শনিবার রাতে একটা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখার আশায় ছিলাম। ভেবেছিলাম ইউরোপের সেরা ডিফেন্সের বিরুদ্ধে কঠিন একটা চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে জিনেদিন জিদানকে।
নব্বই মিনিট শেষে হতাশই হলাম। কোথায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। শেষ কয়েক মিনিট তো মনে হচ্ছিল প্র্যাকটিস ম্যাচ দেখছি। যেখানে সবাই জেনেই গিয়েছে চ্যাম্পিয়ন কে হচ্ছে। আসলে রিয়ালের সেই সাত নম্বর জার্সি পরা ফুটবলারটাই এর জন্য দায়ী। হ্যাঁ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এ রকম একটা ফুটবলার দলে থাকলে বিপক্ষের কিছুই করার থাকে না।
রোনাল্ডোকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সবাই জানে ও কী করতে পারে। তাতেও অবাক হয়ে যাই রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুনলে। কার্ডিফ আবার দেখিয়ে দিল, ফর্ম সাময়িক হতে পারে কিন্তু প্রতিভা চিরস্থায়ী। রোনাল্ডোই একার হাতে ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিল।
আগেও বলেছি কোনও ব্যক্তিগত প্রতিভার বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি কার্যকর হয় না। য়ুভেন্তাস কোচ আলেগ্রিও অনেক কিছু ভেবে এসেছিলেন। রিয়াল ফুটবলারদের জন্য ডিপ ডিফেন্স রাখা। মার্সেলো-কারভাহালদের বেশি ওভারল্যাপ না করতে দেওয়া। শেষমেশ কোনওটাই কাজে লাগল না। কারণ রোনাল্ডো যখন প্রভাব ফেলতে শুরু করল ম্যাচে, য়ুভেন্তাস ফুটবলাররা এক রকম সাদা পতাকাই যেন তুলে দিল।
আরও পড়ুন: বোমাতঙ্কে আহত প্রায় হাজার য়ুভেন্তাস সমর্থক
রোনাল্ডোর সবচেয়ে বড় গুণ ওর অনুমানক্ষমতা। সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকার ক্ষমতাই রোনাল্ডোকে এত গোল পেতে সাহায্য করে। বর্তমান ফুটবলে অনেক সময় দেখা যায় দলে দুর্দান্ত সমস্ত ওভারল্যাপিং ফুলব্যাক থাকলেও স্ট্রাইকাররা তাদের ক্রস কাজে লাগাতে পারছে না। কারণ ওই সব ক্রস বোঝার মতো ফরোয়ার্ড বেশি দেখা যায় না। রিয়ালের সেই সমস্যা নেই। কারণ রোনাল্ডো আগাম বুঝে নেয় মার্সেলো বা কারভাহালের ক্রসগুলো কোথায় আসবে। য়ুভেন্তাসের বিরুদ্ধেও তো রোনাল্ডোর দু’টো গোলের পিছনে আসল কারণ সঠিক পজিশনিং।
প্রথম গোলের মুভে কারভাহালের পাসের সময় রোনাল্ডো ঠিক জায়গায় থেকে শটটা মারল। হতে পারে গোলটা ডিফ্লেকট হয়ে ঢুকল। কিন্তু রোনাল্ডোর শটটা টার্গেটেই ছিল। রোনাল্ডোর দ্বিতীয় গোলটা মনে হতে পারে সহজ। কিন্তু ও রকম কঠিন অ্যাঙ্গল থেকে দৌড়ে এসে এক টাচে বলটা গোলে রাখা সহজ নয়। রোনাল্ডো সে ক্ষেত্রেও সঠিক পজিশনে।
সংখ্যায় রোনাল্ডো: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা শিকারি
৩
প্রথম ফুটবলার হিসেবে তিনটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করলেন। ফাইনালে এই প্রথম জোড়া গোল করলেন রোনাল্ডো।
৪
চার বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে মেসিকে ছুঁয়ে ফেললেন রোনাল্ডো। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে একটা ও রিয়ালের হয়ে তিনটে।
৫
টানা পাঁচ মরসুম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ফাইনালে জোড়া গোলে টপকালেন মেসিকে।
৭
জিয়ানলুইগি বুফনের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর সাত নম্বর গোল। ক্লাব পর্যায়ে বুফনের বিরুদ্ধে যত বার খেলেছেন গোল পেয়েছেন।
৯
গত এক বছরে ব্যক্তিগত ও দলগত ট্রফি মিলিয়ে রোনাল্ডোর ন’নম্বর খেতাব। যার মধ্যে দেশকে ইউরো। রিয়ালকে চারটে। ব্যালন ডি’ওর।
১২
এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রোনাল্ডোর গোলসংখ্যা। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ১০ নম্বর গোল।
১০৫
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো। রিয়াল জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৯০টা গোল করেছেন।
৬০০
রোনাল্ডো জানত য়ুভেন্তাসের বিরুদ্ধে শারীরিক ফুটবলে পেরে উঠবে না। বোনুচ্চি-কিয়েল্লিনির মতো ডিফেন্ডাররা মার্কিংয়ে ওস্তাদ। তাই তো এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকেনি। বারবার নড়াচড়া করে গিয়েছে। যাতে কেউ মার্ক না করতে পারে। কোনও সময় উইংয়ের দিকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার সেন্টার ফরোয়ার্ড হয়ে যাচ্ছে। রোনাল্ডো স্বাধীনভাবে খেলেছে বলেই রিয়াল এত আক্রমণ তৈরি করতে পেরেছে। জিদান জানতেন রোনাল্ডোকে ফ্রি-রোল দিলে আক্রমণ গড়তে পারবে রিয়াল। কোনও একটা নির্দিষ্ট পজিশনের চাপ ওর ওপর দেননি। রোনাল্ডোকে মার্ক না করতে পারায় আক্রমণ তৈরি করতে পারছিল।
মারিও মান্দজুকিচ গোল করে ১-১ করার পরে মনে হয়েছিল য়ুভেন্তাস হয়তো ভাল একটা লড়াই দেবে। কিন্তু কাসেমিরো আর রোনাল্ডোর গোলের পরে হাল ছেড়ে দিল য়ুভেন্তাস। মাঝমাঠ আর ফরোয়ার্ড লাইনই হারাল বুফনদের। হিগুয়াইনকে গোটা ম্যাচে খুঁজে পাওয়া গেল না। মাঝমাঠে খেদিরা-পিয়ানিচ কিছু তৈরি করতে পারেনি। ডিফেন্সও খারাপ ছিল। পজিশনিংয়ে সমস্যা। দ্রুত ট্র্যাক ব্যাক করতে পারেনি। সব মিলিয়ে যোগ্য দলের হাতেই ট্রফি উঠল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy