ভারতকে এশিয়া কাপ এনে দেওয়ার পরে হাসতে হাসতে রোহিত শর্মা জানাচ্ছেন, তিনি এ বার দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক হিসেবেও দলের দায়িত্ব নিতে তৈরি!
বিরাট কোহালি বিশ্রামে থাকায় এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রোহিত। ফাইনালে শেষ বলে চোট-আঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি জেতে ভারত। এর পরে সাংবাদিক বৈঠকে আসা রোহিতকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভারতের নেতৃত্ব দিতে তৈরি? আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন করা এবং ভারতীয় দলের হয়ে দুটি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ট্রফি জেতা অধিনায়ক বলেন, ‘‘অবশ্যই। আমরা এই মাত্র একটা ট্রফি জিতে উঠলাম। ফলে আমি তো দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকবই। যখনই সুযোগ আসবে আমি প্রস্তুত থাকব।’’
রোহিতের নেতৃত্বে ভারত কাপ জিতলেও প্রশ্ন উঠছে, ভারতের মিডল অর্ডার নিয়ে। ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ বলে জেতার পরে এও বলা হচ্ছে, কেন ভারত এতটা গুটিয়ে ছিল ফাইনালে। রোহিত অবশ্য মনে করেন, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ সব সময় তাঁদের হাতেই ছিল। অস্থায়ী ভারত অধিনায়ক আরও বলেন, ‘‘আমাদের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা এই এশিয়া কাপে সে ভাবে ব্যাট করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু ফাইনালে ওরা দারুণ ভাবে চাপ সামলাল। ওদের সম্মীলিত প্রচেষ্টায় আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।’’ এই এশিয়া কাপে বারবার একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের মিডল অর্ডারের সে ভাবে সফল না হওয়া। অম্বাতি রায়ডু, দীনেশ কার্তিক, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— কেউ সে ভাবে ধারাবাহিক রানের মধ্যে ছিলেন না। ছ’নম্বরে এক জন পাওয়ার হিটারের অভাবও বোঝা গিয়েছে। রোহিতও মানছেন সে কথা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মিডল অর্ডারে আমাদের চার নম্বর এবং ছ’নম্বর জায়গা নিয়ে ভাবতে হবে। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের আগে যে সব প্রতিযোগিতা আছে, সেখানে কাউকে কাউকে ধারাবাহিক ভাবে সুযোগ দিয়ে দেখে নিতে হবে।’’
শুক্রবার রাতে ভারত সপ্তম বার এশিয়া কাপ জেতার পরে দুবাইয়ের কালো রাত রঙিন হয়ে উঠেছিল। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঢাক-ঢোল নিয়ে নেমে পড়েন ভারতীয় সমর্থকেরা। শনিবার সকালে ভারতীয় দল দুবাই ছাড়লেও ধোনি থেকে যান। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এবং মণীশ পাণ্ডেকে দেখা যায় হোটেলে পাকিস্তানের ভক্ত বশির চাচার সঙ্গে প্রাতরাশ সারছেন।
এ বারের এশিয়া কাপে বারবার দেখা গিয়েছে, অধিনায়ক রোহিতকে নানা ভাবে সাহায্য করছেন ধোনি। ভারত অধিনায়কও ফাইনালের পরে তাঁর পূর্বসূরিকে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। এর আগে কোহালি বলেছিলেন, তিনি ধোনিকে দেখে অধিনায়কত্বের পাঠ নিয়েছেন। এ বার রোহিতের মুখেও শোনা যাচ্ছে একই কথা। তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘আমি অনেকটা ধোনির মতো অধিনায়কত্ব করি।’’
সেটা কী রকম, তারও ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের দিয়েছেন রোহিত। বলেছেন, ‘‘আমি দেখেছি, ধোনি কোনও অবস্থাতেই ঘাবড়ে যায় না। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আমার মধ্যেও এই ব্যাপারগুলো আছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আমিও প্রথমে ভাবার চেষ্টা করি। তার পরে সিদ্ধান্ত নিই। আমি এগুলো শিখেছি ধোনিকে দেখে। এত বছর ওর নেতৃত্বে খেলেছি। আর যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই ধোনির কাছ থেকে সাহায্য পাই।’’
ধোনির প্রভাব যে রোহিতের নেতৃত্বে দেখা গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন দলের প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভাবে শুরু করার পরেও যে তীব্রতা বজায় রাখতে পেরেছে আমাদের ছেলেরা, এটা রোহিতের ঠান্ডা মাথার জন্যই সম্ভব হয়েছে। দারুণ বোলার পরিবর্তন করেছে। শেষ ৩০ ওভারে ১০০ রানের বেশি উঠতে দেয়নি। অসাধারণ নেতৃত্ব।’’ শাস্ত্রীর ধারণা, ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ উন্নতিই এশিয়া কাপে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ফিল্ডিংই। এই পরিবেশে প্রতি ম্যাচে আমরা ৩০-৩৫ রান কম দিয়েছি।’’
অধিনায়ক রোহিত নিজের দর্শনও পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যে দর্শন ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে বাদ যাওয়ার ভয়টা মুছে দিতে চায়। জানা গিয়েছে, দীনেশ কার্তিক এবং অম্বাতি রায়ডুকে এও বলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের প্রতিটা ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হবে। তাই বাদ যাওয়ার ভয় না পেয়ে খেলে যেতে। রোহিত যে প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা এখানে আসার পরেই আমি ওদের বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, তোমরা প্রতিটা ম্যাচই খেলবে। যদি কারও মনে ভয় থাকে, দু’ম্যাচ পরে আমি বাদ পড়ে যাব, তা হলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’’
নিজের মতাদর্শ নিয়ে রোহিত আরও বলেছেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, যাতে কেউ কোনও চাপে না থাকে। কেউ যেন বাদ পড়ার ভয় না পায়। যখন কয়েক জন সিনিয়র ক্রিকেটার বিশ্রামে যায়, তখন নতুন দলের কাছে সেটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সবাই জানে, সিনিয়রেরা আবার ফিরে এলে কয়েক জনকে সরে যেতে হবে। সব দলেই এটা হয়। নতুন ছেলেরাও সেটা বোঝে। ওদের কাজটা হল, পুরোপুরি চাপমুক্ত হয়ে খেলে সুযোগটাকে কাজে লাগানো।’’
সমস্যা হল, ভারতীয় মিডল অর্ডার প্রায় নির্বিষ বাংলাদেশের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ফাইনালে যে ভাবে খেলেছে, তাতে রোহিত-দর্শন কতটা কাজে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। চাপমুক্ত পরিবেশে খেলার সুযোগ পেয়েও রায়ডু বা কার্তিককে যথেষ্ট নড়বড়ে দেখিয়েছে। কোথাও ম্যাচের রাশ তাঁরা নিজেদের হাতে নিতে পারেননি। ধোনিও একের পর এক ম্যাচ ব্যর্থ হওয়ায় শেষ দিকে দ্রুত রানও ওঠেনি। রোহিত নিজের দর্শন তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেই দর্শন মানতে গিয়ে আবার বসিয়ে রাখতে হয়েছে কে এল রাহুলের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানকে।
এশিয়া কাপ ভারত ঘরে নিয়ে ফিরছে ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অনেক কিছু নিয়েই।