Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হারের উদ্বেগের মধ্যে আশঙ্কা কোহালির সেই পিঠের ব্যথা

বোলার ওক্‌স ভারতকে সব চেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন বিরাট কোহালির উইকেট তুলে। এ দিন ছিল ব্যাটসম্যান ওক্‌সের পালা। তাঁর ১৫৯ বলে অপরাজিত ১২০ এবং জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ২-০ এগিয়ে দেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে।

ধাক্কা: দুপুরে ভারতীয় বোলিংকে সামলে সেঞ্চুরি ওক্‌সের। (ডান দিকে) সেঞ্চুরি ফস্কালেন বেয়ারস্টো। রয়টার্স

ধাক্কা: দুপুরে ভারতীয় বোলিংকে সামলে সেঞ্চুরি ওক্‌সের। (ডান দিকে) সেঞ্চুরি ফস্কালেন বেয়ারস্টো। রয়টার্স

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

প্রেস বক্স থেকে উল্টো দিকের স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে দু’টো স্কোর। ক্রিস ওক্‌স ব্যাটিং ১২০। আর তার নীচে ভারতের প্রথম ইনিংস— ১০৭। এগারো জন মিলে ভারত যা করেছে, প্রতিপক্ষের এক জন সেটা পেরিয়ে গিয়েছেন! তা-ও তিনি বিশেষজ্ঞ কোনও ব্যাটসম্যানই নন। অলরাউন্ডার। রাস্তায় মারামারি করা নিয়ে বেন স্টোকসকে আদালতে হাজিরা দিতে না হলে হয়তো এই টেস্টে জায়গাই পেতেন না।

বোলার ওক্‌স ভারতকে সব চেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন বিরাট কোহালির উইকেট তুলে। এ দিন ছিল ব্যাটসম্যান ওক্‌সের পালা। তাঁর ১৫৯ বলে অপরাজিত ১২০ এবং জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ সিরিজে ইংল্যান্ডকে ২-০ এগিয়ে দেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি পেলেন না। কিন্তু ১৪৪ বলে ৯৩ করে তিনি যখন হার্দিক পাণ্ড্যর বলে আউট হয়ে ফিরছেন, যে ভাবে গোটা মাঠ উঠে দাঁড়াল, তাতে মনে হচ্ছিল ১৯৩ করে আসছেন। সেঞ্চুরির চেয়েও অনেক দামী এই ইনিংস। ইংল্যান্ডের গোটা ড্রেসিংরুম বেরিয়ে এল ব্যালকনিতে। তেমনই আলো কমে আসার জন্য আম্পায়ারেরা যখন খেলা থামিয়ে দিলেন, নায়কের সংবর্ধনা পেলেন ওক্‌স। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরাও দাঁড়িয়ে পড়লেন। ক্রিকেটের আদি সৌজন্য মেনে দিনের নায়ককে আগে মাঠ ছাড়তে দিলেন। কোহালিকেও দেখা গেল দাঁড়িয়ে গিয়ে হাততালি দিচ্ছেন। একটা সময় ইংল্যান্ড ৮৯-৪ হয়ে গিয়েছিল। জো রুটকে তখন তুলে নিয়েছেন মহম্মদ শামি। একটু পরে বাটলারও গেলেন। ইংল্যান্ড ১৩১-৫। মনে হচ্ছিল, দু’শোর মধ্যেও যদি ইংল্যান্ডকে রাখতে পারেন বোলাররা, তবু একটা আশা থাকতে পারে। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দিলেন ওক্‌স এবং বেয়ারস্টো। দুই স্পিনার খেলিয়েছিলেন কোহালি। দু’জনের কেউ একটাও উইকেট পেলেন না। ছয় উইকেটের তিনটে শামির, দু’টো নিলেন হার্দিক, একটি ইশান্ত।

কোহালির আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এ বারই নিয়েছে ক্রিস ওক্‌সকে। লর্ডসে তিনিই সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠলেন কোহালির ভারতীয় দলের সামনে। চোট সারিয়ে ফিরেই বলে-ব্যাটে এমন চমৎকার পারফরম্যান্স করেছেন ওক্‌স যে, পরের টেস্টে স্টোকস ফিরলেও তাঁকে কী করে প্রথম একাদশে নেওয়া হবে, সেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

ভারতের জন্য সব দিক দিয়েই ফিরে এসেছে কালো আকাশ। মন্দ আলোর জন্য তৃতীয় দিনের খেলা যখন থামিয়ে দিলেন আম্পায়ারেরা, ইংল্যান্ড এগিয়ে গিয়েছে ২৫০ রানে। ডেভিড গাওয়ার আর নাসের হুসেন কমেন্ট্রিতে তখনই বলাবলি শুরু করে দিয়েছেন, জো রুটের আগেই ডিক্লেয়ার করে দেওয়া উচিত ছিল কি না। তা হলে মেঘলা আকাশের নীচে কয়েকটা ওভার ভারতীয় ব্যাটিংকে ফেলা যেত অ্যান্ডারসন, ব্রড, ওক‌্সদের সামনে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রবিবার সারা দিন বৃষ্টি হতে পারে। সোমবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা সত্তর শতাংশ। শনিবার রাতেই বৃষ্টি শুরু হল। নাসের হুসেনরা এই কারণেই চিন্তিত। ২-০ এগিয়ে যাওয়ার মতো মঞ্চ তৈরি করেও আবহাওয়া না বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের সামনে। আর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আতঙ্কের খবর হচ্ছে, খেলা যদি হয়, মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেই হবে। তার মানে প্রতিকূল পরিবেশে ফের সেই স্টাইল ভাইদের ব্যাটিং দেখার অত্যাচার!

আরও পড়ুন: তেন্ডুলকর নামের চাপ সামলে নেবে অর্জুন, আশায় সচিন

তার চেয়ে অন্য রাস্তাটা অনেক ভাল। ইংল্যান্ডের সর্বনাশই যদি ভারতের পৌষ মাস হয়ে দেখা দেয়। কোহালিকে বাদ দিলে এই ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের যা দুর্ধর্ষ দক্ষতার নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তাতে আবহাওয়ার উপরে ভরসা করাটা অনেক নিরাপদ বাজি। আরও খারাপ হচ্ছে, ওক্‌স এবং বেয়ারস্টোর পার্টনারশিপের পরে মাঠের মধ্যে ভারতীয় দলের শরীরী ভাষাও ভীষণ হাল ছাড়া লাগল। এটা আগে দেখা যেত যখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অধীনে ভারত বিদেশ সফরে আসত আর একটার পর একটা টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হত। কোহালি ক্যাপ্টেন হওয়ার পর থেকে এমন ন্যাতানো হাবভাব দেখা যায়নি। ২-০ হয়ে গেলে আরওই দুমড়ে-মুচড়ে যাবে দলের আত্মবিশ্বাস। উদ্বেগের সব চেয়ে বড় কারণ অধিনায়ক স্বয়ং। যিনি এ দিন বেশ খানিকটা সময়ে মাঠে ছিলেন না। আশঙ্কার খবর পাওয়া গিয়েছে কোহালিকে নিয়ে। তাঁর পিঠে ব্যথা হচ্ছে। এই চোট নতুন নয়। এ বারের আইপিএল খেলার পরে হঠাৎ পিঠে ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন তিনি। মুম্বইয়ে ডাক্তার দেখানোর পরে কাউন্টি খেলতে আসার সিদ্ধান্তও বাতিল করতে হয়েছিল। সেটাই ফিরে এল কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এ দিন মাঠে ফিরে আসার ঠিক আগের মূহুর্তে বাউন্ডারি লাইনের ধারে ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসেছিলেন কোহালি। ওভার শেষ হলেই মাঠে ঢুকবেন বলে।

ওইটুকু সময়েই তাঁকে চোখমুখ কুঁচকে এক বার পিঠে হাত বোলাতে দেখা গিয়েছে। মাঠে ফিরে এসে তিনি স্লিপে দাঁড়িয়েছিলেন। আশি ওভার হওয়া মাত্র নতুন বল নেন তিনি। নতুন বল নিয়ে ইশান্ত শর্মা প্রথম ওভার করার সময় দেখা গেল স্লিপে দাঁড়িয়ে অন্তত দু’বার কোহালি পিঠে হাত বোলাচ্ছেন। এমন কালো করে আসা আকাশ আর হার্ট অ্যাটাক করানো ব্যাটিংয়ের মধ্যে একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কোহালি। তাঁর কিছু হওয়া মানে সিরিজ থেকে ছুটির বাজনা বাজতে আর বাকি থাকল কী!

শোনা যাচ্ছে, ড্রেসিংরুমে ফিরে ফিজিয়োকে দিয়ে পিঠের শুশ্রুষাও করাতে হয়েছে কোহালিকে। তাতেও যে পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি, কয়েক বার পিঠে হাত বোলানো থেকেই পরিষ্কার। তিনি যে রকম ডাকাবুকো চরিত্র তাতে আশা রাখা যায়, ব্যথা হলেও ঠিকই ব্যাট করতে নামবেন। দলকে রক্ষা করার লড়াই চালিয়ে যাবেন। কোহালির পিঠে হাত মানে তো ভারতের মাথায় হাত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Test India England Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE