Advertisement
E-Paper

লকডাউনের পরেও সেই ক্ষিপ্রতা, বিশ্ব মুগ্ধ পঁয়ত্রিশের রোনাল্ডোয়

শুক্রবার সেরি আ-তে দশ জনের লেচ্চার বিরুদ্ধে গতি আর শক্তির মিশেল ঘটিয়ে পর্তুগিজ মহাতারকার দুরন্ত ফুটবল দেখে ফুটবলবিশ্ব ফের মুগ্ধ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০২:২৪
অতিমানবীয়: বয়স বাড়লেও ফিটনেস একই রকম। লেচ্চার বিরুদ্ধে অসাধারণ বাইসাইকেল কিক রোনাল্ডোর। রয়টার্স (বাঁ দিকে) মগ্ন: জিমে নিয়মিত চলে রোনাল্ডোর শারীরচর্চা। টুইটার(ডান দিকে)

অতিমানবীয়: বয়স বাড়লেও ফিটনেস একই রকম। লেচ্চার বিরুদ্ধে অসাধারণ বাইসাইকেল কিক রোনাল্ডোর। রয়টার্স (বাঁ দিকে) মগ্ন: জিমে নিয়মিত চলে রোনাল্ডোর শারীরচর্চা। টুইটার(ডান দিকে)

হোক না বয়স ৩৫। করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউনে ফুটবল থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদেও তিনি যেন কিছুই হারাননি। জুভেন্টাসের হয়ে ইটালীয় লিগের ম্যাচে শুক্রবার আবার তা প্রমাণ করে দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

এই বয়সেও তাঁর শারীরিক সক্ষমতা ক্রীড়াবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। শুক্রবার সেরি আ-তে দশ জনের লেচ্চার বিরুদ্ধে গতি আর শক্তির মিশেল ঘটিয়ে পর্তুগিজ মহাতারকার দুরন্ত ফুটবল দেখে ফুটবলবিশ্ব ফের মুগ্ধ। ৫৩ মিনিটে তিনি গোলের বল সাজিয়ে দিলেন পাওলো দিবালাকে। নিজে প্রচণ্ড জোরে মারা নিখুঁত পেনাল্টিতে গোল করলেন। গঞ্জালো ইগুয়াইনও ৩-০ করলেন রোনাল্ডোরই দুরন্ত ব্যাকপাস থেকে। জুভেন্টাস জিতল ৪-০। চতুর্থ গোল মাতাইস দি লিখ্‌টের। লেচ্চাকে হারিয়ে টানা ন’বার সেরি-আ জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেল জুভেন্টাস। টেবলে দু’নম্বর লাজিয়ো তাদের থেকে সাত পয়েন্ট পিছিয়ে। তুরিনের ক্লাবের পয়েন্ট ২৮ ম্যাচে ৬৯। তবে জুভেন্টাসের টানা নবম খেতাব জয়ের সম্ভাবনা নয়, লেচ্চা ম্যাচের পরে যাবতীয় আলোচনা জুড়ে থাকলেন সি আর সেভেন! শুধু ফের নায়ক হয়ে ওঠাই নয়, শূন্যে ভেসে উঠে যে বাইসাইকেল কিক তিনি নিয়েছেন, গোল না-হলেও তা দেখে ফুটবল দুনিয়ার চোখ বিস্ফারিত!

রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার সময়ই রোনাল্ডোর শারীরিক সক্ষমতা দেখে চমকে যান চিকিৎসকেরা। বলে দেন, তাঁর শারীরিক সক্ষমতা ২০ বছরের অ্যাথলিটের মতো। করোনার জন্য প্রায় তিন মাস নিভৃতবাসে থাকলেও পাঁচ বারের ব্যালন ডি’ওর জয়ীর পেশি আরও শক্তিশালী হয়েছে। গতিতেও কোনও ভাঁটার লক্ষণ নেই। শরীরের কোথাও অতিরিক্ত চর্বির দেখা নেই। এ’সবই জানিয়েছেন জুভেন্টাসের চিকিৎসকেরা। আর তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, রোনাল্ডো নিজেকে এই জায়গায় রাখতে পেরেছেন অক্লান্ত ট্রেনিং চালিয়ে। এমনকি তাঁর সুইমিং পুলেও বসিয়েছেন ট্রেডমিল। জলের মধ্যে দৌড়ের বিশেষ অনুশীলন করার প্রক্রিয়া আরও শক্তি বাড়িয়েছে তাঁর পায়ের। পঁয়ত্রিশেও তাঁর সেরা অস্ত্র বিদ্যুৎ গতি ধরে রাখতে সাহায্য করছে এই অভিনব ট্রেনিং পদ্ধতি।

আরও পড়ুন: জন্মদিনে ঊষাকে শুভেচ্ছা যুবরাজের

করোনা সংক্রমণের জন্য ফুটবল বন্ধ থাকার সময়টা রোনাল্ডো কাটিয়েছেন পর্তুগালের মেদেইরায়। তুরিনে ফেরেন মে মাসে। ইটালির স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁকে একটি বাড়িতে দু’সপ্তাহ নিভৃতবাসে কাটাতে হয়। কিন্তু সেখানেও জুভেন্টাস ট্রেনারদের ডেকে নিয়ে নিজেকে তরতাজা রাখার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। ৩১ মে রোনাল্ডো ইন্সটাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায় জুভেন্টাসের তৃতীয় গোলরক্ষক কার্লো পিনসলিয়োকে নিয়ে দূরপাল্লার শট মেরে তিনি একের এক অসাধারণ সব গোল করছেন। সেই ভিডিয়ো তুলে দিয়ে রোনাল্ডো লিখেছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আগের থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি।’’ পর্তুগিজ মহাতারকার এই ‘মনে হওয়া’ যে কতটা সত্যি, তা শুক্রবার সেরি আ-য় লেচ্চার বিরুদ্ধে ফের প্রমাণিত হল। তাঁর শারীরিক সক্ষমতার যে রিপোর্ট গত ১ জুন জুভেন্টাসের বিশেষজ্ঞরা দেন তাতে দেখা যায়, মার্চে লকডাউন শুরুর সময়ের থেকেও এখন তিনি বেশি সক্ষম।

কী করে সেটা সম্ভব হল?জানা যাচ্ছে, মেদেইরায় থাকার সময়টা রোনাল্ডো প্রত্যেক দিন নিয়ম করে চার ঘণ্টা ফিটনেস বাড়ানোর অনুশীলন করেছেন। কখনও জিমে কাটিয়েছেন। কখনও সাইক্লিং করেছেন। কখনও বা চড়াই রাস্তা ধরে উপরের দিকে দৌড়েছেন। বাড়িতে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা সময়েও শারীরিক কসরত করার ভিডিয়ো রয়েছে। নিভৃতবাসের পরে রোনাল্ডো দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেন ২ জুন। সেখানেও বিরাট চমক। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলমেশিন মাঠে পৌঁছে অনুশীলন শুরু করে দেন নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টা আগে!

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলেছেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত তারকা কার্লোস তেভেজ। তিনিও বলেছেন, অনেক সময় রোনাল্ডো ঘুম চোখেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে অনুশীলনে চলে আসতেন। তেভেজের মুগ্ধতা এতটাই যে মাস ছয়েক পরে বোকা জুনিয়র্সে নিজের শেষ এবং বেনিফিট ম্যাচে লিয়োনেল মেসির সঙ্গে রোনাল্ডোকেও খেলাতে তিনি মরিয়া। তেভেজের মতোই কিংবদন্তি পর্তুগিজ তারকার প্রাক্তন ফিটনেস কোচ জিয়োভান্নি মাউরি জানিয়েছেন, এমনও হয়েছে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ খেলে রাত দু’টোয় বিমান থেকে নেমে তিনি অন্যদের মতো ঘুমোতে বাড়ি না গিয়ে, সোজা পৌঁছে গিয়েছেন ট্রেনিং সেন্টারে!

ফুটবলের প্রতি যাঁর এত আবেগ, এই খেলার জন্য যিনি কার্যত নিজেকেই উৎসর্গ করেছেন, তিনি জীবনের পঁয়ত্রিশতম বসন্তে পা রেখেও যে মাঠ শাসন করবেন তাতে আর আশ্চর্য কী!

Serie A club Juventus Cristiano Ronaldo Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy