জো বার্নসকে দিয়েছিলেন সে রকমই এক বাউন্সার। সেই প্রত্যাবর্তন ম্যাচে অ্যাবটের বিশ্লেষণ ছিল ৬-১৪।
মন থেকে হিউজ-স্মৃতি মুছে দিয়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনার সেই যুদ্ধ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন শন। যা চলবে আইপিএলেও, বৃহস্পতিবার ইডেনে এসে জানিয়ে দিলেন ষোলো বছর বয়স থেকে তাঁকে দেখে আসা অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং কোচ ট্রেন্ট উডহিল।
বৃহস্পতিবার সান্ধ্য ইডেনে সেই যুদ্ধ ফের শুরু হল নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে আসা ২৩ বছরের অজি অলরাউন্ডারের। সঙ্গে তাঁর ট্রেডমার্ক বাউন্সার। ইডেনের নেটে দলের অনেকেই বল করলেও বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের নজর কিন্তু তাঁর দিকেই। অ্যাডাম মিলনে সম্ভবত আইপিএলের বাইরে। মিচেল স্টার্কের দলে যোগ দিতে এখনও দেরি। তাই হয়তো শন অ্যাবটকে দিয়েই শুরু করতে হবে তাঁকে। আরসিবি-র ওয়েবসাইটে ডোনাল্ড নিজেই এ দিন জানালেন সে কথা। তাই এ দিন নেটে শনের সঙ্গে দীর্ঘ সেশন করলেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি। বাইরে থেকে দেখে মনে হল বলের গ্রিপও বুঝিয়ে দিলেন। সেই গ্রিপেই কয়েকটা বল করার পর শন ফিরে গেলেন ডোনাল্ডের কাছে। বেশ খানিকক্ষণ ফিজিওর সঙ্গে কাটিয়ে তখন ব্যাট হাতে সদ্য সেই নেটে ঢুকেছেন ক্রিস গেইল। ডোনাল্ড এগিয়ে গিয়ে কী যেন বললেন গেইলকে। তার পর শনকে ইশারা করলেন, বোলিং শুরু করো।
গুনে গুনে শন অ্যাবটের গোটা ছয়েক ডেলিভারি খেললেন ক্যারিবিয়ান ঝড়। তার মধ্যে তিনটে শর্ট বল। তবে কোনওটাই গেইলের বুকের উপরের উচ্চতায় তুললেন না। গেইল হুক আর পুলেই সামলালেন সেগুলো। গেইল আসার আগে যে ক’জনকে বল করেছেন শন, তাঁদের অনেককেই তাঁর বাউন্সার সামলাতে হল। তবে সেগুলোকে মারণ বলা যায় না। নেট প্র্যাক্টিসে কতটাই বা আগ্রাসন দেখাবেন? শেষ দিকে নিজেই নিজেকে এক বার ধমক দিলেন বলে মনে হল। তার পর মাঠের ধারে প্যাড পরে বসে থাকা বিরাট কোহলির সঙ্গেও হাত-পা নেড়ে অনেকক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল তাঁকে। মনে হল নিজের সমস্যার ফিরিস্তি দিচ্ছেন টিমের ক্যাপ্টেনকে।
কী সমস্যা? এখনও কি হিউজ-স্মৃতি খোঁচায় তাঁকে?
ট্রেন্ট ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘মনে হয় না। নিজেকে ও অনেক সামলে ফেলেছে। ১৬ বছর বয়স থেকে ওকে দেখছি আমি। ও নিজেই সেটা করতে পারে। কারও সাহায্য ওর দরকার পড়ে না। সে ভাবেই এগোচ্ছে ও। এই স্মৃতিটা ওর জীবন থেকে মুছে দিতে পারাই এখন ভাল। তাই অনূর্ধ্ব ১৯-এর ওই সময়েই ফিরে যেতে চাইছি এখন। ওই ঘটনাটা নিয়ে ওর সঙ্গে আমরা কেউ কথা বলি না। অন্য বিষয় নিয়েই বেশি কথা হয়। ওর সঙ্গে।’’ দলের এক সদস্যও বললেন, ‘‘শনের সামনে ওই ঘটনা নিয়ে উচ্চবাচ্য করাও আমাদের বারন। যেন তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’ সাড়ে চার মাস আগে যেমন ক্রিকেট বিশ্ব তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল, মাঠে ফিরে নিউ সাউথ ওয়েলসের বন্ধুদের সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। এ বার আইপিএলে লাল-সোনালি শিবিরের সতীর্থরাও তেমন শন অ্যাবটের যুদ্ধে সহযোদ্ধার ভূমিকায়। নীরব সহযোদ্ধা।