Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাংলার কোচ-ক্যাপ্টেনকে নিয়ে এক রাশ প্রশ্ন

টিমে অভিনবত্বের অভাব। প্রয়োজনের সময় সাহস না দেখিয়ে বাঁধাধরা গতে চলতে চাওয়া। গোটা মরসুম ধরে সমগ্র ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে নিজেদের পেশ করতে ব্যর্থ। এক বা দু’জনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

টিমে অভিনবত্বের অভাব। প্রয়োজনের সময় সাহস না দেখিয়ে বাঁধাধরা গতে চলতে চাওয়া।

গোটা মরসুম ধরে সমগ্র ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে নিজেদের পেশ করতে ব্যর্থ। এক বা দু’জনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা।

অদ্ভুত-অদ্ভুত সিদ্ধান্তে সেট টিম তৈরির বারোটা। প্রজ্ঞান ওঝাকে টানা খেলানো, খারাপ পারফর্ম করতে দেখেও। কখনও কখনও দু’ইনিংস মিলিয়ে যাঁকে এক ওভারও দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলার আরও একটা রঞ্জি অভিযান শেষ হল। অভিযান না বলে বলা উচিত আরও একটা বিপর্যস্ত অভিযান। যেখানে দারুণ শুরু করেও লাভ হল না। বরং বঙ্গ ক্রিকেট সংসারকে বরাবরের মতো পুড়তে হল বিতর্ক আর ক্ষোভের আগুনে।

উপরের তিন অনুচ্ছেদ তো বটেই, আরও আনুষাঙ্গিক আছে। যেমন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে প্রশ্ন। কোচ সাইরাজ বাহুতুলে নিয়ে উষ্মা। টিমের সেরা স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝাকে নিয়ে অসূয়া।

বাংলার নির্বাচক কমিটির একাংশ বলছে। সিএবি-র কেউ কেউ বলছেন। বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত— তাঁরাও একেবারে বাদ নন। তফাতের মধ্যে কেউ কেউ চাঁছাছোলা বলছেন, কেউ ঢেকেঢুকে।

নির্বাচক কমিটির একটা অংশ হতাশ। এঁদের বক্তব্য, ব্যাটসম্যান মনোজ যতটা ভাল, অধিনায়ক মনোজ নন। নির্দিষ্ট ছকের বাইরে নাকি বেরোতে চান না। অভিমন্যু ঈশ্বরন প্রথম দিকে ভাল করছিলেন। কিন্তু পরের দিকে ওপেনিংয়ে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তাঁকে ওপেনিংয়ে রেখে দিয়েছেন। ব্যাটিং অর্ডারে নামাননি। নির্বাচকদের বলে সেটা করাতে হয়েছে।

অধিনায়কের ‘কিলার ইন্সটিংক্ট’ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে, তামিলনাড়ু-মুম্বইয়ের মতো ম্যাচে বিপক্ষকে সুবিধেজনক অবস্থায় পেয়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। কখনও শেষ উইকেটে চল্লিশ তুলে দিয়েছে প্রতিপক্ষ, বাংলার লিডের আশা শেষ করে। মুম্বইকে তো শেষ দিন নিশ্চিত হারের দিকে ঠেলে দিয়েও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হয়েছে।

বোলার-নির্বাচনে ফাঁকফোকর দেখছেন অনেকে। অমিত কুইলা, সায়ন ঘোষের মতো পেসারের উদাহরণ পেশ করে বলা হচ্ছে, এঁরা পারফর্ম করেও অদ্ভুত ভাবে বাদ পড়েছেন। অমিত পাঁচ ম্যাচে ২০ উইকেট পেয়েছেন। অশোক দিন্দার পরেই। পরিণাম— বাদ। সায়ন ঘোষ ৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট। পরিণাম— টিমে অনিয়মিত। কিন্তু প্রজ্ঞান ঠিক খেলে গিয়েছেন। ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট, তবু। লাহলিতে বরোদা ম্যাচে দু’ইনিংস মিলিয়ে এক ওভারও দেওয়া যায়নি, তবু! বলা হচ্ছে, বাঁ হাতি স্পিনারের মধ্যে প্রদীপ্ত প্রামাণিক না হয় চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু অনুরাগ তিওয়ারি ছিলেন। ভাল করছিলেন। ডেকে নেওয়া তো যেতেই পারত।

অধিনায়ককে কেউ কেউ তবু ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিতে চান। বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ বললেন, অধিনায়ক মনোজের এখনও কোনও পরিবর্ত নেই। ব্যাটিংয়ের গুরুভার এ বছর সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁকে সামলাতে হয়েছে। আর বোলার নির্বাচনের দায় পুরো মনোজের উপর চাপানো অন্যায়। এটা বুঝতে হবে যে, কুইলা বা সায়ন টানা আটটা রঞ্জি ম্যাচ খেলার ফিটনেস রাখেন না। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাঁদের খেলাতে হয়।

সাইরাজ বা প্রজ্ঞান— তাঁরা অধিনায়কের মতো এতটা ছাড় পাচ্ছেন না। বাংলা কোচ নিয়ে কারও কারও বক্তব্য— সাইরাজ টিমে প্র্যাকটিস সংস্কৃতিটা ভাল রেখেছেন। পূর্ব জমানায় যা অদৃশ্য ছিল। কিন্তু তার বাইরে পুরোটাই নাকি কোনও কোনও সিনিয়রের সঙ্গে ‘প্রগাঢ় বন্ধুত্ব’ আর জুনিয়দের ‘দাবড়ানির’ স্ট্র্যাটেজি! এমনও বলা হল, দু’বছরেও বাংলার ক্রিকেটকে চেনেনি সাইরাজ। অনূর্ধ্ব উনিশ টিম সম্পর্কে বলতে পারবেন না। নতুন ছেলের মূল্যায়ন করবেন কী করে তিনি? অভিযোগের সর্বশেষ নিশানা— প্রজ্ঞান ওঝা। যিনি স্থানীয় ক্রিকেট খেলেন না। শুধু রঞ্জি খেলতে আসেন। এক নির্বাচক দাবি করলেন, বিজয় হাজারে ট্রফিতে ওঝার বদলে অনুরাগ বা প্রদীপ্তর মতো কেউ না ঢুকলে বৈঠকে তিনি যা করার করবেন!

সাইরাজ-প্রজ্ঞানকে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ সব অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না। সাইরাজ শুধু বললেন যে, যাবতীয় অভিযোগ তাঁর কানে এসেছে। আগামী সপ্তাহে কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে বৈঠকে বসছে সিএবি। যেখানে নির্বাচনী পদ্ধতি থেকে শুরু করে যা যা আগুনে প্রশ্ন আছে, উঠবে। শোনা গেল, সাইরাজ এখনই যাচ্ছেন না। কিন্তু প্রজ্ঞানের অদূর ভবিষ্যৎ সংশয়মুক্ত নয়।

দেখা যাক, কী হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal CAB Coach Captain Pragyan Ojha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE