Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আত্মজীবনীর বিশেষ অংশ

নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিকেটও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন সচিন

ঈশ্বর কি কখনও ব্যর্থতায় ক্ষতবিক্ষত হন? ঈশ্বর কি হতাশায় মেজাজ হারান? ঈশ্বর কি পরাজয়ের গ্লানিতে গৃহবন্দি থাকেন? ‘ক্রিকেটের ঈশ্বর’-এর আত্মজীবনীর কিছু পাতা উল্টে দেখা যাচ্ছে, সব ক’টা প্রশ্নের উত্তরেই ‘হ্যাঁ’ বলা যায়! দিন কয়েকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক বই প্রকাশ। তার আগে বইয়ের কিছু অংশে ফুটে উঠেছে সচিনের যন্ত্রণার ছবি। একটা সময় হতাশা এতটাই গ্রাস করে যে, শুধু অধিনায়কত্ব নয়, ক্রিকেট থেকেই চিরতরে সরে যেতে চেয়েছিলেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। শেষে স্ত্রী অঞ্জলির কথায় আশা খুঁজে পান।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৫
Share: Save:

ঈশ্বর কি কখনও ব্যর্থতায় ক্ষতবিক্ষত হন? ঈশ্বর কি হতাশায় মেজাজ হারান? ঈশ্বর কি পরাজয়ের গ্লানিতে গৃহবন্দি থাকেন?

‘ক্রিকেটের ঈশ্বর’-এর আত্মজীবনীর কিছু পাতা উল্টে দেখা যাচ্ছে, সব ক’টা প্রশ্নের উত্তরেই ‘হ্যাঁ’ বলা যায়!

দিন কয়েকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক বই প্রকাশ। তার আগে বইয়ের কিছু অংশে ফুটে উঠেছে সচিনের যন্ত্রণার ছবি। একটা সময় হতাশা এতটাই গ্রাস করে যে, শুধু অধিনায়কত্ব নয়, ক্রিকেট থেকেই চিরতরে সরে যেতে চেয়েছিলেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। শেষে স্ত্রী অঞ্জলির কথায় আশা খুঁজে পান।

আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’-তে সচিন লিখেছেন, “১৯৯৭-এর দিকে ফিরে তাকালে আজও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই!” ১৯৯৭ ক্যারিবিয়ান সফরে তাঁর নেতৃত্বে ভারত টেস্ট সিরিজ ০-১ হারার পর ওয়ান ডে সিরিজেও হারে ১-৪। “হারতে আমি ঘৃণা করি। কিন্তু ক্যাপ্টেন হিসাবে দলের জঘন্য পারফরম্যান্সের জন্য নিজেকে পুরোপুরি দায়ী মনে হয়েছিল। কী করলে দল ঘুরে দাঁড়াবে, বুঝতে পারছিলাম না। নিজের সবটুকু নিংড়ে চেষ্টা করছিলাম। আমার পক্ষে আর ০.১ শতাংশও দেওয়া সম্ভব ছিল কি না সন্দেহ,” লিখেছেন সচিন। অঞ্জলিকে নিজের আশঙ্কাগুলো খুলে বলেছিলেন। “ওকে বলি, মনে হয় না হারের বন্যা থামাতে পারব। পরপর খুব ক্লোজ কয়েকটা ম্যাচ হেরে মানসিক ভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত ছিলাম। ক্ষত এত গভীর ছিল যে, সারতে বহু দিন লেগে যায়। খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলাম।”

সফরে প্রথম দুই টেস্ট ড্র হয়। তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১২০-র জবাবে ভারত ৮১-তে গুঁড়িয়ে যায়। “সোমবার, ৩১ মার্চ ১৯৯৭, ভারতীয় ক্রিকেটের একটা কালা দিন এবং আমার ক্যাপ্টেন্সির সবচেয়ে অন্ধকার সময়,” লিখেছেন সচিন। অথচ জেতার ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বার্বেডোজের রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের সঙ্গে আগের দিন রাতে বাজি ধরেন, “অ্যামব্রোস বাউন্সার দিলে মেরে অ্যান্টিগা পাঠিয়ে দেব। তুমি বরং শ্যাম্পেনের বোতল ঠান্ডা করা শুরু করো। কাল জিতে নিজে বোতলটা খুলে তোমাকে খাওয়াব!” ৮১ অল আউট নিয়ে কারও দিকে আঙুল তুলতে নারাজ। বরং লিখেছেন, “আমি ৪ রানে আউট হয়ে যাই। বলটা হয় ছাড়া উচিত ছিল, নয় সপাটে মারা। কিন্তু খোঁচা মেরে ক্যাচ তুলে ফিরি। টেস্ট হেরে এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে দু’দিন হোটেলের ঘরবন্দি হয়ে ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করি।” সেই সিরিজেই সেন্ট ভিনসেন্টের ওয়ান ডে-তে হাতে ছ’উইকেট নিয়েও দশ ওভারে ৪৭ তুলতে না পারায় টিমের উপর অগ্নিমূর্তি হয়েছিলেন। ড্রেসিংরুমে তুলোধোনা করেন টিমকে। “পুরোপুরি মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম। বলি, জেতা ম্যাচ যারা এ ভাবে হারে সেই টিমের বড় ধরনের গোলমাল আছে!” সন্ধ্যায় অনিল কুম্বলে এবং জাভাগল শ্রীনাথ ঘরে গিয়ে তাঁকে বুঝিয়ে ঠান্ডা করেন। সচিন লিখেছেন, “অনিল আর শ্রীনাথ বোঝায়, এই ভুল থেকেই টিম শিখবে। কিন্তু ততক্ষণে চাপটা আমার কাছে দমবন্ধ করা হয়ে উঠেছিল।”

২০০১ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বল বিকৃতি পর্বও রয়েছে বইয়ে। “আমি জোচ্চোর নই। সারা জীবন সততার সঙ্গে খেলেছি। সে দিনও বুড়ো আঙুল দিয়ে সিমে লাগা ঘাস সরিয়েছিলাম।” সবচেয়ে অপমানিত হয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনেস তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়। “সফর ছেড়ে দেশে ফিরে আসতেও রাজি ছিলাম। কিন্তু ম্যাচ রেফারি ‘চিটিংবাজ’ অপবাদ দিয়ে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, সেটা মেনে নিইনি।” সচিন এ-ও লিখেছেন, “অবাঞ্ছিত ওই অধ্যায় এড়ানো যেত। কিন্তু ডেনেসের কারণে ক্রিকেট বিশ্ব দু’ভাগ হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE