নেতাজি ইন্ডোরে বাগান-ভোটের প্রস্তুতি। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার
আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইতে থাকা সনিদের হার কি চব্বিশ ঘণ্টা পরেই মোহনবাগান নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?
রবিবার বাগানের ধুন্ধুমার নির্বাচনের আগের সন্ধেয় তা নিয়েই তুমুল আলোচনা ময়দান জুড়ে। শাসক-বিরোধী দুই শিবিরেই অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে রাত থেকেই।
শনিবার গোয়ায় ওডাফার হাতে বাগান-বধের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় বাগান তাঁবুতে জমাট ভিড়ে উসখুশ। শাসকদলের একাধিক প্রার্থীর কপালে ভাঁজ। বেশির ভাগের মুখে সংশয়ী প্রশ্ন, ‘‘এর পর কি ভোটাররা আর ভোট দিতে আসবেন? এ ভাবে ভোটের আগের দিন কেউ হারে? আরে, ড্র করলেও মুখরক্ষা হত।’’ চিন্তিত মুখে তাদের অনেকেই দৌড়লেন নিজের নিজের এলাকায়। ড্যামেজ কন্ট্রোলে।
বড় কর্তারা অবশ্য তা মানতে চাইছেন না মনে যা-ই থাক না কেন। সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু থেকে অর্থ সচিব পদপ্রার্থী দেবাশিস দত্ত একযোগে বললেন, ‘‘কোনও সমস্যা হবে না। আমরা তো আর চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড় থেকে ছিটকে যাইনি। এখনও সুযোগ আছে জেতার।’’
আরও এক ধাপ এগিয়ে ফুটবল সচিব পদপ্রার্থী সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘লম্বা লিগে হার-জিত থাকেই। পরের তিনটে ম্যাচ জিতলেই তো আই লিগ আমাদের। ভোটের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ভোটে জিতব একশো ভাগ নিশ্চিত।’’
যা শুনে আবার ভোট সংগঠনে প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও ফুটবল সচিব পদে সত্যজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী সুব্রত ভট্টাচার্য হেসে ফেলছেন। ‘‘নির্বাচন কমিটি নিয়ে ওরা নোংরা খেলা খেলছে। নানা ভাবে আমাদের সমস্যায় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। স্বচ্ছ ভোট হলে আমাদের প্যানেলই জিতবে।’’
সুব্রত না সত্যজিৎ— ১২৫ বছরের বাগানে নজিরবিহীন লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতে ফুটবল সচিব হন তা জানতে রবিবার রাত দশটা হয়ে যাবে। যে ভাবে দু’পক্ষই নেতাজি ইন্ডোরের বুথে ভোটার আনার তোড়জোড় করছে তাতে ভোট বেশি পড়লে চূড়ান্ত ফল বেরোতে রাত বারোটাও হতে পারে। শাসকদের অনেকেরই আবার আশঙ্কা কিছু ক্রস ভোটিং হতে পারে।
ভোটের আগের দিনও অবশ্য নেতাজি ইন্ডোর বাগান নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুত নয়। এ দিন রাত আটটায় সেখানে গিয়ে দেখা গেল একুশ বুথের মধ্যে মাত্র আটটা তৈরি হয়েছে। রাত পোহালেই ভোট অথচ ক্লোজ সার্কিট টিভি তখনও বসেনি কোথাও। প্রধান গেটের বাইরে পুলিশ কিছু ‘গার্ড ওয়াল’ বসিয়েছে ভোটারদের লাইন ঠিক করতে। নির্বাচক কমিটির কাউকেও দেখা গেল না কোথাও। যা নিয়ে সরব বিরোধীরা। তাদের সচিব পদপ্রার্থী বলরাম চৌধুরী বললেন, ‘‘কী ভাবে আদালতের রায় মেনে ভোট হবে বুঝতে পারছি না। নির্বাচক কমিটি নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখছে কই?’’
পুরসভা, লোকসভা বা বিধানসভার ভোটে যে ভাবে প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়, সে ভাবেই তৈরি হচ্ছে বাগানের দু’পক্ষ। সঙ্গে চলছে কাদা ছোড়াছুড়িও। বিরোধীগোষ্ঠীর সহ-সচিব পদপ্রার্থী পদ্মশ্রী বিমল রায়ের বিরুদ্ধে শেষমুহূর্তে শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ‘‘উনি তো ইস্টবেঙ্গলের লাইফ মেম্বার। অথচ মোহনবাগানের সহ-সচিব হতে চাইছেন।’’ যা শুনে সুব্রত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘তাতে কী? উনি পদ্মশ্রী। দেশের সম্পদ। সবাই ওকে চায়।’’
কলকাতা জুড়ে বাগান নির্বাচনের ফ্লেক্স-ব্যানারে ভরে গিয়েছে। সবুজ-মেরুন সদস্যদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে আবেদনের চিঠি, নিজেদের প্যানেল। দু’পক্ষ সব মিলিয়ে ভোটার তুলে আনতে ১৪০টারও বেশি ছোট-বড় গাড়ি ভাড়া করেছে বলে খবর। বিরিয়ানি থেকে মটন চাপ, মাছ-ভাত থেকে ফল— রবিবার থাকছে ভোটারদের জন্য। ময়দান অঞ্চলে ভোটার এনে জড়ো করতে দু’পক্ষই ভোট-ক্যাম্প করছে। শাসকরা ভোট পরিচালনা করবে ভবানীপুর তাঁবু থেকে। বিরোধীরা বেছে নিয়েছে আর্মেনিয়ান তাঁবু। সংগঠনে শাসকরা এগিয়ে থাকলেও বিরোধীরাও চেষ্টা চালাচ্ছে পাল্লা দেওয়ার।
সবচেয়ে তাৎপর্যের, বাগান নির্বাচন তৃণমূল-সিপিএমকে পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছে একই শিবিরে। শাসকগোষ্ঠীর প্যানেলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছোটভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় হকি সচিব পদে দাঁড়িয়েছেন। ভোটে জিততে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন রাজারহাট পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি রয়েছেন শাসকদের কর্মসমিতিতে।
ও দিকে আবার দলের চাপে সাংবাদিক সম্মেলন করে নাম তুলে নেওয়ার ঘোষণা করলেও বিরোধীদের অর্থসচিব পদপ্রার্থী বানীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কার্ড তুলেছেন চিঠি পাঠিয়ে।
দেখার, শনিবারে সনিদের হারের পরের দিনই হতাশ বাগান ভোটাররা ক্লাবকর্তা নির্বাচনে কত জন বুথে আসেন? বাগানের হারে কিন্তু বাগান নির্বাচনের জৌলুস অনেকটাই ফিকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy