মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মানে বিস্ময়। আগে আঁচ করা যাবে না, এমন সব ঘটনা। আর থরে থরে রোমাঞ্চ। ধোনির জীবন নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রও ব্যতিক্রম নয়। তাঁর ওপর তৈরি সিনেমা সম্ভবত তাঁর মূর্ত চরিত্রের মতোই নানান নাটকীয় এবং অভাবনীয় ঘটনা তৈরি করতে যাচ্ছে!
ধোনি মানেই এক্সট্রা লার্জ সব কিছু। সেটা বিনোদন হোক কী বিস্ময়। এ ক্ষেত্রেও তাই। শাহরুখ-আমির-সলমনদের ছবি যে ভাবে একসঙ্গে বিশ্বের একশোরও ওপর প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ হয়। তাঁদের ছবি যেমন বড় বাজেটের থাকে। ধোনিও তাই।
‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবির নির্মাতা এবং মুখ্য চরিত্রের প্রথম উদ্দেশ্যই হল, ছবিকে জাতীয় বাজারে আটকে রেখো না। বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দাও।
ছবির প্রযোজক হলেন ধোনির ম্যানেজার। সে দিক দিয়ে এক হিসেবে এটা ধোনির নিজেরই প্রযোজনা। তা প্রযোজকের সঙ্গে রোববার পুণেতে কথা বলে মনে হল, তাঁরা ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ জাতীয় ক্রীড়াবিদের জীবনের ওপর তৈরি চলচ্চিত্রকে বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী করে দিতে চান। চান ধোনি ছবিটা এমন হোক যে, তার পরে আর ক্রীড়াবিদের ওপর কোনও ছবি তুলনীয় বলে মনেই হবে না।
জানা গেল যে, শুধু ছবির জন্য ধোনির খেলা নানান ম্যাচের ক্লিপিংস স্বত্ব কিনতেই খরচ হয়েছে বাইশ কোটি টাকা! সওয়া দু’ঘণ্টার ছবিতে ২৪ মিনিট থাকবে সত্যিকারের ক্রিকেট অ্যাকশন। টিম ইন্ডিয়ায় খেলা ধোনির অমর সব ম্যাচ। যেখানে ধোনির সতীর্থরা সবাই থাকবেন নিজের চেহারায়। শুধু ধোনির বদলে সুপারইম্পোজ করা হয়েছে ছবির নায়ক সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে।
এই ছবির শুরু নব্বই দশকের রাঁচিতে। শেষ দু’হাজার এগারোর দোসরা এপ্রিল।
‘ভাগ মিলখা ভাগ’-এর জন্য ফারহান আখতার কেমন কষ্টসাধ্য ট্রেনিং করেছিলেন, বলায় এমএস ধোনির ছবির প্রযোজক মুচকি হাসেন। বলেন, ‘‘সুশান্ত সিংহ রাজপুত এক বছর উইকেটকিপিং প্র্যাকটিস করেছে জানেন? কিরণ মোরেকে আমরা ওর কোচ রেখেছিলাম। টানা তিন মাস বান্দ্রার ময়দানে সুশান্ত কিপিং প্র্যাকটিস করেছে। ছ’মাস ধরে ধোনির সঙ্গে আমরা ওকে ঘুরিয়েছি, শুধু ধোনির অনুশীলন দেখার জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন ক্রিকেট মাঠে ছবির শুটিংয়ের জন্য আমরা সুশান্তকে নিয়ে গেছি। কলকাতাতেও এনেছিলাম। ধোনির সঙ্গে অনেক বার ওর সিটিং করানো হয়েছে। ধোনি কী ভাবে কথা বলে, কী ভাবে হাঁটে, সব কিছু যাতে হুবহু নকল করতে পারে। সবচেয়ে জরুরি যেটা ছিল, ধোনি যেমন অন্য রকম ভাবে, সুশান্তের ভাবনার মধ্যেও যেন অভিনবত্ব থাকে। শুধু সুশান্তের ট্রেনিংয়ের জন্য আমরা দেড় কোটি টাকা খরচ করেছি।’’
পাওয়ার হিটার ধোনির মতো ব্যাটিং প্র্যাকটিস করানো হয়েছে সুশান্তকে। এত গভীর ভাবে যে, ধোনির ট্রেডমার্ক হেলিকপ্টার শটটা এখন তিনিও মারতে পারেন!
২ সেপ্টেম্বরে পর্দায় আসছেন ধোনি। তার আগে ইউটিউবে ছবির ট্রেলারের প্রায় পঁয়তাল্লিশ লক্ষ ‘ভিউ’ এবং তেত্রিশ হাজারেরও বেশি ‘লাইক’ দেখে প্রযোজকরা উৎসাহিত। তাঁরা মনে করেন, এটা কিছুই নয়।
রাঁচি থেকে ছবির কাহিনি শুরু। ওয়াংখেড়ে দিয়ে শেষ। একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশন, যেখানে ধোনি টিকিট কালেক্টরি করতেন। দেখানো হয়েছে ঔরঙ্গাবাদ। যে শহরকে ঘিরে ধোনি এবং সাক্ষীর নাকি নানান স্মৃতি রয়েছে। ধোনির স্ত্রী সাক্ষীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিয়ারা আডবাণী।
মিডিয়ার প্রতি ভারত অধিনায়কের বিখ্যাত বিদ্বেষ কি ছবিতে থাকবে? গড়াপেটা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লেখালিখি? প্রযোজক অরুণ পাণ্ডে বললেন, ‘‘ও সব কিছু নেই। আমরা সিম্পল একটা কাহিনি বলতে চেয়েছি। যে, উচ্চাকাঙ্খা থাকলে আর সৎ ভাবে পরিশ্রম করলে ছোট শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কোনও সন্তানও তার স্বপ্নের চুড়োয় পৌঁছতে পারে। এই ফিল্মের সেটাই মেসেজ। আমরা চাই এই ছবিটা দেখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তথাকথিত কঠিন আপব্রিঙ্গিংয়ে বড় হয়ে ওঠা তরুণরা যেন উজ্জীবত হয় যে, এই লোকটা পেরেছে। আমিও পারব।’’
ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন বলিউডের বিখ্যাত লিখিয়ে নন্দু কামতে। তার ওপর একপ্রস্ত ঘষামাজা করেন নীরজ পাণ্ডে। এর পর গোটা চিত্রনাট্য ধোনিকে পাঠানো হয়। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার সংশোধন করেন। শেষ পর্যন্ত মত দিলেই শ্যুটিং শুরু হয়।
অরুণ পাণ্ডে বলছিলেন, ‘‘এমএস-কে আপনারা এত দিন মাঠে দেখেছেন। এই প্রথম ওর রক্তমাংসের কাহিনি জানবে গোটা দুনিয়া। অনেক সব অন্তরালের ঘটনা যা আপনারা জানেনই না। বাজেট নিয়ে তাই ভাবিনি। চেয়েছি তরুণদের উদ্দীপ্ত করতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy