Advertisement
০১ মে ২০২৪

সঞ্জয়ের নোটস নিয়ে তৈরি হচ্ছেন পুনর্জন্মের শঙ্কর

১৯৯৭। কলকাতা লিগ। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। চিমা ওকোরির ট্যাকলটা আজও মনে আছে তাঁর। শিনবোন ভাঙার যন্ত্রণা যেন অনুভব করতে পারেন আজও। এক বছরে ফিরেছিলেন, কিন্তু ফুটবল কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি।

নিজের বাড়িতে শঙ্করলাল চক্রবর্তী। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

নিজের বাড়িতে শঙ্করলাল চক্রবর্তী। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সোহম দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৯
Share: Save:

১৯৯৭। কলকাতা লিগ। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান।

চিমা ওকোরির ট্যাকলটা আজও মনে আছে তাঁর। শিনবোন ভাঙার যন্ত্রণা যেন অনুভব করতে পারেন আজও। এক বছরে ফিরেছিলেন, কিন্তু ফুটবল কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি। আবার চোট, আবারও একই জায়গায়। ২০০১-এ শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। দেখতে হয়েছিল, স্বপ্নের মৃত্যু। দেখতে হয়েছিল, এত দিন ধরে যত্নে লালিত বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শঙ্করলাল চক্রবর্তী শুধু জেদটা ছাড়েননি।

ছাড়েননি বলেই হয়তো আজ তিনি এখানে। এক অভিনব ফুটবল-বৃত্তের সমাপ্তির সামনে। এক ডার্বি পা থেকে ফুটবল কেড়ে নিয়েছিল। আর এক ডার্বি এ বার তাঁর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য মঞ্চ। যদি ডার্বি হয় শেষ পর্যন্ত, মোহনবাগান ডাগআউটে শঙ্করলাল চক্রবর্তীই তো থাকবেন কোচ হিসেবে। কলকাতা লিগে তাঁকেই কোচ করেছে মোহনবাগান।

রবিবার সিঁথির মোড়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরপর ট্রফি রাখা। বিভিন্ন ছবি। প্রয়াত অমল দত্তের বিখ্যাত ডায়মন্ড ম্যাচের ছবিও আছে। স্মৃতি—তারও মৃত্যু হয়নি। পুরনো দিনের কথা বলতে গেলে গলা ভারী হয়ে আসে। বলছিলেন, ‘‘ওই সময়টা ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারও সঙ্গে আলোচনা করতাম না। শুধু ভাবতাম, এত দিনের খাটনির কোনও দাম পেলাম না।’’ কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ভাবতেন না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত শঙ্করলালের দৈনন্দিন রুটিন ছিল অফিস থেকে বাড়ি। বাড়ি থেকে অফিস। লোকজনকে বলতে শুনতেন, ‘আরে তুমিই শঙ্করলাল, তোমারই চোটে ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছিল না?’ শুনতেন আর হাঁফিয়ে উঠতেন। কোচিংয়ে আসার পরিকল্পনাও ছিল না একটা সময় পর্যন্ত। কিন্তু ফুটবল-পাগল স্ত্রী পৌলমীর আবদারে ২০০৭ সালে ‘সি’ লাইসেন্স কোচিং সার্টিফিকেট নেন তিনি।

এক বছরের মধ্যে কোনও এক পেপ গুয়ার্দিওলার প্রভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কাছাকাছি সময়ে পেপও তিকিতাকায় আচ্ছন্ন করতে শুরু করেছেন ইউরোপকে। গুয়ার্দিওলাকে ‘দীক্ষাগুরু’ বানিয়ে বঙ্গসন্তান ঠিক করেন, তাঁকেও পুরোদমে কোচিংয়ে আসতে হবে। কোচিং-পাঠে সম্পূর্ণ শিক্ষিত করতে হবে নিজেকে।

সঞ্জয় সেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ-পর্বটাও বেশ নাটকীয়। বলা ভাল, শঙ্কর ‘এ’ লাইসেন্স পরীক্ষা পাশই করেন সঞ্জয় সেনের থেকে নোটস ধার নিয়ে! হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘সঞ্জয়দার থেকে নোটস ধার নিয়েছিলাম। এখন টিপসও ধার নিই। সঞ্জয়দার থেকে শিখেছি এক জন নয়, এগারোর উপর ভরসা করতে হয়। এখনও প্রতিটা ম্যাচের আগে ওঁর সঙ্গে কথা বলি। আলোচনা করি দল নিয়ে। ডার্বি নিয়ে তো অবশ্যই।’’ সঞ্জয় সেনের হটসিটে বসাও তাঁর জীবনে নতুন নয়। আই লিগে শেষ ডার্বিতে সঞ্জয় সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ায় কেয়ারটেকার কোচ ছিলেন শঙ্করলাল। এ বার গোটা কলকাতা লিগে তিনি একক কোচ। যে লিগ গত ছ’বছরে জিততে পারেনি সবুজ-মেরুন।

এ বার হবে? ডার্বি জিতে এগনো যাবে অধরা স্বপ্নের দিকে? ভাবলে চাপ লাগে না? ‘‘চাপ কখন ছিল না? দু’বার চোট পেলাম যখন, চাপ কম ছিল না। জীবন মানেই চাপ। নিজেকে নিয়ে ভাবছি না। আমাকে দেখতে হবে প্লেয়ারদের চাপ কী ভাবে কাটানো যায়,’’ বলেন কলকাতা লিগের বাগান কোচ। ডু ডং— তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু মাথায় তুলছেন না। বললেন, ‘‘সেট পিসে মারাত্মক। বল কন্ট্রোলও ভাল। ইস্টবেঙ্গল ভাল ফর্মে। কিন্তু আমরাও খারাপ কোথায় খেলছি?’’

বোঝা গেল, মরসুমের প্রথম ডার্বি, দু’পক্ষের সমর্থকদের যুদ্ধ ঘিরে হিংস্র তর্জন-গর্জন, প্রায় হানাহানির পর্যায়ে চলে যাওয়া এক ফুটবল-যুদ্ধ কোনও কিছুই অশান্ত, উত্তেজিত করতে পারছে না শঙ্করকে। বরং তিনি যেন শান্ত ভাবে অপেক্ষা করছেন। প্রহর গুনছেন এক নতুন সূচনার। শিনবোন ভেঙে ইস্টবেঙ্গলে যে স্বপ্নটা শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেই স্বপ্নের পুনর্জন্মের।

ইস্টবেঙ্গল নয়। মোহনবাগানের হাত ধরে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Mohunbagan Derby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE