Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বারো মাস টাকা না পেয়েও কোচিং করিয়েছিলেন শাস্ত্রী

ড্রেসিংরুমে স্থিরতা ফেরত চান বিরাট কোহালি

এক জন বিদায় নিয়েছেন। অন্য জন তাঁর পরিবর্ত হিসেবে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য ফেভারিট। কেন অনিল কুম্বলে সমর্থন হারিয়ে ফেললেন, কেন রবি শাস্ত্রীকে ফেরত চাইছে ভারতীয় দল এবং বোর্ড, নানা তথ্য দিয়ে তুলে ধরল আনন্দবাজার।ভারতীয় দলের দায়িত্বে থাকাকালীন বারো মাসের উপর কোনও পেমেন্ট পাননি শাস্ত্রী। বোর্ডের সঙ্গে ছিল না কোনও লিখিত চুক্তিও। মহারাষ্ট্রের অজয় শিরকে বোর্ড সচিব হয়ে আসার পরে প্রথম নজর করেন, শাস্ত্রীকে কোনও টাকাই দেওয়া হয়নি।

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

আর্থিক চুক্তি নিয়ে বিবাদ: ভারতীয় দলের দায়িত্বে থাকাকালীন বারো মাসের উপর কোনও পেমেন্ট পাননি শাস্ত্রী। বোর্ডের সঙ্গে ছিল না কোনও লিখিত চুক্তিও। মহারাষ্ট্রের অজয় শিরকে বোর্ড সচিব হয়ে আসার পরে প্রথম নজর করেন, শাস্ত্রীকে কোনও টাকাই দেওয়া হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোনে ধরেন শাস্ত্রীকে। জিজ্ঞেস করেন, তুমি কাউকে জানাওনি কেন যে, কোনও পেমেন্ট পাওনি? শাস্ত্রীর জবাব ছিল, ‘‘আমি জাতীয় ক্রিকেট দল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বোর্ড নিশ্চয়ই আমার প্রাপ্য টাকা মেরে দেবে না!’’ এমন কোনও অভিজ্ঞতা কুম্বলেকে নিয়ে হয়নি বোর্ড কর্তাদের। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌স যে কুম্বলেকে নিয়ে খুব প্রসন্ন ছিল না, তার অন্যতম কারণও আর্থিক চুক্তি। এমনই এক নকশা কুম্বলে জমা দিয়েছিলেন, যাতে বোনাস এবং অন্যান্য সুবিধে মিলিয়ে আনুমানিক দশ থেকে এগারো কোটি টাকা দিতে হতো শুধু কোচকেই। প্রথম সারির ক্রিকেটারদের চেয়েও যা বেশি। অনেকেরই তাই বোধোদয় হচ্ছে, শাস্ত্রীকে সরিয়ে ‘উচ্চ চাহিদা থাকা’ কুম্বলেকে আনা ভুল হয়েছিল।

স্থিরতা নেই ড্রেসিংরুমে: অধিনায়ক বিরাট কোহালি ভারতীয় বোর্ডের কর্তাদের কাছে কুম্বলের ‘কাজের পদ্ধতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর মানে কী? খোঁজ করতে গিয়ে আনন্দবাজার জেনেছে যে, দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছিল কুম্বলের কর্মপদ্ধতিতে। অতিরিক্ত বকাঝকা (কখনও কখনও শাসানির পর্যায়ে পৌঁছচ্ছিল বলে অভিযোগ) আর কোনও কিছুতেই প্রশংসা না পেয়ে ক্রিকেটারেরা ক্রমশ হতাশ, হতোদ্যম হয়ে পড়ছিলেন। ম্যাচ চলাকালীন মাঠের মধ্যে ঘন-ঘন নির্দেশ যাচ্ছিল অধিনায়কের জন্য। বিরক্ত কোহালি দু’তিন বার ‘বার্তাবাহক’-কে সাইডলাইনের ধার থেকেই বিদায় করেছিলেন বলে খবর।

‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর মন্ত্র: অধিনায়ক হিসেবে কোহালি খুব বড় ফ্যান মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। তিনি মনে করেন, ধোনি যে ভাবে ভারতীয় দলকে পরিচালনা করেছেন, সেটাই আদর্শ মডেল। বিশেষ করে ধোনির শান্ত, ধীরস্থির, নিয়ন্ত্রিত ভঙ্গি খুবই পছন্দ কোহালির। যেটা অনেকের কাছে আশ্চর্যের মনে হতে পারে কারণ, চরিত্র হিসেবে কোহালি একেবারে ধোনির বিপরীত ছিলেন। ধোনি যতটা ঠান্ডা মেজাজের, কোহালি ঠিক ততটাই আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক এবং চটপটে ধরনের। আবেগকে প্রকাশ করতে ভালবাসতেন। কিন্তু সে সব এখন অতীত। অধিনায়ক কোহালি এখন খোঁজেন ধোনির স্থিরতা। কুম্বলের আমলে পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠছিল।

বকাঝকায় আত্মবিশ্বাসে চিড়: কোহালিরা মনে করছিলেন, কুম্বলের কর্মপদ্ধতিতে দলের সার্বিক আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরছিল। মাঠের মধ্যে কোনও ক্রিকেটার খারাপ কিছু করলেও কম্পিউটারের সামনে বসে অস্থির হয়ে পড়তেন কোচ। সেই ক্রিকেটার সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করে বসতেন। আশেপাশে থাকা অন্যান্যরা প্রভাবিত হয়ে পড়ছিলেন। দলের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়, মাঠের মধ্যে থাকলেও কোচের তোপের হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই।

আরও পড়ুন:

বিশ্বকাপে স্বপ্নের দৌড় চালিয়ে যেতে চান স্মৃতি

গলের হার এবং শাস্ত্রীয় মত: শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে গলের প্রথম টেস্টে নিশ্চিত জয়ের মুখ থেকে হারে কোহালির ভারত। টিমের ডিরেক্টর তখন রবি শাস্ত্রী। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমেই মিটিং ডাকেন তিনি। উত্তেজিত ভাবে কাউকে বকাঝকা করেননি, প্রত্যেক সদস্যকে বক্তব্য রাখতে বলেন হার নিয়ে। আর্জি জানান যে, এই হারের পোস্টমর্টেম এখানেই করে হোটেলের ঘরে ফিরব। কোহালিরা সকলে মিলে সে দিন আড়াই ঘণ্টা ধরে গলের ড্রেসিংরুমেই বসেছিলেন। সিরিজে ফিরে আসার শপথ নিয়ে তবেই তাঁরা ফিরে যান হোটেলে। হোটেলে ফিরে আরও চমক অপেক্ষা করে ছিল তাঁদের জন্য। ডিরেক্টর নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে তাঁদের জন্য ‘গেট টুগেদার’-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। যাতে গলের হারকে মাথা থেকে তৎক্ষণাৎ হঠিয়ে দেওয়া যায়। বাকিটা ইতিহাস। কোহালিরা বাকি দু’টি টেস্ট জিতে বাইশ বছর পরে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতেন।

ওভালে কুম্বলে বনাম কোহালি: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পরে কোচ যে বক্তব্য রাখেন, সেটাই তাঁর পতন নিশ্চিত করে তুলল। যশপ্রীত বুমরার ‘নো বল’, রোহিত শর্মার আউট নিয়ে কোচ খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন বলে শোনা যায়। ক্ষুব্ধ কোহালি এর পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঠিক উল্টো সুরে কথা বললেন। গোটা টুর্নামেন্টে ভাল খেলার জন্য প্রশংসা করে দলকে বলতে থাকেন, বন্ধুরা আমরা ফাইনাল হেরেছি ঠিকই। কিন্তু যে লড়াই সকলে দেখিয়েছ, তার জন্য অধিনায়ক হিসেবে আমি গর্বিত। আজকের দিনটা খারাপ গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ছেলেরা মাথা উঁচু করে ড্রেসিংরুম থেকে বেরোবে।

ওভালের সেই হারের মঞ্চেই সে দিন কোচের বিদায়ের ঘণ্টা আরও জোরে বাজতে শুরু করে দিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE