লড়াই শনিবার নয়াদিল্লির ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।
রিংয়ে যখন নামতেন, হাতে থাকত একটা বিশাল হাতুড়ি। ছ’ফুট চার ইঞ্চির দানবীয় চেহারাটা অনেকের শিরদাড়া দিয়েই আতঙ্কের চোরাস্রোত বইয়ে দিত।
বছর কুড়ি ধরে রেসলিং জগত শাসন করার পরে রিং থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি। অনেক দিন বাদে আবার প্রত্যাবর্তন ঘটছে তাঁর। এ বার ভারতের মাটিতে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে।
জন্মগত নাম পল মাইকেল লেভেস্ক। রিংয়ে প্রথমে নাম নিয়েছিলেন হান্টার হার্স্ট হেমসলে। যে নামে হয়তো অনেকেই চিনতে পারবেন না তাঁকে। কিন্তু দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন অন্য এক নামে— ট্রিপল এইচ।
আগামী শনিবার, ভারতের মাটিতে প্রথম লড়াইয়ে নামবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ডব্লিউ ডব্লিউ ই মহাতারকা। নামবেন সেই ভারতীয় তারকার বিরুদ্ধে, যিনি এখন রিংয়ে ঝড় তুলছেন— জিন্দর মহল। রিংয়ে যার পরিচয় ‘দ্য মহারাজা’ নামে। সেই লড়াইয়ের আগে মার্কিন মুলুক থেকে ফোনে শোনা গেল ট্রিপল এইচের হুঙ্কার— ‘‘রিংয়ে নেমে বুঝিয়ে দেব, আসল মহারাজা কে!’’
আরও পড়ুন: দিল্লি জয় আর ৭ উইকেট দূরে
মঙ্গলবার সকালে আনন্দবাজারের সঙ্গে ফোনে যখন কথা শুরু করেছিলেন, মেজাজটা শান্তই ছিল। কিন্তু যে-ই জিন্দর মহলের কথা উঠল, সামনে চলে এল সেই ট্রিপল এইচ মেজাজ। মহারাজা নামটা শুনেই যেন ক্ষেপে গেলেন ফোনের ওপারে থাকা মানব-দানব। ‘‘আমি যখন আগের বার ভারতে এসেছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে জিন্দর মহলের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। জানতে চাইছিল, ও কেমন রেসলার। আপনাদের মহারাজা বা জিন্দর কেমন রেসলার, সেটা আর ক’দিনের মধ্যেই জেনে যাবেন, যখন ও রিংয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়তে নামবে।’’ একটু থেমে শুনিয়ে রাখলেন সেই চরম হুশিয়ারি— ‘‘ওকে শিক্ষা দিতেই এসেছি আমি। নরকদর্শন হয়ে যাবে জিন্দরের।’’
মাস দু’য়েক আগে কানাডা থেকে যখন ভারতে এসেছিলেন জিন্দর, তখনই তিনি ‘ডব্লিউডব্লিউই লাইভ’-এর এই লড়াইয়ের হোমওয়ার্ক শুরু করে দেন। চলে যান স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকরের কাছে। তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন শনিবারের বাউটে থাকার জন্য। সচিন তো বটেই, নয়াদিল্লির ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যাঁরা থাকবেন, তারা কিন্তু জিন্দরের জন্যই গলা ফাটাবেন। এই সমর্থন কি লড়াইয়ের ভাগ্যে প্রভাব ফেলতে পারে? প্রায় ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন ট্রিপল এইচ, ‘‘আমি দর্শকদের উল্লাসও দেখেছি, ওদের বিদ্রুপও শুনেছি। আমার কিছু আসে যায় না কে কাকে সমর্থন করছে। জিন্দরকে রিংয়ে নেমে প্রমাণ করতে হবে, ও কত বড় ফাইটার।’’ এর পরে ভারতীয় সমর্থকদের উদ্দেশে একটা বার্তাও দিয়ে রাখলেন তিনি, ‘‘আমি কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে রেসলিং করছি। আমি জানি, ভারতেও আমার প্রচুর ভক্ত আছে। আমার তো মনে হয়, তাঁরা আমাকেই সমর্থন করবেন। আর যদি নাও করেন, তা হলেও কিছু যায় আসে না আমার। মনে রাখবেন, সেরা ফাইটারই রিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে সে দিন।’’
শুক্রবার রাতে ভারতে চলে আসার কথা তাঁর। প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ে নয়, কথা শুনে মনে হল, একটা ব্যাপার কিছুটা চিন্তায় রেখেছে তাঁকে। ভারতীয় খাদ্য। বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় খাদ্য খুবই আকর্ষণীয় সন্দেহ নেই, কিন্তু যারা অভ্যস্ত নয়, তারা সমস্যায় পড়ে যেতে পারে। যেমন আমি। বিশেষ করে রিংয়ে নামার আগে ঝুঁকি নেওয়া চলবে না। তাই আমার ডায়েট নিয়ে আমি খুব সতর্ক থাকব।’’ এর পরেই অবশ্য যোগ করছেন, ‘‘ভারত কিন্তু আমার দারুণ লাগে। আগের বার খুব উপভোগ করেছি। এ বার অবশ্য বেশি সময় থাকা হবে না।’’
ট্রিপল এইচ মানে শুধু রেসলিং, তা কিন্তু নয়। হলিউডের বেশ কিছু সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকী শেষবার যখন মুম্বই এসেছিলেন, তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল ‘শাহেনশা’ সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগও— ‘রিস্তে মে তো হাম তুমহারে বাপ লাগতে হ্যায়...’। বলিউড সিনেমায় কি অভিনয় করার ইচ্ছে আছে? জবাব এল, ‘‘বলিউড বেশ চিত্তাকর্ষক। হলিউডের থেকে আলাদা। তবে এ বার আমার মাথায় সিনেমার কোনও চিন্তা নেই। আমি শুধু ভাবছি এই লড়াই আর ডব্লিউডব্লিউই-র ভবিষ্যতের কথা।’’
কিন্তু ধরুন, যদি আপনার কাছে প্রস্তাব আসে, তা হলে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চান? হিরো না ভিলেন? চাপা হাসির সঙ্গে জবাব আসে, ‘‘আমাকে কিন্তু ভিলেন হিসেবেই ভাল মানায়।’’
ভারতীয় দর্শকদের কাছে শনিবার তিনি নায়ক না খলনায়ক, কী চেহারায় হাজির হন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy