বোপান্না-সাকেত। ক্রাইস্টচার্চে বিধ্বস্ত।
ক’দিন আগেই হায়দরাবাদে সানিয়া মির্জার টেনিস অ্যাকাডেমিতে এসে কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা বলে গিয়েছিলেন, টেনিসে সিঙ্গলসের চেয়ে ঢের জটিল ডাবলস খেলা। কারণ ডাবলসে পারস্পরিক বোঝাপড়া আর ছন্দটাই আসল।
শনিবার ক্রাইস্টচার্চে সেই ছন্দের অভাবই ডোবাল ভারতকে। টাই ১-১, এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ডাবলসের লড়াই স্ট্রেট সেটে হেরে গেলেন রোহন বোপান্না ও সাকেত মিনেনি। নিউজিল্যান্ড রওনা দেওয়ার আগে থেকেই ভারতীয় শিবিরকে যে দুশ্চিন্তা কুরে খাচ্ছিল, সেটাই সত্যি করে দিয়ে দুরন্ত ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডের আর্টেম সিটাক-মার্কাস ড্যানিয়েল ৬-৩, ৭-৬ (১), ৬-৩ হারালেন ভারতীয় জুটিকে। প্রতিপক্ষের দাপট দেখে ভারতীয় কোচ জিশান অলি পর্যন্ত মুগ্ধ। বলেছেন, ‘‘অবিশ্বাস্য টেনিস খেলল ওরা। আমরা ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছি মাত্র দু’টো। আর ওদের সার্ভে লাভ-৩০ পর্যন্ত উঠতে পেরেছি মাত্র দু’বার। কোনও সুযোগ না দিয়ে গোটা ম্যাচে একদম নিখুঁত টেনিস খেলে গেল কিউয়ি জুটি!’’
ভারতীয় কোচের গলায় বিস্ময় ঝরলেও কপালে উদ্বেগের গভীর ভাঁজ। ১-২ পিছিয়ে পড়ে প্রবল চাপে গোটা ভারতীয় শিবির। কারণ ফিরতি সিঙ্গলসে একটা জিতলেই ষোলো বছর পর ফের ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে অফে যাবে নিউজিল্যান্ড। আর ভারতকে এশিয়া-ওশেনিয়া গ্রুপ ১-এ টিকে থাকতে লড়তে হবে শক্তিশালী চিনের সঙ্গে।
ডেভিস কাপে ডাবলসটা বরাবরই ভারতের শক্তি। ডাবলসে ভারত শেষ হেরেছিল ২০১২ এপ্রিলে। সে বার উজবেকিস্তানের ডেনিস ইস্তোমিন-মুরাদ ইনোয়াতভ জুটি হারিয়েছিল লিয়েন্ডার পেজ-রোহন বোপান্নাকে। বোপান্না-মিনেনি জুটিও কোরিয়া আর চিনা তাইপের বিরুদ্ধে টাই জিতে এতদিন ছিল অপরাজিত। কিন্তু টানা একসঙ্গে না খেলার মূল্য দিতে হল। ডাবলস র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের ৪৩ নম্বর সিটাক আর ৬৬ নম্বর ড্যানিয়েলের চেয়ে বহু এগিয়ে থাকা বোপান্নাই কিনা প্রথম সার্ভিস খুইয়ে বসলেন! টাটকা উইম্বলডন সেমিফাইনাল খেলে আসা বিশ্বের দশ নম্বর তারকাকে প্রথম সেটের ষষ্ঠ গেমে ভেঙে ৪-২ এগিয়ে যায় কিউয়ি জুটি। ম্যাচে আর ফিরে তাকায়নি তারা।
ডাবলস নিয়ে আশঙ্কাটা ভারতীয় শিবিরে প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু ম্যাচ এতখানি একপেশে হবে, ভাবেননি কেউ। বরং বোপান্না তরি পার করাবেন, আশায় ছিলেন বাকিরা। সেটা হল না। দ্বিতীয় সেট টাইব্রেকারে গড়ালেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ বোপান্না-মিনেনি টাইব্রেক হারেন ১-৭। তৃতীয় সেটে মিনেনির সার্ভ শুরুতেই ভেঙে কিউয়িরা এগিয়ে যাওয়ার পর ভারত আর লড়াইয়ে ফিরতে পারেনি।
এখন সব নির্ভর করছে রবিবারের প্রথম সিঙ্গলসে সোমদেব দেববর্মনের উপর। টাইয়ের প্রথম ম্যাচে হেরে এমনিতেই চাপে আছেন সোমদেব। তবে জোস স্ট্যাথামের বিরুদ্ধে কোর্টে নামার আগে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছেন, দেশকে লড়াইয়ে রাখতে নিজেকে উজাড় করে দেবেন। ‘‘প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছি না। কথা দিচ্ছি, কোর্টে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে লড়ব।’’ এসপার-ওসপার ম্যাচে তাঁর উপর বাড়তি চাপ আছে বলে সোমদেব মানতে নারাজ। বরং বলেছেন, ‘‘নিজের খেলা খেলতে পারলে জেতার সুযোগ আছে। আপাতত সেটাতেই ফোকাস করছি।’’
তবে সোমদেব জিতলেও য়ুকি ভামব্রির কাজ এতটুকু সহজ হবে না। তাঁর সামনে মাইকেল ভেনাস। যিনি সোমদেবকে হারিয়েছেন। গত বছর মাইকেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে অস্ট্রেলীয় ওপেনে ডাবলসের তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত উঠেছিলেন য়ুকি। পুরনো পার্টনার সম্পর্কে আগে বলেছিলেন, ‘‘একবার ছন্দ পেয়ে গেলে ওকে রোখা খুব কঠিন।’’ সোমদেব পারেননি। য়ুকি কি পারবেন?
জবাব খোঁজার আগে অবশ্য ফিরতি সিঙ্গলসের প্রথমটা জিততেই হবে ভারতকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy