Advertisement
E-Paper

বল বিকৃতিতে খলনায়কদের সঙ্গে তুলনা স্মিথের

বল বিকৃতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে এক মুহূর্তে বিশ্ববন্দিত থেকে বিশ্বনিন্দিত হয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। দলের অনুজ ক্রিকেটারকে দিয়ে বল বিকৃতির মতো চরম অপরাধ ঘটানোর জন্য স্মিথের সঙ্গে এখন তুলনা করে হচ্ছে লান্স আর্মস্ট্রংয়ের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৫
বল বিকৃতির দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার পরে সাংবাদিক বৈঠকে বিধ্বস্ত স্টিভ স্মিথ। ছবি: গেটি ইমেজেস

বল বিকৃতির দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার পরে সাংবাদিক বৈঠকে বিধ্বস্ত স্টিভ স্মিথ। ছবি: গেটি ইমেজেস

স্যর ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে একটা সময় তুলনা করা হতো তাঁর। বর্তমান অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের পতাকাবাহক হিসেবেও সবার আগে ছিল তাঁর নাম। কিন্তু একটা ঘটনাতেই চূর্ণ হয়ে গেল তাঁকে ঘিরে থাকা সম্মানের বলয়।

বল বিকৃতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে এক মুহূর্তে বিশ্ববন্দিত থেকে বিশ্বনিন্দিত হয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। দলের অনুজ ক্রিকেটারকে দিয়ে বল বিকৃতির মতো চরম অপরাধ ঘটানোর জন্য স্মিথের সঙ্গে এখন তুলনা করে হচ্ছে লান্স আর্মস্ট্রংয়ের। সেই কিংবদন্তি সাইক্লিস্ট আর্মস্ট্রং, যিনি ত্যুর দ্যঁ ফ্রাস রেকর্ড সংখ্যক সাত বার জিতেও ডোপিংয়ের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে সরে গিয়েছিলেন। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর সাত রত্নও। তাঁর নিজের দেশের সংবাদমাধ্যমেই স্মিথের এই কাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বিতর্কিত সেই আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের। ১৯৮১-তে অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলের নির্দেশে ‘আন্ডারআর্ম’ বল করে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ জিততে দেননি তাঁর ভাই ট্রেভর চ্যাপেল।

শনিবার কেপ টাউনে স্মিথ যখন সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করছিলেন বল বিকৃতির অভিযোগ, স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছিল হ্যান্সি ক্রোনিয়ের সেই ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি। যদিও ম্যাচ গড়াপেটার কাণ্ড এটা নয়, কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে খ্যাতির চুড়ো থেকে নিমেষে ধুলোয় লুটিয়ে পড়ার দিক থেকে হ্যান্সির সঙ্গে অদ্ভুত মিল।

কোথাও স্মিথকে বলা হয়েছে প্রতারক, কোথাও বলা হয়েছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের লজ্জা। মাইকেল ক্লার্ক টুইট করেন, ‘হায়... ঘুম থেকে উঠে আমি কী দেখছি। দয়া করে বলুন, এটা একটা দুঃস্বপ্ন।’ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে অত্যন্ত সম্মানের আসনে যাঁকে বসানো হয়েছে, সেই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট মন্তব্য করেন, ‘‘দুনিয়ার কাছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট এখন হাস্যকর হয়ে উঠল। শুধু ক্রিকেট কেন, এ বার থেকে অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’

বল বিকৃতির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি স্মিথ-কে ঘিরে আরও একটা প্রশ্ন উঠছে। তা হল, অধিনায়ক হয়ে কী করে দলের অনুজ ক্রিকেটারকে দিয়ে এ রকম অপরাধমূলক একটা কাজ করালেন। শেন ওয়ার্ন যেমন বলেছেন, ‘‘ক্যামেরন ব্যানক্রফ্টের জন্য আমার খারাপই লাগছে। ও নিশ্চয়ই একটা কিছু পকেটে পুরে রাখেনি বল বিকৃত করবে বলে। ওকে এই কাজটা করতে
বলা হয়েছিল।’’ সেই নির্দেশটা যে দলের নেতৃত্বে থাকা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের থেকে এসেছিল, তা শনিবার ম্যাচের পরে স্বীকার করে নিয়েছেন স্মিথ। বলে দিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই বল বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। ইংল্যান্ডের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন এবং মাইকেল ভন সরাসরি ‘প্রতারক’ বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সদ্য-প্রাক্তন অধিনায়ককে। ভন টুইট করেন, ‘স্টিভ স্মিথ, ওর দল এবং দলের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের একটা ব্যাপার মেনে নিতে হবে। এর পরে ওদের ক্রিকেট জীবন যে দিকেই যাক না কেন, লোকে ভুলবে না ওরা খেলাটার সঙ্গে প্রতারণা করতে চেয়েছিল।’ নাসের হুসেনের বক্তব্য, পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন স্মিথরা।

ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রে স্মিথদের যে প্রতারক বলা হচ্ছে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কিন্তু ঘটনা হল, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমও সমান ভাবে আক্রমণ করেছে তাদের নিজেদের দেশের কলঙ্কিত অধিনায়ককে। আর্মস্ট্রং থেকে টাইগার উডস, সবার সঙ্গেই তুলনা করা হয়েছে স্মিথকে। অথচ কিছু দিন আগে এই তুলনাটা হতো স্মিথের সঙ্গে ব্র্যা়ডম্যানের। লেখা হতো, ব্র্যাডম্যানের পরে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান। কে জানত, সেই সোনালি সময় রাতারাতি অতীত হয়ে যাবে!

পুরো ঘটনায় মর্মাহত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। তিনি বলে ফেলেছেন, ‘‘সকালে উঠে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যে খবর পেলাম, তাতে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।’’

বিশ্বাস করতে পারছেন না অ্যালান বর্ডার-ও। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক নিজের কলামে লিখেছেন, ‘তোমরা ভাবলে কী করে যে এ রকম একটা কাজ করে পার পেয়ে যাবে?’ বর্ডার লিখেছেন, ‘‘ঘটনাটা যখন ঘটছে, তখন আমি কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস মাঠে বসে। কে ভাবতে পেরেছিল, পকেটে শিরিস কাগজ নিয়ে কেউ মাঠে নামতে পারে আর সেটা দিয়ে বল বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে! আমার মাথায় তো কখনও এ সব আসেনি।’’

এই ঘটনা সামনে আসার পরে এখন প্রশ্ন উঠছে অতীতে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের কিছু কিছু কাজ নিয়ে। যেমন বলা হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ অ্যাশেজ সিরিজে এই ব্যানক্রফ্টই নাকি পকেটে চিনি নিয়ে নেমেছিলেন বল বিকৃতি ঘটানোর উদ্দেশে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলতে ব্যস্ত ইংল্যান্ডের পেস বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অ্যাশেজে অস্ট্রেলীয় বোলাররা এমন সময় রিভার্স সুইং পেয়েছিল, যখন সেটা পাওয়ার কথাই নয়। ওদের যদি অত ভাল রিভার্স সুইং করানোর দক্ষতা থেকেই থাকে, তা হলে বল বিকৃতি ঘটানোর প্রয়োজন কেন পড়ল? আমার মাথায় সেটা ঢুকছে না।’’ পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার ওয়াকার ইউনিস আবার ব্যানক্রফ্টের ছবি দিয়ে টুইট করেন, ‘এ রকম ঘটনা এই প্রথম ঘটল...সত্যি নাকি??? মনে হচ্ছে, পুরনো কিছু টিভি ক্লিপিংস বের করতে হবে।’ অতীতে পাকিস্তানি বোলারদের বিরুদ্ধে বার বার বল বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। এ বার সেই দোষে দোষী সাব্যস্ত হল অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড তদন্ত শুরু করেছে। কেউ কেউ দাবি তুলেছেন, গোটা দেশের মাথা লজ্জায় অবনত করা ক্রিকেটারদের আজীবন নির্বাসিত করো। সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার-ও ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু দাবি উঠছে দুই প্রধান মস্তিষ্ককে আরও বড় শাস্তি দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত স্মিথ-কে যদি সরে যেতেই হয়, তা হলে এই দুঃসময়ে কে দায়িত্ব নেবেন? একটি নাম অপ্রত্যাশিত ভাবে উঠে এসেছে। তিনি মাইকেল ক্লার্ক। ক্লার্ক-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি অবসর ভেঙে ফিরে আসবেন অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দিতে? ক্লার্ক বলেছেন, ‘‘সঠিক জায়গা থেকে যদি প্রস্তাব আসে, তা হলে অবশ্যই ভেবে দেখতে পারি।’’

যে উত্তরসূরির হাতে অধিনায়কের ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন ক্লার্ক, তাঁর হাত থেকেই কি শেষ পর্যন্ত ব্যাটন ফিরিয়ে নিতে হবে তাঁকে? উত্তরটা সময়ই বলবে।

Steve Smith cricket Ball-Tampering Row
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy