Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমলাদের জন্য স্পিনের তেতো ট্যাবলেট থাকলেও সিরিজ হাড্ডাহাড্ডি হবে

হোম সিরিজে ভারতের স্পিনাররা রাজত্ব করবে না তো কে করবে? বরাবর তা-ই হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে স্পিনারদের এমন আকাল দেখা দিয়েছিল যে, জগমোহন ডালমিয়া স্পিন-উইং গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন যে ভারতে ফের ভাল স্পিনার উঠে আসছে, এটাই অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে বলব, যারা ভারত সফরে আসছে, তাদেরও তো স্পিন খেলার বিদ্যেটা রপ্ত করে এখানে আসতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই হোমওয়ার্কটা করে আসেনি বলেই বোধহয় এই বিপত্তি। আনন্দবাজারকে এরাপল্লি প্রসন্নহোম সিরিজে ভারতের স্পিনাররা রাজত্ব করবে না তো কে করবে? বরাবর তা-ই হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে স্পিনারদের এমন আকাল দেখা দিয়েছিল যে, জগমোহন ডালমিয়া স্পিন-উইং গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন যে ভারতে ফের ভাল স্পিনার উঠে আসছে, এটাই অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে বলব, যারা ভারত সফরে আসছে, তাদেরও তো স্পিন খেলার বিদ্যেটা রপ্ত করে এখানে আসতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই হোমওয়ার্কটা করে আসেনি বলেই বোধহয় এই বিপত্তি। আনন্দবাজারকে এরাপল্লি প্রসন্ন

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

মোহালি টেস্টের রেজাল্ট দেখার পর পিচ নিয়ে অনেককেই আঁতকে উঠতে দেখছি। প্রচুর লোকে বলছে যে, এটা কী রকম টেস্ট উইকেট যেখানে তিন দিনে চারটে ইনিংস বেরিয়ে যায়? আগামী তিন টেস্টের বাইশ গজ নিয়েও প্রচুর জল্পনা চলছে। বলাবলি হচ্ছে, বেঙ্গালুরু-নাগপুরেও তিন দিনে টেস্ট হয়ে যাবে কি না। সিরিজের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়েও প্রচুর ভবিষ্যদ্বাণী শুনছি। সিরিজটা ভারত কী ভাবে জিততে চলেছে, সেটাই এখন চর্চার বিষয়।

প্রথমেই বলে রাখি যে, মোহালি পিচের মধ্যে আমি খারাপ কিছু খুঁজে পাইনি। তিন দিনে টেস্ট শেষ শুধু মোহালিতে হল, এমন তো নয়। ইংল্যান্ডে হয়েছে, নিউজিল্যান্ডে হয়েছে। আর ওখানকার গ্রিন টপে যদি টেস্ট তিন-সাড়ে তিন দিনে শেষ হয়ে যেতে পারে, তা হলে মোহালির টার্নারেও পারে। যে যাই বলুক, উইকেট খারাপ ছিল না। এমন তো হয়নি যে বল গড়িয়ে এসেছে। আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড পিচ কোনও ভাবে নয়। গ্রিন টপে যেমন খেলার আলাদা টেকনিক আছে, টার্নারে খেলতে গেলেও তেমন এক রকম টেকনিক লাগে। খেয়াল করলে দেখবেন, মোহালিতে যারা উইকেটে প্রথম তিরিশ-চল্লিশ বল খেলে দিতে পেরেছে, তারা রান করেছে। টার্নারে ব্যাটসম্যানকে সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। আর কোহলির হাতে তিনটে দুর্দান্ত স্পিনার আছে। অশ্বিন-জাডেজা জুটিকে মারাত্মক দেখাচ্ছে। ভারত কোন দুঃখে টার্নারের বাইরে ভাবতে চাইবে? এত হইচই চলছে কারণ গত আঠারো মাসে দেশের মাঠে আমরা খেলিনি। খেললে এত চোখে লাগত না।

পরিষ্কার বলছি, পরের তিনটে টেস্টেও ভারত টার্নারে ফেলতে চলেছে হাসিম আমলার টিমকে। স্পিনের সেই তেতো ওষুধটাই এবি ডে’ভিলিয়ার্সদের প্লেটে বরাদ্দ থাকবে যা ছিল বছর তিনকে আগে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার জন্য। সে বারও একের পর এক ঘূর্ণি উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে নামিয়েছিল ভারত। সিরিজ সেরা হয়েছিল অশ্বিন। আর সিরিজে ক্লার্কদের ছিন্নভিন্ন করে মহেন্দ্র সিহ ধোনির টিম সিরিজ জিতেছিল ৪-০। এ বার বিরাটের টিম একই প্রেসক্রিপশনে চলবে। কিন্তু ফলাফল অতটা একতরফা হবে বলে আমার মনে হয় না।

কারণে আসছি। প্রথমত, ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া টিমে তেমন ভাল কোনও স্পিনার ছিল না। আমলার দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু আছে। ওদের একটা ইমরান তাহির আছে। অফস্পিনার হারমার আছে যে চার উইকেট নিয়েছে। সাম্প্রতিকে দেখেছি, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যা লেগস্পিনে ততটা হয়নি, যতটা হয়েছে অফস্পিনে। উদাহরণ, ইংল্যান্ডে গ্রেম সোয়ান, মইন আলি। অস্ট্রেলিয়ার নাথান লায়ন। মনে রাখবেন, বেঙ্গালুরু টেস্টে কিন্তু জেপি দুমিনি ঢুকতে চলেছে। যে অফস্পিনটাও করতে পারে। এক দিক থেকে মনে হচ্ছে, ডেল স্টেইন যদি শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারে, তা হলে সেটা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে শাপে বর হবে। মর্নি মর্কেল শুনছি ফিট। ও থাকবে। সঙ্গে রাবাদা। ফিলান্ডার খেলবে অলরাউন্ডার হিসেবে। এরপর তাহিরের সঙ্গে এলগার, দুমিনি, হারমারের স্পিন। খুব খারাপ হবে কি?

আর একটা কথা। বেঙ্গালুরু উইকেট কিন্তু মোহালির মতো হবে না। বছর তিনেক ধরে বেঙ্গালুরুতে যে উইকেটে ম্যাচ হচ্ছে, তার বাউন্স কম। আগে বেশি ছিল, কারণ উইকেট ওয়াংখেড়ের মতো লাল মাটির ছিল। প্লাস, চিন্নাস্বামীর মাঠ ছোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে বলে উঁচু শট খেলা সম্ভব অনায়াসে। দু’শো-দু’শোর পিচ কিন্তু চিন্নাস্বামীতে হবে না। আর দু’টো টিমের মধ্যে তফাতও খুব কম। যতই দেখাক যে ভারত টেস্টে একশো রানে জিতেছে, কিন্তু ফারাকটা একশো রানের নয়। দক্ষিণ আফ্রিকাও ভাল ভাবে ম্যাচে ছিল। একবার দুমিনিকেই মোহালি টেস্টের টিমটায় ভেবে দেখুন না। আমলাদের ব্যাটিংটা কিন্তু তখন অনেক জমাট বাঁধত। স্পিন বোলিংটাও অনেক শক্তিশালী হত। বরং একটা জিনিস বলব। বেঙ্গালুরু টেস্টের আগে কয়েকটা খুচখাচ জিনিস দেখে নিতে পারে ভারত। যেমন শিখর ধবনের ট্রিগার মুভমেন্ট নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ও বল দেরিতে খেলছে। আরওএকটা ব্যাপার। মুরলী বিজয়-চেতেশ্বর পূজারা ওয়ান ডে-র ধারেপাশে ছিল না বলে ওরা আগেভাগে প্রস্তুত ছিল যে, চার-পাঁচ ঘণ্টা ব্যাট করতে হবে। দেখা গেল, ওরাই শেষ পর্যন্ত সফল হল। বাকিরা সে ভাবে নয়। কারণ তারা ওয়ান ডে মোডে ছিল এত দিন।

বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরু আগে কিন্তু দ্রুত রোগটা সারানো দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE