Advertisement
০৫ মে ২০২৪

লি-র জেদ আর ঠিক সঙ্গী নিয়েই রূপকথা সানিয়ার

মার্টিনা হিঙ্গিসকে পার্টনার পেয়ে সানিয়া মির্জা, না লিয়েন্ডার পেজ— কার বেশি লাভ হয়েছে? সানিয়া-হিঙ্গিস জুটির ব্যাক-টু ব্যাক গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখে আমার মনে হচ্ছে, ‘সুইস ফ্যাক্টর’-এ হায়দরাবাদের মেয়ে বেশি লাভবান।

অপ্রতিরোধ্য

অপ্রতিরোধ্য

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

মার্টিনা হিঙ্গিসকে পার্টনার পেয়ে সানিয়া মির্জা, না লিয়েন্ডার পেজ— কার বেশি লাভ হয়েছে?

সানিয়া-হিঙ্গিস জুটির ব্যাক-টু ব্যাক গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখে আমার মনে হচ্ছে, ‘সুইস ফ্যাক্টর’-এ হায়দরাবাদের মেয়ে বেশি লাভবান। কলকাতার ছেলের চেয়ে। মাঝরাত্রী পেরিয়ে যাওয়ার পরে ফেডেরারদের ফাইনাল দেখতে বসেছিলাম কিন্তু সেটা বৃষ্টিতে পিছিয়ে যাওয়ায় সানিয়ার ম্যাচটাই মাথায় ঘুরছে।

উইম্বলডন জেতার তিন মাসের মধ্যে সানিয়া-হিঙ্গিস যুক্তরাষ্ট্র ওপেনও চ্যাম্পিয়ন হল। ফাইনালে ডেলাকুয়া-শেদোভাকে এক ঘণ্টার সামান্য বেশি সময়ে হারাল ৬-৩, ৬-৩।

লিয়েন্ডার মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হিঙ্গিসকে ছাড়াও সার্কিটের অনেক মেয়েকে নিয়ে খেলেই হয়েছে। সানিয়ার কিন্তু দু’টো গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস খেতাবের দু’টোই হিঙ্গিসের সঙ্গে।

আসলে হিঙ্গিসের খেলায় অনেক বৈচিত্র। শনিবার লিয়েন্ডারও যার সাহায্য পেয়েছিল মিক্সড ডাবলস ফাইনাল জেতার পথে। কিন্তু রবিবার টিভিতে মেয়েদের ডাবলস ফাইনালে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট দেখলাম, টেনিসে জুটির একে অন্যকে ‘কমপ্লিমেন্ট’ করা ঠিক কাকে বলে! মানে একে অন্যের প্রকৃত পরিপূরক হয়ে ওঠা!

সোনার সানিয়া

ডাবলস

উইম্বলডন ২০১৫ যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫

মিক্সড ডাবলস

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ২০০৯ ফরাসি ওপেন ২০১২ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ২০১৪

প্রথম ভারতীয়

মেয়ে হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন সিঙ্গলসে প্রথম তিরিশে ওঠা ডাবলসে শীর্ষ র‌্যাঙ্কিং

সানিয়ার ফোরহ্যান্ড বরাবরই দুর্ধর্ষ। ফোরহ্যান্ড টেনিসের সবসেরা উইনিং শট। এ দিনও সানিয়ার দু’টো অসাধারণ ফোরহ্যান্ড রিটার্ন ফাইনালের ‘ম্যাজিক মোমেন্ট’ তৈরি করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় সেটে ৪-২-এ হিঙ্গিসের সার্ভিস ভেঙে প্রতিপক্ষ যখন একটু হলেও ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেই মোক্ষম সময়ে সানিয়ার ওই অনবদ্য রিটার্ন।

এ ছাড়া ও ব্যাক কোর্ট থেকে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা খাওয়ানোর মতো একটা দুর্দান্ত ব্যাকহ্যান্ড লবও মেরে থাকে। হিঙ্গিসের আবার রিটার্ন, নেটের সামনে ভলি, রিফ্লেক্স দুরন্ত। এর পরে আর ওদের দু’জনের ফ্যান্টাস্টিক জুটি হয়ে উঠতে সমস্যা কীসের!

সানিয়ার যদি সার্ভিসটা বিশ্ব মানের হতো, আমি এখনও জোর দিয়ে বলতে পারি, ও ২০১৫-এ সিঙ্গলসে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে থাকত। গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হতো কি না জানি না। তবে যদি কব্জি, কাঁধ, হাঁটুর একের পর এক চোটের একটাও ওর কেরিয়ারে না ঘটত, তা হলে কে বলতে পারে সিঙ্গলসে অন্তত একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতত না?

মনে রাখতে হবে, ও সি‌ঙ্গলসে বিশ্বের প্রথম তিরিশে ঢুকে পড়েছিল এক যুগ আগে। তখন ওর বয়স কুড়ির ঘরেও পৌঁছয়নি। মানে বড় বড় অপারেশনের ধাক্কাগুলো যদি সানিয়ার পেশাদার কেরিয়ারের গোড়ার দিকে নেমে না আসত, তা হলে ওর সামনে সিঙ্গলসেও দেশের মেয়েদের টেনিস ইতিহাসে অবিশ্বাস্য কিছু করে ফেলার মতো সময় আর সুযোগ দু’টোই ছিল।

সানিয়ার সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটাই আসল। সানিয়ার এটা প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ডাবলস ট্রফি। আমার জন্য এখন যা জিতছি পুরোটাই বোনাস। এর আগেও এখানে ডাবলস জিতেছি। দুটো সময় আলাদা। এখন ভলিটা আরও ভাল মারছি।

মার্টিনা হিঙ্গিস

বছরটা আমাদের খুব ভাল যাচ্ছে। উইম্বলডন জেতা, র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠা। আমাদের জুটিটা সলিড। প্রত্যেকটা স্ল্যামেই আমরা জেতার জায়গায় চলে আসি। চাপটাও ভাল সামলাই। গত বছর এখানে মিক্সড ডাবলস জিতেছি। এ বার ডাবলস জেতায় দ্বিগুণ আনন্দ হচ্ছে।

সানিয়া মির্জা

ওই সময় সানিয়া সিঙ্গলসে কাকে না হারায়নি! ইউএস ওপেনে বার্তোলিকে হারিয়েছে। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বার্তোলি! দিনারা সাফিনা, কুজনেৎসোভা, জোনারেভা, আজারেঙ্কা এমনকী হিঙ্গিসের মতোও প্রাক্তন এক নম্বর হেরেছে সানিয়ার হাতে। ওই সময় ওকে আমি সি়ডনিতে টনি রোচের কাছে ট্রে্নিং নিতে যাওয়ার ব্যাপারে খানিকটা সাহায্য করেছিলাম। রোচ তখন ফেডেরারের কোচ। সিডনিতে সানিয়ার ফেডেরারের সঙ্গেও ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু!

লিয়েন্ডারের মতো সানিয়ারও আমি মনে করি সত্যিকারের দম আছে! নইলে বছর কয়েক আগে যে মেয়ে কব্জির চোটে টেনিস র‌্যাকেট তুলতেই পারত না, এমনকী চায়ের কাপ পর্যন্ত তোলার শক্তি ছিল না হাতে, সে-ই এখন টেনিসের একটা ইভেন্টে বিশ্বের এক নম্বর! নিজের ভেতর সাহস না থাকলে এটা কারও পক্ষে করে দেখানো সম্ভব নয়। লিয়েন্ডারের মতোই ও খুব বুদ্ধি করে কেরিয়ারের ঠিক সময়ে সিঙ্গলস ছেড়ে দিয়ে শুধু ডাবলস খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

আর এখন তো সানিয়া-হিঙ্গিসকে ‘শোলে’-র জয়-বীরু মনে হচ্ছে আমার! গব্বরকে জয়-বীরুর সেই ডায়লগ ‘তুই আমাদের এক জনকে মারলে আমরা তোর দু’জনকে মারব’-র মতোই বিপক্ষ সানিয়াদের একটা সার্ভ ব্রেক করলে ওরা সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা দু’টো ব্রেক করছে।

রবিবারই ফ্লাশিং মেডো যার জলজ্যান্ত সাক্ষী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE