মধ্যমণি: বুমরাকে নিয়ে উল্লাস কোহলি-সহ বাকিদের। ছবি: পিটিআই।
বৃষ্টিবিঘ্নিত নিউ ইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য মেজাজে এগিয়ে চলেছে ভারত। মাত্র ১১৯ রানের পুঁজি নিয়ে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন যশপ্রীত বুমরা।
চার ওভারে ১৪ রান দিয়ে তিন উইকেট। ভারতীয় জোরে বোলারের আগ্রাসনের কাছেই হার মানতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে বুমরা জানিয়ে যান, দলের ব্যাটিং ভাল না হলেও রোদ ওঠার পরে উইকেট অনেক বেশি সতেজ হয়ে যাওয়ার সুবিধা নিয়েছেন। বুমরার মন্তব্য, ‘‘শুরুর দিকে কিছুটা সাদামাটা ছিল আমাদের ক্রিকেট। তবে রোদ ওঠার পরে পিচ ভাল হয়ে যায়। আমরাও বুঝে গিয়েছিলাম, নিজেদের লাইন এবং লেংথে নিখুঁত রাখতে পারলে পাল্টা লড়াই করা সম্ভব। সেটাই কিন্তু হয়েছে।’’
তিনি নিজে কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে বোলিং শুরু করেছিলেন? বুমরার মন্তব্য, ‘‘আমার দর্শন অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিল। সিম-কে (বলের সেলাই) বেশি করে ব্যবহার করেছি এই পিচে। কী ভাবে বলকে নিখুঁত নিশানায় রাখতে পারব, সেটা নিয়ে আমার চিন্তা ছিল অনেকটাই বেশি।’’
তবে বুমরা এ-ও জানাতে ভোলেননি, নিউ ইয়র্কের গ্যালারি যে ভাবে তাঁদের ম্যাচের শুরু থেকে সমর্থন করে গিয়েছে, তার কোনও তুলনা হয় না। তিনি বলেছেন, ‘‘দর্শকেরা যে ভাবে চিৎকার করছিলেন, অনেক ক্ষেত্রেই মনে হচ্ছিল, আমরা যেন ভারতেরই কোনও মাঠে খেলতে নেমেছি। ওঁদের সেই সমর্থন যেমন উপভোগ করেছি, তেমনই বাড়তি একটা শক্তিও তৈরি হয়েছিল সেই সমর্থনে। দর্শকদের অবদান কখনওই ভুলতে পারব না।’’
সমাজমাধ্যমেও ভক্তেরা সর্বকালের সেরা হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন বুমরাকে। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে সুনীল গাওস্কর বলেছেন, ‘‘এমন একটা টানটান ম্যাচে একটা ছেলে চার ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করে তিন উইকেট তুলে নিয়ে পাক দলের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিল! এটাই যশপ্রীত বুমরার বিশেষত্ব।’’
তাঁর দলের সেরা অস্ত্রের প্রশংসা শোনা গিয়েছে অধিনায়ক রোহিত শর্মার মুখেও। তিনি বলেছেন, ‘‘বুমরার বোলিং নিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রত্যেকটা ওভারে ও যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর থেকে আমরা এমনই মানসিকতা নিয়ে বোলিং প্রত্যেকটা ম্যাচে চাই। আসলে গত বছরের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের পর থেকেই বল হাতে বুমরা যেন আরও প্রতিভাধর হয়ে উঠেছে। আশা করব, ও এই ছন্দটা ধরে রাখবে।’’
সেখানেই না থেমে রোহিত জানিয়েছেন, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে যে উইকেটে খেলেছিলেন তাঁরা, তার চেয়ে এ দিনের উইকেট ভাল ছিল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের ব্যাটিং মোটেও ভাল হয়নি। প্রথম দশ ওভার ভাল জায়গায় থাকার পরে দরকার ছিল একটা শক্তপোক্ত জুটি তৈরি করার। সেটা হয়নি। আমি তো মনে করি, কমপক্ষে আমরা ১০-১৫ রান কম করেছিলাম।’’
সেই সূত্র ধরেই রোহিত আরও বলে যান, ‘‘আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে যে উইকেটে খেলতে হয়েছিল, তার চেয়ে এই পিচ বেশ ভাল। আমার মনে হয়েছিল, এমন উইকেটে কমপক্ষে ১৪০ রান তুলতে পারলেই পাল্টা লড়াই করা সম্ভব। সেখানেই কৃতিত্ব দেব বোলারদের। ওরা অসাধারণ বোলিং করেছে।’’
তবে রোহিত এ-ও স্বীকার করেছেন, সামগ্রিক ভাবে রবিবার বোলাররা অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ভারত অধিনায়কের কথায়, ‘‘বুমরা অবশ্যই বোলিংকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তবে সকলেই বল হাতে কিছু একটা করার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল। সেটাই কিন্তু ম্যাচে বড় ফারাক তৈরি করে দেয়।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘এমন ধরনের ম্যাচে প্রত্যেকের ক্ষুদ্র অবদানই শেষ পর্যন্ত বড় একটা আকার ধারণ করে ছিনিয়ে আনতে পারে অকল্পনীয় জয়। আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটে এটাই কাম্য।’’
নিউ ইয়র্কের সমর্থকদের প্রশংসা করে রোহিত বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই ভারতীয় সমর্থকদের এ ভাবে পাশে থাকাই মনের জোর বাড়িয়ে দেয়। তবে সবে অভিযান শুরু হয়েছে। সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy