Advertisement
E-Paper

হিমেল পরশ গায়ে মেখে নৌবিহার করতে চান? ৫টি জলাধারকে কেন্দ্র করে ভ্রমণসূচি সাজাতে পারেন

শীতের দিনে রোদ গায়ে মেখে জলাধারে নৌবিহারের মাধুর্যই আলাদা। এমন অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে কোথায় যাবেন, সেখান গিয়ে কী দেখবেন?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০২
জলাধারের বুকে নৌকায় ভেসে পড়তে পারেন শীতের পরশ গায়ে মেখেই। এমন সুযোগ মিলবে কোথায়?

জলাধারের বুকে নৌকায় ভেসে পড়তে পারেন শীতের পরশ গায়ে মেখেই। এমন সুযোগ মিলবে কোথায়? ছবি: সংগৃহীত।

চার দিকে গাছগাছালির সারি। কোথাও আবার ছোট-বড় টিলা। রোদ্দুর এসে ঝিকমিকিয়ে উঠছে জলরাশি। তারই মধ্যে স্পিড বোট , শিকারা কিংবা নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছেন। এমন সুখানুভূতি কি শীত ছাড়া সম্ভব?

তাই এ বার শীতের ভ্রমণসূচি সাজাতে পারেন জলাধারকে কেন্দ্র করে। সেই জায়গা ঘোরাও হবে, নৌবিহারও হবে। কিন্তু যাবেন কোথায়? কাছে-দূরে এমনই ৫ ঠিকানা জেনে নিন।

মাইথন

পড়ন্ত বিকালে মাইথন ড্যামে নৌ-বিহার।

পড়ন্ত বিকালে মাইথন ড্যামে নৌ-বিহার। ছবি: শাটারস্টক।

বাড়তি ছুটি নেই একেবারেই? তা হলে মাইথন চলুন। সকালের ট্রেন বা বাস ধরলে ঘণ্টা চার-পাঁচেই পৌঁছবেন। দিনভর ড্যামের সৌন্দর্য উপভোগ করে, বিকাল বা সন্ধ্যার ট্রেনে চেপে ফিরে আসতে পারেন। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মাইথন যেতে হয় আসানসোল হয়ে। শীত পড়লেই পিকনিকের ভিড় জমে এখানে। বিশাল জলাধারকে স্থানে স্থানে বেড় দিয়ে রেখেছে টিলা। শিকারা, স্পিডবোটে চেপে জলাধার ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে এখানে। শীতের প্রকৃতি খানিক রুক্ষ, তবে আবহাওয়া মনোরম। মাইথনেই রয়েছে কল্যাণেশ্বরী মন্দির। বহু পুরনো এই মন্দিরটিও দেখার মতো।

কোথায় থাকবেন?

মাইথনের কাছেই থাকার জায়গা আছে। আসানসোল শহরেও অনেক হোটেল মিলবে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে আসানসোলগামী ট্রেন বা ধর্মতলা থেকে বাস ধরে নিন। আসানসোল থেকে বাস বা গাড়িতে কিংবা অটো বুক করে মাইথন পৌঁছতে পারেন। রাত্রিবাস করতে না চাইলে আসানসোল থেকে সন্ধ্যার ফিরতি ট্রেন ধরতে পারেন।

পাঞ্চেত এবং গড় পঞ্চকোট

ঘুরে নিন পাঞ্চেত জলাধার।

ঘুরে নিন পাঞ্চেত জলাধার। ছবি:সংগৃহীত।

মাইথন থেকে ঘুরে নিতে পারেন পাঞ্চেত। আবার পাঞ্চেত এবং গড় পঞ্চকোটকে কেন্দ্র করেও শীতের সফর হতে পারে। মাইথন এবং পাঞ্চেতের দূরত্ব বড় জোড় ২০ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের সীমানায় দামোদরের উপর বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে পাঞ্চেত জলাধার। পাঞ্চেতে শীতের মরসুমে জল খানিক কমই থাকে। তবে আবহাওয়া হয় মনোরম। কাছেই রয়েছে সাজানো-গোছানো পার্ক। শীতের দিনে এখানে হাতে টানা নৌকায় জলাধার ঘোরার সুযোগ মেলে। তবে স্পিড-বোট বা যন্ত্রচালিত নৌকা নেই এখানে। পুরুলিয়ার পাঞ্চেত পাহাড়ের পাদদেশে পঞ্চকোট রাজাদের ভাঙা গড়। অরণ্য ঘেরা ধ্বংসাবশেষ আজও পর্যটক মহলের আকর্ষণ। ফাল্গুন-চৈত্রে গড় পঞ্চকোটের আকর্ষণ যদি হয় আগুনরঙা পলাশ, তবে শীতে হাতছানি দেয় মনোরম পরিবেশ। দিনের বেলাটা আরামদায়ক, তবে রাতে জাঁকিয়ে শীত পড়ে।

কোথায় থাকবেন?

গড় পঞ্চকোটে পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমের অতিথি আবাস, বেসরকারি হোটেল আছে।

কী ভাবে যাবেন?

সকাল বেলা হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে কুমারডুবি, বরাকর বা আসানসোল, কোনও একটি স্টেশনে নামলেই হয়। তার পর অটো বুক করে যাওয়া যায় গড় পঞ্চকোট। সেখানে যাওয়ার পথেই দেখা মিলবে পাঞ্চেতের। ২ রাতের ভ্রমণসূচি সাজালে গড় পঞ্চকোট থেকেই পাঞ্চেত এবং মাইথন ঘুরে নিতে পারবেন।

মুকুটমণিপুর

ঘুরে নিন মুকুটমণিপুর জলাধার।

ঘুরে নিন মুকুটমণিপুর জলাধার। ছবি:সংগৃহীত।

বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর ড্যাম একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কংসাবতী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তৈরি এই জলাধার এতটাই ব়ড় যে এ কূল-ও কূল দেখা যায় না। ১১.২৭ কিলোমিটার জুড়ে এর বিস্তৃতি। বর্ষায় এর রূপ উপভোগ্য, তবে শীতই বাঁকুড়া ভ্রমণের আদর্শ মরসুম। মুকুটমণিপুরের আশপাশে বেশ কিছু দ্রষ্টব্য রয়েছে, সেগুলি নৌবিহারের সময় অথবা টোটো করে ঘুরে নেওয়া যায়। যন্ত্রচালিত নৌকায় বোটিংয়ের ব্যবস্থা। ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় ধরে নৌবিহার করতে পারেন এখানে। দেখে নিতে পারেন পরেশনাথ শিব মন্দির, মুসাফির আনা ভিউ পয়েন্ট, ডিয়ার পার্ক, কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলনস্থল-সহ আরও কিছু জায়গা। তবে নৌকা এবং ই-রিকশা, দু’টি করে ঘুরলে দু’রকম সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

কোথায় থাকবেন?

মুকুটমণিপুর ড্যামের কাছেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস, সরকারি, বেসরকারি অতিথিশালা, হোটেল আছে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া, সাঁতরাগাছি, শালিমার থেকে বাঁকুড়াগামী স্টেশনের উদ্দেশ্যে ট্রেনে চেপে বসুন। সারা দিনে একাধিক ট্রেন আছে। তবে ভোরের ট্রেন বা রাতের ট্রেন ধরলেই সুবিধা হবে। রূপসী বাংলা এবং আরণ্যক— এই দু’টি ট্রেন ধরলে সকাল ১০টা-সাড়ে ১১টার মধ্যেই বাঁকুড়া পৌঁছতে পারবেন। রাতে হাওড়া থেকে চক্রধরপুর এক্সপ্রেস ধরলে একেবারে ভোরে বাঁকুড়া পৌঁছে যাবেন। ধর্মতলা থেকে বাস পরিষেবাও মিলবে। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস ধরে পৌঁছতে পারেন মুকুটমণিপুর ড্যামে। না হলে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন।

তালবেড়িয়া ড্যাম

তালবেড়িয়া জলাধারেও নৌ-বিহার করা যায়।

তালবেড়িয়া জলাধারেও নৌ-বিহার করা যায়। ছবি: সংগৃহীত।

বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের ঝিলিমিলিতে তালবেড়িয়া ড্যাম মনে করিয়ে দেবে পাহাড়ি কোনও হ্রদের কথা। চারপাশে শাল-সেগুনের গাছ। স্বচ্ছ পরিষ্কার জল। তারই বুকে ভেসে পড়া যায় নৌকায়। জলাধার আকার-আয়তনে খুব বেশি বড় নয়, তবে সবুজ ঘেরা তালবেড়িয়ার সৌন্দর্য মন ভাল করে দেয়। নিরিবিলি স্থানটি। শীতের বিশেষ বিশেষ ছুটির দিন ছাড়া উপচে পড়া ভিড় এখানে থাকে না।

ঝিলিমিলি থেকে ঘুরে নেওয়া যায় অনেক জায়গা। বেলপাহাড়ি, মুকুটমণিপুর, সুতানের জঙ্গল— যে দিকে ইচ্ছা যেতে পারেন। হাতে দিন দুই-তিন সময় থাকলে বেলপাহাড়ি, ঝিলিমিলি, মুকুটমণিপুর— তিন জায়গায় ঘুরে নিতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

ঝিলিমিলি, রানিবাঁধে একাধিক হোটেল, রিসর্ট রয়েছে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা বা যে কোনও শহর থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে সড়কপথেই পৌঁছতে পারেন। ধর্মতলা থেকে বাস ধরে ঝিলিমিলি বা বেলপাহাড়ি যাওয়া যায়। ট্রেনে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে বাকি গন্তব্য গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। শালিমার বা হাও়়ড়া স্টেশন থেকে বাঁকুড়ার ট্রেন ধরে বাকি পথ বাস বা গাড়িতে আসতে পারেন।

চান্ডিল

চান্ডিল জলাধার দেখলে মনে হবে ছোটখাটো সমুদ্র।

চান্ডিল জলাধার দেখলে মনে হবে ছোটখাটো সমুদ্র। ছবি:সংগৃহীত।

পশ্চিমবঙ্গে নয়, বরং চান্ডিলের ঠিকানা ঝাড়খণ্ডে। তবে কলকাতা থেকে যাওয়া বিশেষ ঝক্কির নয়। ১ রাত দুই দিনে ঘুরে আসা যায়।ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খারসোয়ান জেলার চান্ডিল ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর উপরে চান্ডিল বাঁধ। দলমা পাহাড় দেখা যায় এই জলাধার থেকে। পড়ন্ত বিকেলে বিশাল জলাধারের বুকে স্পিডবোটে চেপে বসলেই মনমেজাজ ফুরফুরে হয়ে যাবে। জল-হাওয়ার ঝাপটা সামলে মোবাইল ফোনটি ঠিক করে বাগিয়ে ধরতে পারলে, যে মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি হবে, তা স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবে আজীবন। চান্ডিলের কাছেই মিশেছে সুবর্ণরেখা ও কারকই নদী। ৭২০ মিটার দৈর্ঘ্যের জলাধারটি ঘোরার পাশাপাশি দেখে নিতে পারেন, এখানকার মিউজ়িয়াম। তথ্য বলছে, সেখানেই রয়েছে প্রায় ২ হাজার বছরের পুরনো এক শিলালিপি।

কোথায় থাকবেন?

চান্ডিলে থাকার একাধিক বেসরকারি হোটেল, লজ আছে। টাটালগরে থেকেও চান্ডিল ঘুরে নেওয়া যায়।

কী ভাবে যাবেন?

রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছাড়ে চক্রধরপুর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি চান্ডিল স্টেশন পৌঁছয় পর দিন সকাল প্রায় ৮টায়। সেখান থেকে অটো বা গাড়িতে ড্যামে পৌঁছতে পারেন। তবে হাতে দিন দুই-তিনের ছুটি থাকলে শুধু চান্ডিল না ঘুরে তার সঙ্গে টাটানগর এবং দলমা পাহাড়ও জুড়ে নিতে পারেন। হাওড়া থেকে টাটানগর এবং চান্ডিল যাওয়ার একাধিক ট্রেন আছে। তা ছাড়া সড়কপথেও আসা যায়।

Winter Travel Destination Winter season Dams
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy