বেন স্টোকসের বাউন্সারে হেলমেটের পেছনে আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়েছেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: পিটিআই।
ছেলের মাইলস্টোন টেস্টের সাক্ষী হতে বগুড়া থেকে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছেন মুশফিকুর রহিমের বাবা-মা। টসের সঙ্গে সঙ্গে মহম্মদ আশরাফুল (৬১ ম্যাচ), হাবিবুল বাশার (৫০ ম্যাচ) এর পাশে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে বুকের ধন। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে বাবা-মা’র হাততালি। সেই ছেলেটিই যখন বেন স্টোকসের বাউন্সারে হেলমেটের পেছনে আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়েছে পিচের উপর, তখন বুকে হাত দিয়ে বাবা-মা’র বিলাপ। আঘাত সামলে উঠেছেন মুশফিকুর। কিন্তু প্রথম দিনের খেলার শেষে সেই বিলাপেরই সুর বাংলাদেশের বিধ্বস্ত ব্যাটিং-এর দৌলতে! ইংল্যান্ডের অফ স্পিনার মইন আলির ভয়ংকর একটা স্পেল (১৩.৫-৫-৩৪-৫) এবং বেন স্টোকসের একটা স্পেলে (৬-২-৭-২) দমকা হাওয়ায় ৪৯ রানে বাংলাদেশের শেষ ৯ উইকেটের পতন!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট মানেই তামিমের ব্যাটিং দ্যুতি। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংসে সেই যে শুরু। প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে পেলেই তামিমের ব্যাট বলছে কথা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় ম্যাচে তিনটে সেঞ্চুরি, পাঁচটা হাফ সেঞ্চুরি, মোট ৬৯৬ রান। গড় ৬৩.২৭! ভাবুন তো! ছ’বছর আগে লর্ডস, ম্যানচেস্টারে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির পর শুক্রবার শের-ই বাংলায় ফের সেঞ্চুরি পেলেন তামিম। ১৭৪ মিনিটের ইনিংসে ১২টি বাউন্ডারিতে শোভিত এই সেঞ্চুরিতে পেলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদেরও হাততালি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মুমিনুলকে নিয়ে ১৭০ রান তুলে ইংল্যান্ডকে প্রচণ্ড চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তামিমে উদ্বুদ্ধ মুমিনুল পাঁচ ইনিংস পর পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা (৬৬)। তবে মাইক আর্থারটনের ৫৪ ম্যাচ টেস্ট ক্যাপ্টেনসির রেকর্ডকে স্পর্শ করা অ্যালিস্টার কুক এবং মুশফিকুরের টেস্ট ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরির দিনে ছন্দময় সেঞ্চুরিতেও উচ্ছ্বসিত হতে পারলেন না তামিম। সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে ইংল্যান্ড অফ স্পিনার মইন আলির অভিনন্দনেও পুলকিত নন তিনি। প্রথম দিনে মিরাজ (২/২৬) এবং সাকিবের (১/২১) বোলিংয়ে স্কোরশিটে ৫০ উঠতে না উঠতে ইংল্যান্ডের তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না কেউ। বরং স্কোরশিটের চেহারা ১৭১/১ থেকে ২২০/১০ এ এসে থামল কেন, সেই আক্ষেপেই পুড়ছে সবাই। তামিম বললেন, ‘বিপর্যয়কে যতই আমি ব্যাখ্যা দিতে চাই না কেন কোনও ভাবেই ব্যাখ্যা দিতে পারব না। আমরা কিছু ভুল শট খেলেছি। আর যদি ১০০ রান বেশি করতাম তাহলে খেলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকত।’ মইন আলিকে স্বচ্ছন্দে খেলতে খেলতে কেন গুডলেনথ বল ছেড়ে দিলেন, সেই ভুলের জন্য আক্ষেপ যাচ্ছে না তামীমের, ‘আমার ভুল ছিল। যদি সোজা খেলতাম এবং যদি প্যাডেও লাগত তাতে আউট হলেও নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো দলে মাত্র একজন পেস বোলার! ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে এই দু:সাহসটি দেখিয়েছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কোচ শেন জার্গেনসেন। স্পিনারদের উপর মাত্রারিক্ত নির্ভরতায় এবার জার্গেনসেনের সেই ফর্মুলাকেই বেছে নিলেন কোচ হাতুরুসিংহে।
এই ম্যাচে দারুণ শুরুর পর বিধ্বস্ত ব্যাটিং মনে করিয়ে দিয়েছে অতীতের দু’টি দৃষ্টান্তকে। ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবোয়ের ৩৮৯’র জবাব দিতে স্কোরশিটের চেহারা এক পর্যায়ে ১০২/২ ছিল। সেখান থেকে ১৩৪-এ অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ ! আর ২০০৭ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে পি সারা স্টেডিয়ামে ৬২ রানে অল আউট হওয়া।
আরও পড়ুন: সবচেয়ে বেশি ঘাম ঝরানো ১০ খেলার তালিকায় টেনিস, ফুটবল নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy