Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কী সব বলছ তোমরা, প্রশ্ন করে ওঠেন অধিনায়ক

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের তদন্ত রিপোর্টে ওয়ার্নার-কে নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘কৃত্রিম ভাবে বলের আকার নষ্ট করার পরিকল্পনা গড়ে তুলেছিলেন তিনি’।

আগমন: সিডনি বিমানবন্দরে ওয়ার্নার। কাঁদছেন স্ত্রী। ছবি:গেটি ইমেজেস

আগমন: সিডনি বিমানবন্দরে ওয়ার্নার। কাঁদছেন স্ত্রী। ছবি:গেটি ইমেজেস

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

বল-বিকৃতি কাণ্ডে স্টিভ স্মিথদের নির্বাসন এবং তাঁদের কান্নায় ভেঙে পড়ার ছবি নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় আবেগের মধ্যেই নতুন কাহিনি বাজারে চলে এসেছে। আর সেই কাহিনি হচ্ছে, বল-বিকৃতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেওয়া হয়েছিল অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমে। এবং, আবারও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে স্মিথ নয়, ডেভিড ওয়ার্নার-কে। বলা হচ্ছে, বল-বিকৃতির পরিকল্পনা আসলে তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড যে তদন্ত করেছে, তার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে বল-বিকৃতির জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে শুধু ওয়ার্নার-কেই। বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা বাকি দু’জন, স্মিথ এবং ক্যামেরন ব্যানক্রফ্টের বিরুদ্ধে কিন্তু সরাসরি এই অভিযোগ আনা হয়নি। তাতেই আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বল-বিকৃতির অভিযানে পাণ্ডা ছিলেন বাঁ হাতি আক্রমণাত্মক ওপেনারই।

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের তদন্ত রিপোর্টে ওয়ার্নার-কে নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘কৃত্রিম ভাবে বলের আকার নষ্ট করার পরিকল্পনা গড়ে তুলেছিলেন তিনি’। সেখানে স্মিথ সম্পর্কে তদন্ত রিপোর্ট বলছে, ‘এমন একটা ঘটনা যে হতে চলেছে, সে সম্পর্কে জানতেন অধিনায়ক’। গোপন এই রিপোর্ট অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়ে গিয়েছে। তার পরেই গোটা দেশে ওয়ার্নার-কে নিয়ে ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে।

আইসিসি বিধান অনুযায়ী, অধিনায়ক স্মিথ এক টেস্টের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন। সঙ্গে ম্যাচ ফি-র একশো শতাংশ জরিমানা হয়েছিল। যিনি নিজে হাতে শিরিস কাগজ দিয়ে বল-বিকৃতি ঘটিয়েছিলেন, সেই ব্যানক্রফ্টের শুধুই জরিমানা হয়েছিল। কোনও নির্বাসনই দেয়নি আইসিসি। আর ওয়ার্নারের না হয়েছিল নির্বাসন, না হয়েছিল আর্থিক জরিমানা। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে ‘প্রতারণা’-র দায়ে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মুখে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের মতো তিন জনের জন্যই শাস্তি ঘোষণা করেছে। স্মিথ এবং ওয়ার্নার-কে তারা নির্বাসিত করেছে এক বছরের জন্য, ব্যানক্রফ্টের নির্বাসন হয়েছে ন’মাসের। ওয়ার্নার এবং স্মিথের একই শাস্তি হলেও অস্ট্রেলিয়ায় অধিনায়কের জন্য সহানুভূতির হাওয়া রয়েছে। সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নার-কে নিয়ে খুব একটা নরম মনোভাব কারও নেই।

ওয়ার্নার-ই যে বল-বিকৃতি কাণ্ডের পাণ্ডা, সেই ধারণাকে আরও উস্কে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার জিম ম্যাক্সওয়েল। তাঁর দেশের রেডিয়োতে ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘‘ওয়ার্নারের নেতৃত্বেই তৈরি হয়েছিল বল-বিকৃতির পরিকল্পনা। ড্রেসিংরুমে ব্যানক্রফ্টের সঙ্গে বসেছিল ওয়ার্নার। তখনই ওরা এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে।’’ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলে খুবই পরিচিত নাম ম্যাক্সওয়েল। অনেক দিন ধরে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। এখন তিনি এবিসি রেডিয়োতে রয়েছেন। তাই তিনি কোনও ভিতরকার কাহিনি বলা মানে সেটা ক্রিকেটভক্তরা বিশ্বাসও করেন। তিনি রেডিয়োতে ফাঁস করেছেন, ওয়ার্নার আর ব্যানক্রফ্ট যখন বল-বিকৃতি কী ভাবে ঘটাবেন তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন পাশেই বসে ছিল স্টিভ স্মিথ। দু’জনের দিকে তাকিয়ে স্মিথ নাকি প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমরা কী সব কথা বলছ? আমি জানতেও চাই না।’’ বলে স্মিথ মাঠে চলে যান। ম্যাক্সওয়েলের দাবি, ওয়ার্নারের নির্দেশেই এর পর পকেটে শিরিস কাগজ নিয়ে মাঠে যান ব্যানক্রফ্ট। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, স্মিথের উচিত ছিল আরও সতর্ক হওয়া। তা না করে তিনি ওয়ার্নারের হাতে ঘটনাটি ছেড়ে দিয়ে চলে যান মাঠে। এটাই তাঁর বড় ভুল।

ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে স্মিথ এবং ওয়ার্নারের সম্পর্ক নিয়েও। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহলে গোপন থাকছে না এই তথ্য যে, ওয়ার্নার-কে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল স্মিথের পক্ষে। এমনিতেই ওয়ার্নার (৩১) বয়সে স্মিথের (২৮) চেয়ে বড়। তা ছাড়া স্মিথের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রাসী ভঙ্গি ওয়ার্নারের। সব সময় তাই অধিনায়ক তাঁর সহ-অধিনায়ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না বলেই এখন ড্রেসিংরুম থেকে কাহিনি বেরোতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, স্মিথের উপর ওয়ার্নারই অতিরিক্ত কর্তৃত্ব ফলাতেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে স্পষ্ট করেই লেখা হয়েছে যে, ড্রেসিংরুমে এক জন ক্রিকেটারের উপরেই কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না স্মিথের। তাঁর নাম ডেভিড ওয়ার্নার।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন টেস্ট স্পিনার গেভিন রবার্টসন আবার দাবি করেছেন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডেরই কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই তারকা ক্রিকেটারদের উপর। বেশি শাসন করতে গেলে তাঁরা দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে বেড়াবে। আর্থিক দিক থেকে খুব ক্ষতি হবে না তাঁদের। আইপিএল এবং টি-টোয়েন্টি যুগে এখন কি আর তাহলে দেশের ক্রিকেট বোর্ডই হয়তো শেষ কথা নয়?

অস্ট্রেলিয়ার বল-বিকৃতি বিতর্ক এই প্রশ্নটাও হয়তো তুলে দিয়ে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE