Advertisement
E-Paper

ইডেনকে পঞ্চান্ন বছর আগের কানহাইয়ে ফেরালেন রোহিত

পঞ্চান্ন বছর আগের সেই ইনিংস, না তেরো বছর আগেরটা? রোহিত শর্মার বিধ্বংসী ২৬৪ কোনটার স্মৃতি উস্কে দিল? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গ ক্রিকেটের অন্দরমহলে যখন এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, তখনই এক ঝলক দেখা গেল তাঁকে। ভিভিএস লক্ষ্মণ। ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের মোড় ঘোরানো ২৮১-র ইনিংস খেলে যিনি এত দিন ছিলেন ইডেনের দর্শকদের নয়নের মণি।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
ম্যাচ শুরুর আগে দেড়শোর কেক কাটছেন দুই অধিনায়ক। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ম্যাচ শুরুর আগে দেড়শোর কেক কাটছেন দুই অধিনায়ক। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

পঞ্চান্ন বছর আগের সেই ইনিংস, না তেরো বছর আগেরটা? রোহিত শর্মার বিধ্বংসী ২৬৪ কোনটার স্মৃতি উস্কে দিল?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গ ক্রিকেটের অন্দরমহলে যখন এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, তখনই এক ঝলক দেখা গেল তাঁকে। ভিভিএস লক্ষ্মণ। ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের মোড় ঘোরানো ২৮১-র ইনিংস খেলে যিনি এত দিন ছিলেন ইডেনের দর্শকদের নয়নের মণি। এ বার সেই জায়গাটা রোহিতের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে তাঁকে? প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে করতে লক্ষ্মণ বললেন, “ওটা তো ছিল একেবারে অন্য খেলা। তবে এটাও কম কৃতিত্বের নয়। চোট সারিয়ে ক্রিজে ফিরেই কী খেলল দেখলেন? প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছয়। অসাধারণ। ছেলেটা বুঝিয়ে দিল, ওর মধ্যে কী প্রতিভা আছে।”

ক্লাব হাউসে আলোচনাটা বেশ খানিকক্ষণ ধরেই চলছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে গোপাল বসু বলে দিলেন, “হেলমেট-পূর্ব যুগের ব্যাটিং আর হেলমেটোত্তর যুগের ব্যাটিংয়ে আকাশ-পাতাল তফাত্‌। এটা মাথায় রেখেই বলছি, এই ইনিংসটা রোহন কানহাইয়ের সেই ২৫৬-র ইনিংসকে মনে করিয়ে দেওয়ার মতো।”

দেড়শোর ইডেনে ক’টাই বা আন্তর্জাতিক ডাবল সেঞ্চুরি? হাতে গুনে বলে দেওয়া যায়। রোহিত শর্মার বৃহস্পতিবারের ইনিংসটা চতুর্থ। আর প্রথমটার জনা কয়েক জীবিত সাক্ষীর অন্যতম নরি কনট্রাক্টরের অসুস্থতার কারণে এ দিনের ইনিংসটা দেখাই হয়নি। তবে ইডেনে ডাবল সেঞ্চুরির খবর শুনে কিছুটা উত্তেজিত হয়েই ফোনে বললেন, “ইডেনে ডাবল সেঞ্চুরি করা মোটেই সোজা নয় ভাই। রোহন কানহাইয়ের সেরা ব্যাটিং দেখেছিলাম সে দিন। আমাদের রোহিত শর্মাও করেছে? মাস্ট বি আ গ্রেট ব্যাটসম্যান।” ১৯৫৯-এর জানুয়ারির শীতে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির ব্যাটে আগুনের ফুলকি ছোটার প্রসঙ্গ তুলতে সেই ম্যাচে পঙ্কজ রায়ের সঙ্গী ওপেনার বললেন, “পেসারদের জন্য একেবারে আদর্শ উইকেট ছিল ইডেনে। তার মধ্যেই কানহাই শুধুমাত্র অসাধারণ টাইমিংয়ের সাহায্যে দুর্দান্ত ইনিংসটা খেলে দিল।”

এ দিন যেমন রানে ভরা উইকেটে রোহিতের ইনিংসে তিনবার ক্যাচ পড়ল, তেমন সে বার বারদুয়েক ক্যাচ দিয়েও কানহাই প্রাণ পেয়েছিলেন বলে জানান নরি। তবে যেহেতু রোহিতের ইনিংস দেখা হয়নি তাঁর, তাই কোনও তুলনায় যেতে চাইলেন না। বললেন, “তুলনায় গিয়ে কী হবে? যারা ইডেনে ডাবল সেঞ্চুরি করে, তারা গ্রেট।” কমেন্ট্রি বক্স থেকে বেরিয়ে সুনীল গাওস্কর ও কপিল দেবের গলাতেও প্রায় একই সুর। সকালেই শহর ছেড়ে চলে যাওয়া বিষেন সিংহ বেদী টুইট করলেন, “ওয়েল ডান রোহিত। তবে তোমার মন মাতানো প্রতিভার সঙ্গে চাই ধারাবাহিকতাও।” আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সোজা সাপ্টা মন্তব্য, “দুর্দান্ত ইনিংস। তবে অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম ব্যাট করতে হবে। ওখানেই তো আসল পরীক্ষা।” ইডেনের দেড়শো বছর পূর্তির উত্‌সব মাঠে মারা যাবে বলে আতঙ্কিত হয়েছিলেন সিএবি-র যে কর্তারা, তাঁরা যেমন রোহিতের এই নজির গড়া ইনিংসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, তেমনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বিকেল থেকে দ্রুত ভরে যাওয়া গ্যালারি দেখেও। দিনের শেষে যে প্রেস নোটে ঘোষণা করা হল, রোহিত শর্মাকে প্রতি রানের জন্য এক হাজার টাকা করে দেবে সিএবি (সব মিলিয়ে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা), সেই নোটেই জানানো হয়, ইডেনে না কি ৫০ হাজার ৩৮৯ দর্শক এসেছিলেন এ দিন। দুপুরে যা ছিল প্রায় কল্পানতীত। ওই সময় হঠাত্‌ হাজির আটলেটিকো দে কলকাতার তিন বিদেশি ফুটবলার হোফ্রে গঞ্জালেস, জাকুব পদানি ও বাসিলিও স্যাঞ্চো গ্যালারির হাল দেখে নাক সিঁটকালেও পরের ছবিটা দেখলে বোধহয় তা করতেন না। বার্সেলোনায় খেলে আসা সৌরভের দলের স্প্যানিশ লেফট উইঙ্গার হোফ্রে বললেন, “পরিবেশটা দারুণ। এর আগে টিভিতে ক্রিকেট দেখেছি। কিন্তু মাঠে বসে দেখার সুযোগ পেলাম প্রথম। এ তো বেসবলের মতো।”

কিন্তু কোথায় তিনি? এই জয়োল্লাসের মাঝেও গ্যালারিতে হাহাকার। পোস্টার দেখা গেল, “কোথায় তুমি অনুষ্কা?”। বিরাটাধীন ভারতীয় দলের তিনিই যে এখন লাকি ম্যাসকট। আসার কথা ছিল অমিতাভ বচ্চনেরও। সিএবি কর্তারা নাকি সেই চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু শহরে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুটিং করেও ক্লান্ত বিগ বি এলেন না। ‘ডন’ বুড়ো হয়ে গিয়েছেন? ইডেনে হাজির আর এক বলিউড অভিনেতা ইরফান খান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললেন, “চুপ চুপ। না হলে হয়তো উনি বলবেন, বুঢ্ঢা হোগা তেরা....।”

cricket rohit sharma india-sri lanka world record one day international 264 highest one day score fifty-five years ago returns turned Eden graden sports news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy