গোয়ায় পড়ন্ত বিকেলে লালরিন্দিকাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরোনোর সময় পেয়েছিলেন খবরটা। হোটেলে ফিরেই তাই টিভির সুইচ অন করেন ট্রেভর মর্গ্যান। সেখানে লাল-হলুদের সাহেব কোচ দেখেন, মিনার্ভার বিরুদ্ধে বাগান স্ট্রাইকারদের দৌরাত্ম্য। সনি নর্ডির ধারালো দৌড়।
মঙ্গলবার মোহনবাগান ম্যাচ শেষেই টেলিফোনে ধরা হল ইস্টবেঙ্গল কোচকে। মর্গ্যানের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘বুধবারের চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচটা আমাদের কাছে এখন মাস্ট উইন ম্যাচ হয়ে গেল।’’
আই লিগে এ বার বাগানের জয়ের হ্যাটট্রিকে কি তা হলে চাপ বেড়ে গেল মর্গ্যান ব্রিগেডের উপর?
ফোনের ও প্রান্ত থেকে গম্ভীর গলায় প্রথমে ভেসে আসে পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কীসের চাপ?’’ তার পর ইস্টবেঙ্গল কোচ পরোক্ষে তা স্বীকার করে নিজেই বলে বসেন, ‘‘দু’ম্যাচে আমাদের পয়েন্ট চার। বুধবার জিতলে সাত হবে। কিন্তু ড্র করলে বা হারলে বেঙ্গালুরু, মোহনবাগান কিছুটা এগিয়ে যাবে। আই লিগ জিততে গেলে চার্চিলের বিরুদ্ধে গোয়া থেকে তিন পয়েন্ট চাই-ই। তা যে কোনও মূল্যেই হোক ।’’
লাল-হলুদে গত তেরো বছর ধরে আই লিগ প্রায় ডোডো পাখি হয়ে গিয়েছে। গত চার-পাঁচ বছরে দেশের সেরা টিম গড়েও কেন খেতাব আসেনি তার কারণ খুঁজতে ফেলু মিত্তিরকে ডাকতে পারেন কর্তারা। তাঁবুতে কান পাতলে কেউ বলেন, ব্যাপারটা টেকনিক্যাল। কেউ বলেন, লাক ফ্যাক্টর কাজ করেনি।
যদিও এ বার টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ‘লাক ফ্যাক্টর’ কাজ করছে ব্রিটিশ কোচের টিমে। প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে শেষ মুহূর্তে সমতা ফেরানো। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র হয়ে যাওয়ার মুখে উইলিস প্লাজার গোলে কাঙ্ক্ষিত তিন পয়েন্ট। চার্চিলের বিরুদ্ধে চওড়া কপাল-ই কি সাহেব কোচের এক্স ফ্যাক্টর এ বার? মর্গ্যান বলছেন, ‘‘লাক নয়। ছেলেদের বলেছি কাল শুরুতে গোল করো। যত পারো গোল করো। যাতে চাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।’’ একটু থেমে ফের বলতে শুরু করেন, ‘‘চার্চিল গত দু’ম্যাচে জেতেনি। কাজেই ওরা নিজেদের মাঠে পয়েন্টের জন্য মরিয়া হবে। আমাদের জেতা তাই খুব সহজ হবে না।’’
এমনিতেই গোয়ায় চার্চিল ইস্টবেঙ্গলের শক্ত গাঁট। তিন বছর আগে দু’দলের শেষ সাক্ষাতে কলকাতার মাঠেও হেরেছিল লাল-হলুদ। সাহেব কোচকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর নিজের হাতে গড়া এ বারের টিমের খেলা এখনও তেমন জমাট বাঁধেনি। লাল-হলুদে তাঁর প্রথম ইনিংসের সেই পাসিং ফুটবলেরও দেখা নেই। এটা কি বিদেশিরা পরে আসায় এখনও টিমের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম না হতে পারার জন্য? মর্গ্যান বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের পর আমার হাতে বিদেশির সংখ্যা বেড়েছে। শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে তাই টিম প্রথম ম্যাচের মতো হতাশ করেনি। চার্চিলের বিরুদ্ধেও ওয়েডসন-প্লাজা জুটির উপরই ভরসা রাখছি।’’
টিম সূত্রে খবর, ভারতে এসে পরিবেশের সঙ্গে এখনও মানিয়ে নিতে পারেননি এশিয়ান কোটার বিদেশি আমিরভ। ফলে বুধবার তাঁর প্রথম একাদশে থাকার সম্ভাবনা কম। এ দিন সকালে অনুশীলনে গোড়ালিতে সামান্য চোটও পেয়েছেন কিরঘিজস্তান স্ট্রাইকার। ফলে গত ম্যাচের টিমই অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা। এ দিন তিলক ময়দানে ইস্টবেঙ্গলকে ঘণ্টাখানেক প্র্যাকটিস করার জন্য ছেড়েছিলেন চার্চিল কর্তারা। কিন্তু বিপক্ষের ফুটবল-গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে মর্গ্যান প্র্যাকটিস সেরে নেন হোটেলের কাছের মাঠে। সেখানেই তিনি খবর পান চার্চিলের আদিল খান এবং ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের চোট রয়েছে। লিগ টেবলে এখনও পয়েন্ট না পাওয়া চার্চিল দলের কোচ অ্যালফ্রেড ফার্নান্ডেজ বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের মাস্ট উইন সিচুয়েশন হলে আমাদের কাছে এটা মাস্ট-নট-লুজ ম্যাচ। পয়েন্ট চাই-ই চাই।’’
দেখার, বুধবার আরব সাগরের তীরে ‘জিততেই হবে’ আর ‘হারা চলবেই না’-র ডুয়েলে কোন দিকে ঢলে পড়েন ফুটবল-ঈশ্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy