Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আইপিএলের আগুনটা নিয়েই এসেছে নাইটরা

গম্ভীরদের ভুলগুলো ঢেকে দিল রাসেল

টুর্নামেন্টের শুরুটা সাধারণত কোনও দিন ওদের ভাল হয় না। এ বারও সে পথেই এগোচ্ছিল নাইটরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচটা বুঝিয়ে দিল, আইপিএলের আগুনটা নিয়েই এসেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। যে ভাবে নাইটদের স্পিনাররা ধোনিদের বেঁধে রাখল। যে ভাবে মাত্র ২১ রানের মধ্যে নিজেদের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়া সত্ত্বেও চেন্নাইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এক ওভার বাকি থাকতে চার উইকেটে দুর্ধর্ষ জয় এনে দিল আন্দ্রে রাসেল ও রায়ান টেন দুশখাতে, তার পর বলাই যায় কেকেআর-কে অন্যদের সমীহ করতেই হবে।

রাসেল। রান ৫৮ বল ২৫ ছক্কা ৫ বাউন্ডারি ৪ স্ট্রাইক রেট ২৩২

রাসেল। রান ৫৮ বল ২৫ ছক্কা ৫ বাউন্ডারি ৪ স্ট্রাইক রেট ২৩২

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

টুর্নামেন্টের শুরুটা সাধারণত কোনও দিন ওদের ভাল হয় না। এ বারও সে পথেই এগোচ্ছিল নাইটরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচটা বুঝিয়ে দিল, আইপিএলের আগুনটা নিয়েই এসেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

যে ভাবে নাইটদের স্পিনাররা ধোনিদের বেঁধে রাখল। যে ভাবে মাত্র ২১ রানের মধ্যে নিজেদের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়া সত্ত্বেও চেন্নাইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এক ওভার বাকি থাকতে চার উইকেটে দুর্ধর্ষ জয় এনে দিল আন্দ্রে রাসেল ও রায়ান টেন দুশখাতে, তার পর বলাই যায় কেকেআর-কে অন্যদের সমীহ করতেই হবে। ভুলে যাবেন না, এই দলে উথাপ্পা, কালিস, সাকিব, মর্কেলরা কিন্তু ছিল না।

আইপিএলে কেকেআরের অস্ত্র ছিল স্পিনই। এখানেও দেখা গেল, সেই স্পিনাররাই গম্ভীরের আসল তাস হতে চলেছে। চেন্নাইয়ের ব্যাটিং লাইনের দিকে একবার তাকান। শুরুতে ম্যাকালাম-স্মিথ। তারপর একে একে রায়না, দু’প্লেসি, ধোনি, ব্র্যাভো, জাডেজা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সম্ভবত সেরা ব্যাটিং লাইন-আপ। কিন্তু এই ব্যাটিং পাওয়ারহাউসকেও যে ভাবে দাবিয়ে রেখেছিল কেকেআর বোলাররা, বিশেষ করে স্পিনাররা, তাতে এই ব্যাপারটা পরিষ্কার যে, আইপিএলের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও নাইটদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নারিন, চাওলা, ইউসুফদের সমীহ করতেই হবে। না হলে সমূহ বিপদ। যেমন বুধবার হল ধোনির দলের ক্ষেত্রে।

চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে সব মিলিয়ে ১৫৭। টি-টোয়েন্টিক বিচারে কিছুই নয়। হায়দরাবাদে উপ্পল স্টেডিয়ামে যা উইকেট, তাতে একটু ভাল ব্যাটিং করলেই রানটা অনায়াসে তুলে দেওয়া যেত। কিন্তু শুরুতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই বিপত্তি বাধাল কেকেআর ব্যাটসম্যানরা। রাসেল-দুশখাতেরাই ম্যাচ ঘোরানোর দায়িত্ব নিল। আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এ রকমই। একটা পার্টনারশিপ আর কয়েকটা ঘটনাবহুল ওভারই ম্যাচের রঙ আমূল পাল্টে দিতে পারে। সেই পার্টনারশিপটাই এ দিন দিল রাসেল (২৫ বলে ৫৮) ও দুশখাতে (৪১ বলে ৫১ নটআউট)।

প্রথমে ব্যাট করা দল যে ফর্মুলায় সফল হবে, পরে ব্যাট করা দল সেই ফর্মুলায় বাজিমাত করতে পারবে, টি-টোয়েন্টিতে এমন কোনও কথা নেই। ধোনিদের কৌশল ছিল স্পিনারদের সমীহ করো আর পেসারদের থেকে যত পারো রান নিংড়ে নাও। একেবারে এই ছকে ইনিংসটা গড়েছে চেন্নাই সুপার কিংস ব্যাটসম্যানরা। পরে সাড়ে সাতের একটু বেশি আস্কিং রেট এর সামনে উল্টো ছকে এগোতে গিয়েই শুরুতে হোঁচট খায় গম্ভীর ও তার দলের ব্যাটসম্যানরা।

কেকেআর বোলিং অ্যাভারেজের দিকে তাকান। সুনীল নারিন চার ওভারে ৯ রান দিয়ে এক উইকেট। পীযূষ চাওলা চার ওভারে ২৬ দিয়ে দু’উইকেট। পাঠান তিন ওভারে ১৬ দিয়ে এক উইকেট। সেই তুলনায় কামিন্স চার ওভারে ৪৯ ও উমেশ চার ওভারে ৪৩। মানে ধোনিদের বেশির ভাগ রান উমেশদের পেস বলেই।

গম্ভীরদের ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত ছিল শুরুতে উইকেটে টিকে থেকে খেলাটাকে ধরো। তার পর আক্রমণে যাও। এমন কিছু আহামরি টার্গেট নয়। ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়তে গেলে যে, ঝড় বইয়ে দিতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। শুরুতে শুধু ধৈর্য ধরে নেহরা, পান্ডে, মোহিতদের সামলে নিতে হত। শেষ পর্যন্ত নিজেদের প্রথম ম্যাচটা জিতলেও কিন্তু সেটা পারল না গম্ভীররা। একের পর এক ‘ব্লান্ডার’। দু’ওভার ক্রিজে থাকার পর গম্ভীর তাড়াহুড়ো করে শট নিতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেল। মণীশ ক্রিজে এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ঠিক একই ভুল করল। ইউসুফ পাঠান কোনও দিনই বড় একটা ফুটওয়ার্কের ধার ধারে না। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরে যাওয়া আউটসুইঙ্গার খেলতে হলে সামান্য ফুটওয়ার্ক তো দরকারই। সেটাও ছিল না। ফলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হল। অদ্ভূত ভাবে বিসলাও মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরল। এটা তো স্রেফ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করা!

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

২১ রানের মধ্যে প্রথম চার ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার পর রায়ান টেন দুশখাতে হাল না ধরলে জেতা তো দূরের কথা লড়াইটাই হত না। ধোনিরাই একতরফা জিতে যেত। তার বদলে খেলার রাশটা নিজের ব্যাটে তুলে নিল রাসেল। টি-টোয়েন্টির পক্ষে আদর্শ ব্যাটিং। কিন্তু রোজই কি রাসেল এমন ব্যাটিং করবে? না, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই।

বিগহিটারদের পক্ষে রোজ রোজ বড় শট সম্ভব নয়। তবে রাসেল ব্যতিক্রম হয়ে উঠতে পারলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কালিসকে আর দরকার হবে না কেকেআরের। কালিসের মতোই রাসেল বলটাও করে এবং মাঝেমাঝেই উইকেট তুলে নিতে পারে। বাড়তির মধ্যে কালিসের চেয়ে অনেক দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা আথে রাসেলের। যদিও সদ্য আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নেওয়া আধুনিক ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারকে এত তাড়াতাড়ি বোধহয় ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কালিসরা এক তাড়াতাড়ি বিস্মৃত হতে পারে না। বরং দুশখাতে টুর্নামেন্টে নাইটদের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার ব্যাপারে রাসেলের চেয়ে বড় বাজি হলেও হতে পারে। বিগহিটার না হোন, দুশখাতে কিন্তু অনেক সলিড ব্যাটসম্যান।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা এ রকমই। এখানে ধারাবাহিকতার চেয়ে ম্যাচের দিনের ফর্মটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাইটদের ভাঙা দলেরও সৌভাগ্য যে, সেই দুটো ব্য্যাপারই আছে। রাসেল আর দুশখাতে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চেন্নাই: ২০ ওভারে ১৫৭-৭ (ধোনি ৩৫ নঃআঃ, ব্র্যাভো ২৮ নঃআঃ, চাওলা ২-২৬, নারিন ১-৯)।

কলকাতা: ১৯ ওভারে ১৫৯-৭ (রাসেল ৫৮, দুশখাতে ৫১ নঃআঃ, নেহরা ৪-২১)।

বিতর্কে গম্ভীর

কেকেআর অধিনায়ক ম্যাচ চলাকালীন এক সময় ওয়াইড দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আম্পায়ারের টুপিতে লাগানো ক্যামেরায় সেটা ধরাও পড়ে। ঝামেলার মাঝে বিসলা এসে গম্ভীরকে টেনে নিয়ে যান।

ছবি: বিসিসিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE