উত্তেজনা: ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিক্ষোভ, মেজাজ হারানো, ক্ষমা প্রার্থনা, সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি। ডার্বি হারের পরে এই চার বিষয় নিয়েই শুরু হল ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন।
যেখানে তাঁবুতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভরত লাল-হলুদ সমর্থকদের ইস্টবেঙ্গল কোচ বলে দিলেন, ‘‘মহম্মদ আল আমনা বাদে ইস্টবেঙ্গলের সব বিদেশিকেই আমি বেছেছি। ব্যর্থতার সব দায় আমার। কাউকে দোষারোপ করবেন না। ফুটবলারদের আক্রমণ না করে বরং আমাকে যা বলার বলুন।’’
ডার্বি ম্যাচের পরে এ দিনই ক্লাবের মাঠে অনুশীলনে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেখানে হাজির বেশ কয়েক জন সমর্থক দিনের শুরু থেকেই ফুটবলার ও কোচদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেয়। মাঠে এই সময় হাজির ছিলেন ফুটবল সচিব রাজা গুহ এবং কর্মসমিতির সদস্য দেবরাজ চৌধুরী। তাঁদেরও নিশানা বানানো হয়।
এই দুই কর্তার সঙ্গেই কোচ খালিদ জামিল এবং ইস্টবেঙ্গলে এ বারের দল গঠনের সঙ্গে জড়িত প্রাক্তন ফুটবলার অ্যালভিটো ডি’কুনহা-র বিরুদ্ধে কটূক্তি উড়ে আসতে থাকে গ্যালারি থেকে। বাদ যাননি চলতি মরসুমে দলের অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডলও। কেন পর পর দু’টো ডার্বি হার? কেন দলের এই হতশ্রী পারফরম্যান্স এই প্রশ্ন তুলে অর্ণবকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে এর পরেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবস্থা শান্ত করতে এগিয়ে যান মাঠে হাজির দুই কর্তা। তাঁদের হাতের সামনে পেয়েই বিক্ষোভকারীরা জানতে চায়, ক্লাবে অ্যালভিটো ডি’কুনহা-র ভূমিকা কী? কেন তাঁকে বছরের পর বছর দলের সঙ্গে জুড়ে রাখা হচ্ছে?
ফুটবল সচিব বলেন, ‘‘ক্লাবের যুব দলের দেখাশোনা ছাড়াও সিনিয়র দলের সঙ্গে কোচ ও কর্তাদের যোগাযোগের কাজটা করেন অ্যালভিটো। যেহেতু ও তিন-চারটে ভাষায় অনর্গল, তাই বৃহত্তর মঞ্চে ক্লাব ওকে কাজে লাগায়।’’
বিক্ষোভকারীদের আরও প্রশ্ন ছিল, কেন মোহনবাগানকে হারানো যাচ্ছে না? লুইস ব্যারেটোর বদলে কেন একজন ভাল গোলকিপারকে নেওয়া হয়নি? কেনই বা ডার্বিতে ঠিক মতো দল নামানো বা ফুটবলার পরিবর্তন হয়নি?
প্রথমে কোচ খালিদ জামিলকে হাতের সামনে না পেয়ে দুই কর্তার কাছেই নিজেদের হতাশা ও ক্ষোভ এ ভাবে উগরে দিচ্ছিল সমর্থকরা। পরে তারা হানা দেয় ক্লাবের মিডিয়া রুমে থাকা খালিদ জামিলের ঘরে। তবে দেবরাজবাবুর হস্তক্ষেপে ব্যাপারটা অন্য দিকে গড়ায়নি। সেখানেই খালিদ সমর্থকদের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘‘দু’টো ভুল করেছি। প্রথমত: মনাদা-র (প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য) পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল। দল গঠন ও স্ট্র্যাটেজিতেও কিছু ভুল হয়েছে। এখনও সাত ম্যাচ বাকি। লিগ টেবলে মোহনবাগানের আগেই রয়েছি আমরা। সব ভুল শুধরে ফের লিগে ঘুরে দাঁড়াতে আপনাদের সমর্থন চাই।’’ ইস্টবেঙ্গল কোচের এই সুর নরম করে ক্ষমা চাওয়াতেই বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। নিজেদের আচরণের জন্য কোচের সঙ্গে হাতও মিলিয়ে নেয় বিক্ষোভকারীরা। ডার্বির পরে সমর্থকদের কাছে কোচের এই জবাবদিহি করা ময়দানে অভিনবই বলা যায়।
এ দিন এই বিক্ষোভের মাঝেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা খালিদের ছবি তুলতে গেলে মেজাজ হারান ইস্টবেঙ্গল কোচ। এমনকি কয়েকজনের বিরুদ্ধে তাঁকে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বলতেও দেখা যায়। পরে অবশ্য দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘উত্তেজনার বশে খারাপ মন্তব্য করেছি। এর জন্য দুঃখিত।’’
এ দিকে, বুধবার থেকে বারাসতে অনুশীলন করবে ইস্টবেঙ্গল। যেখানে হাজির থাকবেন দলে প্রত্যাবর্তনকারী ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy