Advertisement
E-Paper

এখনও বড় রোনাল্ডোর শেখানো স্কিলগুলো কাজে লাগাই মাঠে

প্রিমিয়ার লিগ থেকে লা লিগা। দ্রোগবা থেকে মেসি। ১৯৯৬ থেকে ২০১৬। দীর্ঘ কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতার মালিক এ বার আইএসএলে। পুণে সিটির মার্কি। আইসল্যান্ডের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার এডুর গুরজনসন বুধবার রাতে মাদ্রিদ থেকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে। আইসল্যান্ডের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার এডুর গুরজনসন বুধবার রাতে মাদ্রিদ থেকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
মেসি যখন তাঁর সতীর্থ।

মেসি যখন তাঁর সতীর্থ।

প্রশ্ন: বাবা আর্নরকে দেখেই কি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু?

গুরজনসন: ঠিক সেটা নয়। তবে এটা একটা কারণ অবশ্যই বলতে পারেন। আমি শুরু থেকেই ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম। আর সেই স্বপ্নকে ছোঁয়ার জন্য সব কিছু ভুলে দৌঁড়োচ্ছি। ফুটবলকে বাদ দিলে আমি জিরো।

প্র: পিএসভি আইন্দোভেনে বড় রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলেছেন...

গুরজনসন: শুধু ব্রাজিল নয়, বিশ্ব ফুটবলের গোল্ডেন স্ট্রাইকার। ওর শেখানো স্কিলগুলো এখনও ব্যবহার করি খেলার সময়। ও রকম বডি ব্যালান্স, শ্যুটিং, বল কন্ট্রোল— খুব কম স্ট্রাইকারের মধ্যে দেখেছি।

প্র: আপনার দেখা সেরা স্ট্রাইকার কি তা হলে রোনাল্ডো?

গুরজনসন: (মুচকে হাসি) আমার অনেক লম্বা তালিকা। জিমি ফ্লয়েড হ্যাসেলব্যাঙ্ক, জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা, দ্রোগবা, ক্রেসপো, এটো, মেসি, রোনাল্ডিনহো, রোনাল্ডো, অঁরি। কিন্তু যার সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি জমত। যার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি খেলাটা, তার নাম জিমি ফ্লয়েড হ্যাসেলব্যাঙ্ক। আমরা দু’জন ছিলাম আগুন আর বরফ। একেবারে আলাদা। কিন্তু মাঠে আমাদের জুটি এত ভয়ঙ্কর ছিল যে, একসঙ্গে একটা অস্ত্র হয়ে উঠেছিলাম।

প্র: চোটের জন্য কেরিয়ারের শুরুতেই পিএসভি ছাড়তে হয়েছিল। কতটা ভয় পেয়েছিলেন?

গুরজনসন: একটুও না। ফুটবল আমার কাছে প্যাশন। তাই নিজেকে সব সময় মোটিভেট করে গিয়েছি।

প্র: আইসল্যান্ডের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন বাবার পরিবর্তে। আপনি কি ভেবেছিলেন এটা ভবিষ্যতে একটা কুইজের প্রশ্ন হয়ে যাবে?

গুরজনসন: ও রকম ভাবে কোনও দিন ভাবিনি (হাসতে হাসতে)। তবে হ্যাঁ ড্যাড আমার অনুপ্রেরণা। অনেক কিছু শিখেছি ওনার থেকে। আমি ফুটবলার হয়েছি, তার জন্য ড্যাড খুব খুশি। গর্ব বোধ করেন।

প্র: চেলসিতে থাকার সময় আপনার ‘ওপেন পালম’ গোল সেলিব্রেশন খুব বিখ্যাত হয়েছিল...

গুরজনসন: আমি সময় পেলেই টিভি-তে ফ্রেন্ডস সিরিয়াল দেখতাম। কোনও একটা এপিসোডে জোয়ি শ্যান্ডলারের অন্তর্বাস পরে এসে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আর কি কোনও অন্তর্বাস পরতে পারি।’ তার পরে হাত দিতে একটা দারুণ অঙ্গভঙ্গি করেছিল। যেটা আমার খুব ভাল লাগে। পরে সেটা আমি কপি করি।

প্র: এক সময় মিডিয়ার একাংশের ধারণা হয়েছিল, জোসে মোরিনহো চেলসির দায়িত্ব নিলেই আপনাকে দলের বাইরে বের করে দেবেন?

গুরজনসন: হ্যাঁ, অনেক কথা হয় সেই সময়। কিন্তু ঘটেছিল উল্টো।

প্র: মোরিনহোর উপর কি জাদু করেছেন?

গুরজনসন: জাদু-তাদু নয়। সত্যি ঘটনা হল, টিমে যোগ দেওয়ার পরে উনি আমাকে ডেকে পাঠান। বলেন, ‘ভেবো না তুমি চেলসি ছেড়ে চলে যাচ্ছো। আমার তোমাকে দরকার। সেরা ফর্মে দরকার। ৫ জুলাইয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দাও’। ব্যস এটুকু। বাকিটা ইতিহাস।

প্র: চেলসির হয়ে প্রথম প্রিমিয়ার লিগ জয়ের মুহূর্তটা মনে আছে?

গুরজনসন: মনে থাকবে না আবার। ট্রফি জয়ের আনন্দ সব সময়ই অসাধারণ এবং স্পেশ্যাল হয়। আমার জন্য আরও স্পেশ্যাল কারণ ওটা বল্টনের মাঠে হয়েছিল। মনে আছে বিপক্ষ গ্যালারিতে থাকা বোল্টন সমর্থকেরাও আমার নাম করে গান গাইছিল। একটা সময় যে আমি ওদের দলে খেলেছি সেটা ভোলেনি ওরা। পুরো আবহাওয়াটাই মিষ্টিময় হয়ে উঠেছিল। আমি বোল্টনকে কোনও দিন ভুলতে পারব না। সে দিন রাতে চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন করার পর আমরা লম্বা সেলিব্রেশন করতে পারিনি। কেন না কিছু দিন বাদেই লিভারপুলের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ থাকায়।

প্র: এ বার আসা যাক ইউরো প্রসঙ্গে। ইউরো ২০১৬-তে আইসল্যান্ডের পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?

গুরজনসন: আমি ফুটবলারদের বলেছিলাম, শুধু ইউরো পৌঁছনোই কি আমাদের লক্ষ্য ছিল। নাকি আমাদের ক্ষমতা আছে আরও এগিয়ে যাওয়ার। ফুটবলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা আন্ডারডগ ছিলাম ঠিকই কিন্তু সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি ঠিক কী করে এখানে পৌঁছেছি। নিজেদের সবকিছু উজার করে দিয়েছি।

প্র: হেনরিক লারসনের পরিবর্তে আপনি সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সেলোনায়। কতটা চাপ ছিল?

গুরজনসন: আমি জানতাম না, কার বদলে আমাকে টিমে নেওয়া হচ্ছে। যদিও আমরা দু’জনেই নর্ডিক অঞ্চলের বাসিন্দা এবং জার্সি নম্বরও এক আমাদের। তাই ওর সঙ্গে আমার সব সময় তুলনা হয়ে গিয়েছে। বাঁচতে পারিনি কোনও দিন। লারসন অনেক বড় ফুটবলার। কিন্তু আমার উপর সেটা নিয়ে কোনও বাড়তি চাপ ছিল না। কেননা বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেলার চাপ অনেকগুন বেশি।

প্র: বিশ্বে খুব কম ফুটবলার আছেন, যাঁরা মোরিনহো আর গুয়ার্দিওলা, দু’জনের কোচিংয়ে খেলেছেন। আপনি তাঁদের একজন...

গুরজনসন: দু’জন একেবারে দু’টো আলাদা চরিত্র। আলাদা ব্যক্তিত্ব। কিন্তু হ্যাঁ, ম্যান ইউ-কে শীর্ষে তোলার ক্ষমতা আছে মোরিনহোর। দু’জনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ফুটবলের বিচারে জোসে বেশি ডিফেন্সিভ। পেপ নয়। তবে গেম রিডিংয়ে দু’জনেই অনবদ্য। ব্যক্তিগত দক্ষতার চেয়ে দল কী রকম খেলছে সেটার দিকেই বেশি নজর থাকে পেপের। মোরিনহো সেখানে রিজিড। ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

এ বারের ইউরো কাপে গুরজনসন।

প্র: আপনি নিজেও প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন। এ বারের মরসুমকে বলা হচ্ছে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক। কাকে এগিয়ে রাখবেন?

গুরজনসন: এ বারের প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডই আমার বাজি।

প্র: মেসির কেরিয়ারের শুরুতে আপনি ছিলেন ওঁর সতীর্থ। কোনও দিন ভেবেছিলেন এক দিন মহাতারকা হয়ে উঠবেন মেসি?

গুরজনসন: মেসি ঈশ্বরের পুত্র। ওর সঙ্গে অন্য কোনও ফুটবলারের তুলনা হয় না। আধুনিক ফুটবলের মুখ। আমার গর্ব হয় ভাবলে যে, একটা সময় ওর সঙ্গে খেলেছি আমি।

প্র: কোনও অজানা গল্প মেসিকে নিয়ে....

গুরজনসন: আমি যখন খেলতাম তখন ও সদ্য সিনিয়র টিমে এসেছে। কিন্তু ও বাকিদের চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল। ট্রেনিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ও মাঠে থাকত। এবং শ্যুটিং প্র্যাকটিস করত। আমাকে অনুরোধ করত সেট পিস থেকে বল বাড়ানোর জন্য। ফুটবলের জন্য ওর প্যাশনটাই ছিল আলাদা।

প্র: আপনি মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিপক্ষেও খেলেছেন। কে বেশি ভয়ঙ্কয় মনে হয়?

গুরজনসন: দু’জনেই কিংবদন্তি। তবে মেসিকে একটু এগিয়ে রাখব। কেন না ও কখন কী করে ফেলবে, বোঝা যায় না। মেসির পায়ে বল থাকা মানেই রেড অ্যালার্ট। সেটা মাঝমাঠে হোক কিংবা অ্যাটাকিং থার্ড। ব্যস! এ বার থামুন...

প্র: লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগের পরে আইএসএল কেন?

গুরজনসন: নতুন রোমাঞ্চের খোঁজে আইএসএলে আসা। আমার বয়স এখন সাঁইত্রিশ। ভাবলাম একটা নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া যেতেই পারে!

Eidur Gudjohnsen Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy