আটলেটিকো দে কলকাতার জালে তৃতীয় গোল। যুবভারতীতে প্রস্তুতি ম্যাচে রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মহালয়া দিয়ে যেমন দেবীপক্ষের সূচনা হয়, শহরের ফুটবল-পক্ষের বোধন হওয়ার কথা ছিল আজ, রবিবারের যুবভারতী দিয়ে। নির্ঘণ্ট যতই বলুক যুবভারতীর সাম্রাজ্যে আটলেটিকো দে কলকাতার সরকারি পদার্পণের বাকি আরও দিন সাত, আবেগের শহর শুষ্ক সূচি কোনও দিন দেখেনি। দেখবেও না। যে যুদ্ধে ময়দান বনাম আইএসএলের কলকাতা হবে, যে ম্যাচে ভিভিআইপি বক্সে পিকে-অমল, যে ম্যাচে নিজের টিমের বিরুদ্ধেই মাঠে স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— প্রীতি ম্যাচ থাকে সেটা নামে, আদতে টুর্নামেন্ট কিক অফ।
আর ফুটবল-পুজোর ‘দেবীপক্ষের’ সূচনাকেই কি না এমন আতঙ্কের আঁচ ছুঁয়ে গেল! ইপিএলের এক সময়ের ডিফেন্ডার হোসে গঞ্জালেজকে দেখতে হল, তাঁর পাশ দিয়ে অবলীলায় বল নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কোনও এক ড্যানিয়েল বিদেমি! বেবেতো-আদলে আটলেটিকো স্ট্রাইকার ফিকরুর ‘ডান্স উইথ দ্য বেবি’ নাচ নয়, শেষের ফ্রেম হয়ে গেল কোচ অ্যান্টনি হাবাসের মুখ। বিস্ময়, অবিশ্বাস যেখানে দাঁড়িয়ে হাত ধরাধরি করে।
আটলেটিকো দে কলকাতা-১ : পিঙ্কি রায় একাদশ-৩।
মহমেডান স্পোর্টিংকে দিন কয়েক আগে ৭-০ উড়িয়েছে আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর দিল্লি ডায়নামোস। এ রকমই এক প্র্যাকটিস ম্যাচে। আটলেটিকো এ দিন এগিয়েও ছিল বেশ কিছুক্ষণ। কলকাতার চিত্র-সাংবাদিকদের উদ্যোগে ক্যানসারাক্রান্ত পিঙ্কি রায়ের সম্মানার্থে ম্যাচেও তখন বেশ উৎসব শুরুর আবহ। ম্যাচ শুরুর সময়ই ট্রফি দিয়ে দেওয়া হয়েছে আটলেটিকোকে, মাঠে সৌরভের মিনিট সাতেকের ‘ক্যামিও’ দেখে যুবভারতী গ্যালারির ‘দা-দা, দা-দা’ পরিচিত হর্ষধ্বনি। কিন্তু ম্যাচের শেষের পঁয়তাল্লিশ মিনিটে যে এমন বিপরীতধর্মী নাটক লুকিয়ে থাকবে, বোঝা যায়নি।
তিনটে হয়েছে, আরও গোটা দু’য়েক হলেও বলার কিছু থাকত না। কেউ কেউ পরে বলছিলেন, এ দিনের আটলেটিকো দে কলকাতা আসল আটলেটিকো দে কলকাতা নয়। সামনের রবিবার যারা নামবে, তাদের চেহারা অন্য রকম হবে। মাঝের কয়েক দিনে যারা অনেক গুছিয়েও নেবে নিজেদের। এটা ঠিক যে, একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ দিয়ে কোনও টিমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা মূর্খামি। কিন্তু একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ আবার যুদ্ধের মহড়ার কিছুটা আন্দাজও দিয়ে যায়।
যে আন্দাজ বলছে, অ্যান্টনি হাবাসের ডিফেন্স এখনও সম্পূর্ণ তৈরি নয়। এখনও ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকছে। মাঝমাঠ থেকে বল ছিটকে বেরোলে সুরাবুদ্দিন বা অসীম বিশ্বাসরাই কম্পন তুলে দিচ্ছেন।
যে আন্দাজ বলছে, আটলেটিকোর বিদেশিদের সঙ্গে ভারতীয়দের বোঝাপড়ায় আরও খাটাখাটনির দরকার, ভাল রকম দরকার।
ম্যাচের বিরতিতে সুজিত সরকার (বাঁ দিকে) ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে
আটলেটিকো দে কলকাতার অন্যতম মালিক উৎসব পারেখ। ছবি: দেবাশিস সেন
যে আন্দাজ বলছে, যুবভারতীর কৃত্রিম টার্ফ এবং গরম— দু’টোই এখনও ভাল ভোগাচ্ছে বোরহা ফার্নান্দেজদের। লুই গার্সিয়া এ দিন ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সতীর্থদের কেউ কেউ বিপক্ষ ফুটবলারদের কাছে এ দিন নাকি বলে ফেলেছেন, এত গরম সামলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়াজনিত কারণে ভোগান্তি ফুটবল বিশ্বে নতুন নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচু বলিভিয়ায় খেলতে গেলে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনাও উড়ে ফিরে আসে। আটলেটিকোর স্পেনীয় যোদ্ধাদের তাই আচমকা আবহাওয়া সমস্যায় পড়া অস্বাভাবিক নয়। আর তাই বোধহয় শহরের সমর্থককুলের ভেঙে পড়ারও কিছু নেই। যুবভারতীতে যে সমস্যা রিয়াল মাদ্রিদে খেলা বোরহা ফার্নান্দেজের হচ্ছে, সেটা ইতালির প্রাক্তন দুঁদে স্ট্রাইকার দেল পিয়েরোরও হবে। ফ্রান্সের রবার্ট পিরেসেরও হবে।
আসলে স্পেন থেকে কলকাতা—আটলেটিকোর দিনটাই ভাল গেল না। ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ‘দাদা’-রা হারল। ১-৩। প্রীতি ম্যাচে ‘ভাই’-রাও হারল, ওই ১-৩। রবিবার যুবভারতীর যুদ্ধ জিতে উঠে দীপেন্দু বিশ্বাস বলছিলেন, আইএসএলে তাঁর বাজি কেরল। ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের টিম। যে টিমের হাতে যত ভাল ভারতীয় ফুটবলার থাকবে, টুর্নামেন্টে নাকি সেই টিমেরই রমরমা।
দেখা যাক। আর তো সাতটা দিন। তার পরই তো ভারত জুড়ে ‘লেটস ফুটবল’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy