Advertisement
E-Paper

আমার চেনা ব্রেন্ডন বাচ্চা ছেলে, খেলতে পেলেই খুশি

সকাল থেকে ফিফা ইন্সপেকশনের কাজে ঘুরছি। তার মধ্যে প্রচুর ফোন আসছে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম নিয়ে। লোকে জিজ্ঞেস করছে, জীবনের শেষ টেস্টেও এতটা বিধ্বংসী, এতটা বেপরোয়া ইনিংস ও খেলতে পারল কী করে? কলকাতা নাইট রাইডার্সে আমার কাটানো সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছর ম্যাকালামকে পেয়েছি। ওকে কাছ থেকে দেখেছি। ওর আজকের ইনিংসে তাই আমি একটুও অবাক হইনি। ব্রেন্ডন তো এ রকমই।

জয় ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২১

সকাল থেকে ফিফা ইন্সপেকশনের কাজে ঘুরছি। তার মধ্যে প্রচুর ফোন আসছে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম নিয়ে। লোকে জিজ্ঞেস করছে, জীবনের শেষ টেস্টেও এতটা বিধ্বংসী, এতটা বেপরোয়া ইনিংস ও খেলতে পারল কী করে? কলকাতা নাইট রাইডার্সে আমার কাটানো সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছর ম্যাকালামকে পেয়েছি। ওকে কাছ থেকে দেখেছি। ওর আজকের ইনিংসে তাই আমি একটুও অবাক হইনি। ব্রেন্ডন তো এ রকমই।

ম্যাকালামকে যে বছর ক্যাপ্টেন করা হল, সে বার ওর চরিত্রের একটা বড় দিক দেখতে পেয়েছিলাম। ওর সামনে যদি দুটো বিকল্প থাকে, একটা সামনে এগনোর আর অন্যটা পিছিয়ে যাওয়ার, তা হলে ও যে কোনও মূল্যে এগিয়ে যাওয়াটা বেছে নিত। তা সে রাস্তায় যত ঝুঁকিই থাকুক না কেন। সে বার কেকেআর পরপর ন’টা ম্যাচ হেরে গেল। টিমের কেউ কেউ তখন ওকে বলেছিল, তোমাকে সাংবাদিক সম্মেলনে যেতে হবে না। অন্য কাউকে পাঠিয়ে দাও না। ব্রেন্ডন কিন্তু শোনেনি। বলেছে, আমি যখন টিমের অধিনায়ক, হারের দায়টা আমাকেই নিতে হবে। আমি কেন অন্য কাউকে ফায়ারিং লাইনে পাঠিয়ে দেব? এই যে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে ও এত সফল, আমার মনে হয় তার শুরুটা হয়েছিল কেকেআরেই।

যে বার আমরা প্রথম আইপিএল জিতলাম, সেই ফাইনালে ব্রেন্ডনকে খেলানো যায়নি। চোট পাওয়া বালাজির জায়গায় খেলল ব্রেট লি। আর ম্যাকালামের বদলে মনবিন্দর বিসলা। ওর মতো তারকা প্লেয়ারকে যে প্রথম ট্রফি জয় ডাগআউটে বসে দেখতে হল, তার জন্য এতটুকু রাগ বা বিরক্তি ওর মধ্যে দেখিনি। টিম জিতেছে, ওর কাছে সেটাই অনেক বড় ব্যাপার।

তাই বলে ভাববেন না ম্যাকালাম রাগে না। রাগে, ক্রিজে কোনও কিছু ওর মনমতো না হলে। দশ মিনিটের মধ্যে সেই রাগ ভুলে আবার হাসতেও থাকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে কোন একটা ম্যাচে ওকে আম্পায়ার হয়তো ভুল আউট দিয়েছিলেন। ডাগআউটে ফেরার সময় আম্পায়ারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ম্যাকালাম শুধু বলেছিল, আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি আর কোনও দিন এ রকম জঘন্য সিদ্ধান্ত নেবেন না!

শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা ব্রেন্ডনের যা দেখেছি, অবাক হওয়ার মতো। একবার আমাদের চোখের সামনে ওর হাতের চোটে প্রচুর সেলাই পড়ল। দেখে আমাদেরই ভয় করছিল। অথচ ওর মুখ দেখে কে বলবে, কত যন্ত্রণায় রয়েছে। মানসিক ভাবেও প্রচণ্ড কঠিন ও। ক্রাইস্টচার্চে পাঁচ বছর আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে অনেকে ওকে বলেছে, ওখানে আর থেকো না। ও সে সবে কান দেয়নি। বলেছে, ওখানে আমার জন্ম। মা-বাবা ওখানে। জীবনেও ক্রাইস্টচার্চ ছাড়তে পারব না।

মাঠে ওকে যত আগ্রাসী, যত খুনে লাগুক না কেন, মানুষ ম্যাকালামের হৃদয়টা খুব বড়। পেশাদার প্লেয়াররা টিম পাল্টালে পুরনো ক্লাবের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। ও কিন্তু কোচিতে খেলার সময়ও আমাকে বন্ধু হিসেবে দেখেছে, কথা বলেছে। ওকে যতটুকু চিনেছি, মনে হয়েছে ওর মধ্যে কোনও মারপ্যাঁচ নেই। মনে হয়েছে এ তো একটা বাচ্চা ছেলে। যাকে খেলতে দিলেই সে খুব খুশি। চুটিয়ে খেলা আর ঘুমনো ছাড়া একটা জিনিসই ওকে মন দিয়ে করতে দেখেছি— টিমমেটদের প্রাণ দিয়ে আগলে রাখা।

(লেখক কেকেআরের প্রাক্তন টিম ডিরেক্টর)

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy