সঞ্জয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালব্যাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে সৌরভ। মঙ্গলবার। ছবি: উৎপল সরকার
নিজের গানের প্রথম অ্যালবাম রিলিজের দিন লোকে ফুরফুরে থাকে, আনন্দে থাকে। আর সে যদি সুরের না হয়ে ক্রিকেটের মতো অন্য পৃথিবীর কেউ হয়, তা হলে ভাললাগা বোধহয় কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু জীবনের প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালবাম রিলিজের দিন যে সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে সুখানুভূতির সঙ্গে চোরা আক্ষেপেও ভুগতে হবে, কে জানত।
না, না, বিতর্কিত কিছু নয়। খারাপ কিছু ঘটেওনি আজ। সঞ্জয়ের আক্ষেপটা বড় মজার। এত দিন ধরে গান গাইছেন তিনি। ক্রিকেট-সার্কিট জানে, বাংলা গান গাওয়ায় কতটা দক্ষ তিনি। কিন্তু বঙ্গ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আইকন কি না কমেন্ট্রি বক্সে তাঁর গান শুনে-টুনেও ভাবলেশহীন মুখ করে থেকে যেতেন! ছেড়ে দিতেন স্রেফ একটা ‘হুম’ বলে?
আইকন মানে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!
দ্রুত মাইক কেড়ে সৌরভ বলতে শুরু করে দেন, তিনি যাঁদের সঙ্গে খেলতেন তাঁদের মধ্যে বীরু (সহবাগ) ডেলিভারির মাঝে গান গাইতেন ঠিকই। কিন্তু সেটা এতই জঘন্য হত যে, কহতব্য নয়! তার পর নামতেন রাহুল। লম্বা পার্টনারশিপেও ভাবলেশহীন থেকে যাওয়াটাই যাঁর পরিচয় ছিল। এর পর সচিন। টেনশন কমাতে যিনি বাংলা বলা শুরু করে দিতেন! এবং পুরোটাই ভুল বাংলা! সবার শেষে ভিভিএস। যাঁর স্নান করতে এত সময় লাগত যে, সৌরভের আশঙ্কাই হত শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদি নামতে পারবেন কি না! ‘‘এদের সঙ্গে থেকে ভাবলেশহীন থাকাটাই আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল,’’ বলতে থাকেন সৌরভ। বলে ফেলেন, ‘‘সঞ্জয়ের গানের সময় তাই ওটা আপনাআপনি হয়েছে!’’
রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটা অ্যালবাম রিলিজ। একজন নামী ক্রিকেটারের গলায়, এক দুঁদে ক্রিকেটারের উপস্থিতিতে। অনুষ্ঠানের আমেজ যে অন্য রকম হবে, আন্দাজ করা কঠিন ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবারের সিএবি-তে মঞ্জরেকর-অনুষ্ঠান কোথাও গিয়ে কল্পনাকেও ছাপিয়ে গেল। ক্রিকেটের সঙ্গে সুরের পৃথিবীর গাঁটছড়া বন্ধন তো ঘটলই, তার সঙ্গে জুড়ে থাকল প্রবল রসবোধও।
যেমন, মঞ্জরেকরকে অতর্কিত জিজ্ঞেস করা হল, এত ভাল গাইয়ে হয়েও কোনও দিন বীরেন্দ্র সহবাগের মতো গাইতে-গাইতে বোলার খেলেছেন কি না? এমনিতে প্রথম থেকে মুখচোখের মুগ্ধতা দেখে মনে হচ্ছিল, সঞ্জয় বোধহয় আবার টেস্ট ক্যাপ নতুন করে পেলেন! কিন্তু ও রকম হঠাৎ বাউন্সারে তাঁর বিখ্যাত ডিফেন্স কোথাও নড়ে গেল যেন। ‘‘আরে, না না। মাঠে খেলার সময় আমি খুব সিরিয়াস থাকতাম। হাসতামও না,’’ বলে ফেললেন সঞ্জয়। বলে জুড়ে দিলেন যে, নিজের ক্রিকেটজীবনে একজনকেই ব্যাটিংয়ের সময় গাইতে শুনেছিলেন। জাভেদ মিয়াঁদাদ। ‘‘ওর শততম টেস্টে। জাভেদ এত নার্ভাস ছিল যে, ক্রিজে আসার পর দেখলাম গান গাইছে! আমি ও সব পারিনি কখনও। পরে বীরু অবশ্য ব্যাট করার সময় কিশোর গাইত।’’
কিশোরকুমার— নামটা অবশ্য মঞ্জরেকররের জীবনেও প্রভাবশালী। প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান পরে বলছিলেন যে, কিশোর একটা বড় কারণ ‘বেলা যে যায়’ নামক রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালবামের পিছনে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন যার নির্দেশক এবং তাঁর কোম্পানি থেকেই সঞ্জয়ের অ্যালবাম প্রকাশ। আর সঞ্জয়ের কাছে তিনটের মধ্যে কোনটা কঠিন? ক্রিকেট? কমেন্ট্রি? নাকি রবীন্দ্রসঙ্গীত? ঝটিতি উত্তর আসে, ‘‘ক্রিকেট। ওখানে তো রিটেক হয় না।’’ এবং মরাঠির সুরের সাধনা, নতুন দিগন্তে প্রতিষ্ঠালাভের ইচ্ছে দেখলে গানটা মনে পড়ে যাবে। ’৮৯-এর পাকিস্তান সফরে সঞ্জয়ের ব্যাটিং দেখে যে গান বাঁধা হয়েছিল। পাকিস্তান কুড নট গেট সঞ্জয় আউট অ্যাট অল। নট অ্যাট অল।
কে বলতে পারে, সুরের বাইশ গজ সঞ্জয় মঞ্জরেকরের জীবনে গানটা আবার ফিরিয়ে দেবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy