Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
প্রশাসনিক দুর্দশার ছবি হয়ে থাকল লক্ষ্মণের শহর

খেলা করার চেষ্টাই নেই, খুশি হননি বিরাটরাও

ক্রিকেটে এখন অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম এসে গিয়েছে। উন্নত পিচ-কভার থেকে শুরু করে সুপার সপার চালিয়ে দ্রুত মাঠ শুকিয়ে তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশের সমস্ত মাঠে তো বটেই, খুব ভাল জল নিকাশী ব্যবস্থা রয়েছে ভারতেরই অনেক মাঠে।

মাঠ দেখতে যাওয়ার সেই ছবি। শাস্ত্রীর সঙ্গে ফেরার পথেই অখুশি দেখাচ্ছিল কোহালিকে। ফাইল চিত্র

মাঠ দেখতে যাওয়ার সেই ছবি। শাস্ত্রীর সঙ্গে ফেরার পথেই অখুশি দেখাচ্ছিল কোহালিকে। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৮
Share: Save:

হায়দরাবাদে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না হওয়া নিয়ে সেই শহরের দর্শকেরাই শুধু ক্ষুব্ধ নন। একেবারেই প্রসন্ন হতে পারেনি ভারতীয় দলও। কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থাকে। যে সংস্থা ইতিমধ্যেই বিরাট আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কলঙ্কিত। খুব অবাক হওয়ার থাকবে না যদি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বোর্ড পর্যবেক্ষকদের চোখেও হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার এমন ব্যর্থতা ধরা পড়ে থাকে।

ক্রিকেটে এখন অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম এসে গিয়েছে। উন্নত পিচ-কভার থেকে শুরু করে সুপার সপার চালিয়ে দ্রুত মাঠ শুকিয়ে তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশের সমস্ত মাঠে তো বটেই, খুব ভাল জল নিকাশী ব্যবস্থা রয়েছে ভারতেরই অনেক মাঠে। সেখানে হায়দরাবাদে শুক্রবার তেমন বৃষ্টিই হয়নি। ভারী বৃষ্টি হয়েছে আগের দিন। আগের দিনের বৃষ্টির তোড়ে এভাবে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার ঘটনা হালফিলে নজিরবিহীন।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় একেবারেই প্রসন্ন নন ভারতীয় দলের সদস্যরাও। ঘনিষ্ঠমহলে এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন বলে জানা গেল। বৃষ্টি অনেক আগেই থেমে গিয়েছিল বলে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা ভেবেছিলেন, ম্যাচ হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজটি একপেশে জিতেছিলেন বিরাট কোহালিরা। ফল ছিল তাঁদের পক্ষে ৪-১। টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে হারে ভারত। সিরিজ ১-১ থাকা অবস্থায় হারদরাবাদে নামতে মরিয়া ছিলেন অনেকেই। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ওয়ান ডে-র পরে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিতে হবে, এমন শপথও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল টিমের মধ্যে।

সূত্রের খবর, ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা এতটাই মরিয়া ছিলেন খেলার জন্য যে, বারবার বার্তা পাঠানো হয় উপস্থিত কর্তাদের কাছে। তাঁদের উপর চাপ রাখার জন্য পুরো দল মাঠে নেমে এসেছিল। নিজেরা পায়ে হেঁটে মাঠের অবস্থা সরেজমিনে দেখেও নিচ্ছিলেন কোহালিরা। কিন্তু তার পরেও কর্তাদের মধ্যে খুব হেলদোল ছিল বলে মনে হয়নি।

সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থায় কারা ক্ষমতায় রয়েছেন সেটা নিয়েই চূড়ান্ত ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার আর্শাদ আয়ুব-সহ একাধিক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে বিরাট আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বোর্ডের প্রাক্তন ক্রিকেট অপারেশন্‌স ম্যানেজার শ্রীধরও। যিনি সম্প্রতি বোর্ডের পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।

সেই ডামাডোলেই হয়তো কোহালিদের ট্রফির অভিযান ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। হায়দরাবাদ থেকে অনেকেই এ দিন ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করলেন। তাঁরা কেউ সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী, কেউ আবার নানা ভাবে খেলার সঙ্গে জড়িত। এঁদের বক্তব্য, ‘‘এক সময় কত ভাল ক্রিকেটার বেরিয়েছে আমাদের রাজ্য থেকে। এখন দুর্নীতিতে ডুবে আছে ক্রিকেট সংস্থা। অন্যদের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে না। এখানেও পর্যবেক্ষক বসিয়ে দেওয়া হোক।’’

ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন মহম্মদ আজহারউদ্দিনের মতো প্রাক্তন ক্রিকেট তারকারা। আজহার হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করবেন বলে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অতীতের গড়াপেটার অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আজহার অবশ্য সহজে হাল ছাড়বেন না, জানিয়ে দিয়েছেন। আবারও আবেদন করবেন প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার জন্য। গড়াপেটা নিয়ে হাই কোর্টে তিনি বোর্ডের বিরুদ্ধে জিতেছেন। তার পরে বোর্ড আর সুপ্রিম কোর্টে যায়নি। আইনি দিক দিয়ে তিনি খুব খারাপ জমিতে নেই বলেই বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছেন।

আপাতত অবশ্য হায়দরাবাদ ক্রিকেটের এই অন্ধকারে কোহালিদের বিজয়রথের চাকা বসে গেল মাটিতে। যা নিয়ে দলের সদস্যরা ক্ষুব্ধ বললে একেবারেই অত্যুক্তি করা হবে না। শুক্রবার সম্প্রচারকারী চ্যানেলে একটা ছবি বারবার করে দেখানো হচ্ছিল। ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে পিচ এবং মাঠ দেখতে গিয়েছেন অধিনায়ক কোহালি। ফেরার সময় দৃশ্যতই হতাশ দেখাচ্ছিল ভারত অধিনায়ককে। শাস্ত্রী তাঁকে কিছু একটা বললেন। হতাশায় টুপি দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন কোহালি। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, ম্যাচ যে শুরু হবে না সেটা বুঝতে বাকি নেই বিরাটদের।

সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার দুঃখপ্রকাশ করেছেন সমর্থকদের কাছে যে, এত ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে বসে থেকেও তাঁরা খেলা দেখতে পারলেন না। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা দুঃখপ্রকাশ করেন। দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কোহালি, ধোনিরা এরপর ফুটবল খেলেন, বাঁ হাতে ব্যাটিংয়ের বিনোদন উপহার দেন। কিন্তু কর্তাদের দিক থেকে সে সবেরও কোনও নামগন্ধ নেই। ম্যাচ আয়োজনে তো ভি ভি এস লক্ষ্মণের শহর ডাহা ফেল-ই, দর্শকদের প্রতি আচরণও মোটেও ‘ভেরি ভেরি স্পেশ্যাল’ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE