Advertisement
E-Paper

অশ্রদ্ধা করিনি কাউকে, সম্মান প্রাপ্য বিরাটের এই দলটারও

গত তিন বছরে বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এই ভারতীয় দল বিদেশে ৯টি টেস্ট জিতেছে। গত পনেরো-কুড়ি বছরে আর কোনও দলকে আমি দেখতে পাচ্ছি না, যারা এত কম সময়ের মধ্যে এ রকম সফল ভাবে দৌড়তে পেরেছে

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫
যুগলবন্দি: ইংল্যান্ডে সিরিজ হারলেও শাস্ত্রী মনে করেন, কোহালিরা অতীতের যে-কোনও সফল ভারতীয় দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন। ফাইল চিত্র

যুগলবন্দি: ইংল্যান্ডে সিরিজ হারলেও শাস্ত্রী মনে করেন, কোহালিরা অতীতের যে-কোনও সফল ভারতীয় দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন। ফাইল চিত্র

ইংল্যান্ডে বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে করা তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠলেও তিনি সেই অনড়। ১-৪ সিরিজ হারলেও দেশে ফেরার দিনেই ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী বলে দিলেন, তিনি মনে করেন বিরাট কোহালির এই ভারতীয় দল অতীতের যে কোনও সফল দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।

ইংল্যান্ড থেকে বৃহস্পতিবারই মুম্বই ফিরেছেন হেড কোচ। অনেক বার চেষ্টা করার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে আনন্দবাজার। বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে শাস্ত্রী প্রথমেই বলেন তাঁর মন্তব্যকে অবিকৃত ভাবে তুলে ধরা দরকার। ‘‘প্রথমত আমার বক্তব্যটা ভাল করে শোনা দরকার যে, কী বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম, গত তিন বছরে বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এই ভারতীয় দল বিদেশে ৯টি টেস্ট জিতেছে। গত পনেরো-কুড়ি বছরে আর কোনও দলকে আমি দেখতে পাচ্ছি না, যারা এত কম সময়ের মধ্যে এ রকম সফল ভাবে দৌড়তে পেরেছে। একটা নির্দিষ্ট মেয়াদকে ধরে আমি বলতে চেয়েছি, বিরাটরা কারও থেকে পিছিয়ে নেই।’’

বিদেশে কোহালি এখনও পর্যন্ত মোট ২১টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছেন। তার মধ্যে জিতেছেন ৯টিতে। সেই ৯টি জয়ের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে একটি, ইংল্যান্ডে একটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দু’টি। বাকি পাঁচটি শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে। অন্যদের রেকর্ড বার করে দেখা যাচ্ছে (পাশের চার্টে) উপমহাদেশের বাইরে দারুণ কিছু জয়ের শতকরা হার কারও নামের পাশেই নেই। তবে বিদেশের মাঠে কঠিন সিরিজ জেতা বা ড্র করে আসার ভিত্তিতে এগিয়ে থাকবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতীয় দল।

শাস্ত্রীর মন্তব্যের জেরে অনেকেই বলতে থাকেন, তিনি অতীতের অধিনায়ক ও তাঁদের দলকে অপমান করেছেন। কোহালিদের হেড কোচকে অপমানের প্রসঙ্গ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে ক্রিকেট খেলেছি। কমেন্ট্রি বক্সে বসে ক্রিকেট কভার করেছি। সব মিলিয়ে পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এই খেলাটার সঙ্গে যুক্ত। কোনও ক্রিকেটারকে অপমান করাটা আমার ভাবনাতেও আসবে না।’’ দ্রুত এর পর যোগ করছেন, ‘‘তবে অন্যদের সবিনয়ে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, বর্তমান এই দলটারও সম্মান প্রাপ্য। সেটাও যেন দিতে না ভুলে যায় কেউ।’’

ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়কদের সফল অধ্যায় বলতে প্রথম মনে পড়বে অজিত ওয়াড়েকরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জয়। তার আগে এবং পরে টাইগার পটৌডির অধ্যায়। এর পর সব চেয়ে সফল অধ্যায় কপিল দেবের তিরাশি থেকে ছিয়াশি। এই সময়ের মধ্যে কপিলের অধীনে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত, ইংল্যান্ডে ২-০ টেস্ট সিরিজ জিতে এসেছে। নিয়মিত না খেললেও কপিলের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন শাস্ত্রী। ১৯৮৫ সালে গাওস্করের নেতৃত্বে বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারতের আসল নায়ক তিনিই। ‘দ্য চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স’ হয়ে জিতেছিলেন আউডি গাড়ি। এর পর সৌরভ ও দ্রাবিড়ের যুগ। নিয়মিত ভাবে বিদেশের মাঠে ভাল ফল করা শুরু।

কপিলের পরে বিদেশে ভারতের সব চেয়ে সফল অধিনায়ক হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়কে বেছে নিচ্ছেন শাস্ত্রী। বলছেন, ‘‘গত পনেরো-কুড়ি বছরের মেয়াদ যদি ধরা হয়, সেরা অধ্যায় হচ্ছে ২০০৬-২০০৭। কারও প্রতি অসম্মান না করেই বলছি, এই অধ্যায়েই ভারত পর-পর দু’টো টেস্ট সিরিজ জেতে বিদেশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডে।’’ এর পরেই তাঁর বিশ্লেষণ, ‘‘সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে তুলনা করলে বিরাটের এই দল কি খুব পিছিয়ে থাকবে? দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট জিতেছে শুধু তিন জন ভারত অধিনায়ক। রাহুল, ধোনি আর বিরাট। ওয়ান ডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওদের দেশে উড়িয়ে দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট, ওয়ান ডে সিরিজ জিতেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেছে। এর সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা না হয় ছেড়েই দিলাম।’’

ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোহালির দলের সিরিজ জয়ের সময়ে তিনি কোচ ছিলেন না। কোচ ছিলেন অনিল কুম্বলে। কিন্তু শাস্ত্রী বলে দিচ্ছেন, ‘‘কে কোচ, সেটা বড় কথা নয়। আমি কোচের নাম ধরে কিছু বলছিও না। দলটা অধিনায়কের। বিরাট এই দলের নেতা। আমি অধিনায়ককে সামনে রেখে কথাটা বলেছিলাম।’’ এই তিন বছর সময়ে বিরাট যে ভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন দলকে, তা নিয়েও উচ্ছ্বসিত তিনি। পরিসংখ্যানও বিদেশের মাঠে অধিনায়ক বিরাটকে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রাখছে। দ্রাবিড়ের যেমন ব্যাটসম্যান হিসেবে সব মিলিয়ে গড় ৫২.৩১। বিদেশের মাটিতে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৬.৮৮। ওয়ান ডে-তে বিদেশের মাঠে অধিনায়ক হিসেবে দ্রাবিড়ের ব্যাটিং গড় ৩৯.৪৩। সৌরভের সব মিলিয়ে টেস্ট ব্যাটিং গড় ৪২.১৭। বিদেশের মাঠে অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ব্যাটিং গড় ৪৩.৪১। ওয়ান ডে-তে সব দেশ মিলিয়ে সৌরভের ব্যাটিং গড় ৪১.০২। বিদেশে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ান ডে ব্যাটিং গড় ৩২.১৮। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের অধিনায়ক হিসেবে বিদেশে টেস্ট গড় ৩৭.৯২। ওয়ান ডে গড় ৪২.৭৬। ধোনির অধিনায়ক হিসেবে বিদেশে টেস্ট গড় ৩২.৪৬। অধিনায়ক হিসেবে বিদেশে তাঁর ওয়ান ডে গড় ৪৮.২৩। বিরাট কোহালির সেখানে সব দেশ মিলিয়ে টেস্টে ব্যাটিং গড় ৫৩.৯২। বিদেশে অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিং গড় ৫৮.৪৪। ওয়ান ডে-তে সব দেশ মিলিয়ে কোহালির ব্যাটিং গড় ৫৮.২০। কিন্তু বিদেশে অধিনায়ক হিসেবে ২৬ এক দিনের ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং গড় অবিশ্বাস্য— ১০৯.৮৭। কোনও সন্দেহ নেই, অধিনায়ক হিসেবে তিনিই দলের সেরা ম্যাচউইনার। কী টেস্ট, কী ওয়ান ডে-তে! শাস্ত্রী এই ধারাবাহিকতাকে মাথায় রেখেই বলছেন, ‘‘বিদেশের মাঠে এ রকম অধিনায়কোচিত পারফরম্যান্স খুব কমই দেখা গিয়েছে। আমি দু’টো নামই শুধু মনে করতে পারছি। কপিল দেব এবং রাহুল দ্রাবিড়। বিদেশের মাঠে যাদের নেতৃত্বে শুধু দল জেতেইনি, তারা নিজেরাও দারুণ পারফর্ম করেছে।’’

সিরিজ হার নিয়ে ভক্তদের ক্ষোভ থাকলেও শাস্ত্রী এটাও মাথায় রাখতে বলছেন যে, সিরিজে কত বার তাঁরা ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিলেন। তার পর কোনও না কোনও কারণে খেলা ঘুরে গিয়েছে। ‘‘খেলায় স্কোরলাইন মেনে নিতেই হয়। কোনও অজুহাত দেবে না এই দল। কিন্তু এই ১-৪ স্কোরলাইন ভিতরে-ভিতরে দলের প্রত্যেককে খোঁচা দিচ্ছে। সকলে জানি, জেতার কত কাছাকাছি এসেও আমরা পারিনি,’’ বলে দিচ্ছেন শাস্ত্রী। যন্ত্রণাবিদ্ধ শোনায় তাঁকে যখন বিড়বিড় করতে থাকেন, ‘‘আমাদের খুঁতগুলো সারাতে হবে। হাতের মধ্যে শত্রুকে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তবে সিরিজ হেরে গেলেও অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেগুলোর থেকে প্রেরণা নিতে হবে।’’ কী সেই ইতিবাচক দিক? প্রশ্ন করায় শাস্ত্রীয় জবাব, ‘‘এই দলটা সাহসী। চরিত্রের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। না হলে শেষ দিনে দুই রানে তিন উইকেট থেকে ও রকম অবিশ্বাস্য লড়াই দেখা যেত না। এই দল সময়ের সঙ্গে আরও ভাল হবে।’’

সংবাদ সংস্থা পিটিআই খবর করেছিল, ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে শাস্ত্রীর সঙ্গে ময়না-তদন্তে বসবে কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ)। কিন্তু জানা গিয়েছে, বোর্ড থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বৈঠকের বার্তা শাস্ত্রীর কাছে পৌঁছয়নি।

Cricket Test India England Virat Kohli Ravi Shastri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy