পরনে কালো রঙের সোয়েট শার্ট এবং ট্রাউজ়ার্স। মুখে সাদা মাস্ক, মাথায় কালো রঙের টুপি। আর ডান হাতে ধরা গীতা! এ ভাবেই বিধানগর মহকুমা আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন মেসিকাণ্ডে ধৃত শতদ্রু দত্ত। তবে দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পরে ফের তাঁর জামিনের আবেদন আবার খারিজ করে দিলেন বিচারক। যদিও মেসিকাণ্ডে ধৃতের আইনজীবীর দাবি, ‘গোল’ দিয়েছেন তাঁরাই।
রবিবার আদালতে হাজির করানো হলে শতদ্রুকে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। তবে আদালতকক্ষের বাইরে এসে শতদ্রুের আইনজীবী সৌমজিৎ রাহা বলেন, ‘‘আমার মক্কেল ৩-০ তে এগিয়ে আছেন।’’ পাল্লা সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘উনি-ই তিনটে গোল খেয়ে বসে আছেন।’’
শতদ্রুর আইনজীবী জানান, পেশাদার সংস্থার অনুষ্ঠানে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলারকে দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। প্রোটোকল মেনেই পুরো আয়োজন হয়েছিল। প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখেছিলেন। এনওসি নেওয়া হয়েছিল। তাঁর মক্কেলের সংস্থা এর আগেও আন্তর্জাতিক মানের একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সবগুলোই সফল হয়েছে। বরাবর পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বসবার ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত কিছুই দেখা হয়েছিল। ৭ নভেম্বর বিধাননগর পুলিশ ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার পরে কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়। সে জন্য তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানানো হয়েছে। আয়োজক সংস্থার দিক থেকে কোনও নিয়ম ভঙ্গ করা হয়নি।’’
ধৃতের আইনজীবী জানান, মেসির ক্ষেত্রে জ়েড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দার তরফেও অশান্তির কোনও তথ্য ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এখন বলছে, মানুষ হতাশ হয়েছে। মানুষের হতাশার তদন্তও নাকি পুলিশ করছে! হতাশার গভীরতার তদন্ত পুলিশ করবে বলছে তারা!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মক্কেলের ২২ কোটি টাকা ফ্রিজ় করা হয়েছে। দেশের সব জায়গায় শতদ্রু দত্তের সংস্থা তাদের পেশাদারিত্ব প্রমাণ করেছে। শতদ্রুর নানা জটিল রোগ আছে। তিনি পালিয়ে যাবেন না। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’
অন্য দিকে, দর্শকদের টাকা ফেরত প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী জানান, আইন আছে। সে জন্য সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘‘উদ্যোক্তার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে। আমার বিবাদী পক্ষ বলেছেন, ৩ গোল করেছেন। কারণ, দিল্লি, মুম্বই এবং হায়দরাবাদে সফল ভাবে অনুষ্ঠান শেষ করেছেন বলছেন। কিন্তু বাকি তিন জায়গার মতো এখানে কোনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট রাখেননি।’’ সরকারি আইনজীবীর আরও দাবি, ‘‘ওই অনুষ্ঠানে চুক্তির আগে চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। তদন্ত চলছে। অনৈতিক ভাবে লাভ করেছেন। উনি প্রভাবশালী ব্যক্তি। আদালতে সে কথা বলেছি।’’
এর আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিয়োনেল মেসি-কাণ্ডে ধৃত উদ্যোক্তা শতদ্রুকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিধাননগর পুলিশকর্তারা। সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের অনলাইনে টিকিট বিক্রির সংস্থার এক শীর্ষ কর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর। শতদ্রুর তিনটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তা ছাড়া তাঁর গ্রেফতারির অব্যবহিত পরে রিষড়ায় বাসভবনে তল্লাশি হয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর যুবভারতীতে মেসিকে দেখতে না পেয়ে উত্তেজিত দর্শকেরা স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালানো এবং সামগ্রিক বিশৃঙ্খলার জন্য প্রশাসন শতদ্রুকেই দায়ী করেছে। বিধাননগর দক্ষিণ থানার হেফাজতে থাকা শতদ্রুকে এর আগে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
আরও পড়ুন:
সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রবিবার আবার শতদ্রুকে হাজির করানো হল আদালতে। যুবভারতীকাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হওয়া লেনদেনের অঙ্ক, মেসিকাণ্ডের আগে ও পরে শতদ্রু কাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন ইত্যাদি।