Advertisement
E-Paper

দু’দশক পরে বাংলার ছোটরা ভারতসেরা

উনিশ বছর পর ফের ক্রিকেটে ভারতসেরা। দাদারা পারেননি। কিন্তু ভাইয়েরা তো পারলেন।রবিবাসরীয় ঝাঁ চকচকে ইডেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঝলমলে আসর বসার অনেক আগেই সুখবরটা এসে যায় বঙ্গ ক্রিকেটের হেডকোয়ার্টারে। তাই সকাল থেকেই যেন বিয়েবাড়ির মেজাজ ইডেন ক্লাব হাউসে।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৮
ট্রফি নিয়ে টিম বাংলা। ছবি:নিজস্ব চিত্র

ট্রফি নিয়ে টিম বাংলা। ছবি:নিজস্ব চিত্র

উনিশ বছর পর ফের ক্রিকেটে ভারতসেরা। দাদারা পারেননি। কিন্তু ভাইয়েরা তো পারলেন।

রবিবাসরীয় ঝাঁ চকচকে ইডেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঝলমলে আসর বসার অনেক আগেই সুখবরটা এসে যায় বঙ্গ ক্রিকেটের হেডকোয়ার্টারে। তাই সকাল থেকেই যেন বিয়েবাড়ির মেজাজ ইডেন ক্লাব হাউসে। সক্কাল সক্কাল বর বিয়েবাড়িতে এসে পড়লে সে বাড়ির চেহারা যা হতে পারে, অনেকটা সে রকমই যেন।

রবিবার ফিরোজ শাহ কোটলায় অনূর্ধ্ব-১৯ কোচবিহার ট্রফির ফাইনালে প্রথম ইনিংসে দিল্লির চেয়ে ৭৯ রানে এগিয়ে গিয়ে জাতীয় যুব ক্রিকেটের খেতাব জিতল ইরফান আনসারির দল। ১৯৮৭-র ডিসেম্বরে যা জিতেছিলেন ধর্মেন্দ্র সিংহ, লক্ষ্মীরতন শুক্লরা, ১৯ বছর পর সেই মাইলফলক ফের দিল্লির বুকে পুঁতলেন সৌরভ সিংহ, কণিষ্ক শেঠ, সুদীপ ঘরামি, রাজর্ষি মিত্র, ইশান পোড়েলরা। বাংলার ক্রিকেটকে স্বপ্ন দেখানো শুরু করলেন তাঁরা।

রবিবার ইডেনে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে আলোচনাও ছাপিয়ে যায় রাজধানীতে বাংলার জাতীয় যুব ক্রিকেট জয়ের চর্চা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দুপুরে ইডেনে ঢুকেতে ঢুকতে বললেন, ‘‘এটা একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। ছেলেরা ফিরুক। ওদের নিয়ে বড় কিছু একটা করা যাবে।’’ বিদায়ী যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলার জুনিয়র ক্রিকেট, তিনি সকাল থেকেই অভিনন্দনে ডুবে। বললেন, ‘‘সিএবি ছাড়ার আগে এই একটাই সাধ ছিল। জুনিয়র বাংলা টিমটাকে ভারতসেরা করা। সিএবি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আর কোনও আক্ষেপ থাকবে না।’’ বাংলার ছেলেদের জন্য দশ লক্ষ টাকার বোনাস ঘোষণা করলেন তিনি। সেটা আবার বাড়তেও পারে।

উনিশ বছর আগের সেই দলের কেউ এখনও খেলছেন, কেউ কোচ। এক সদস্য আজ মন্ত্রী। সকাল থেকেই এ দিন শহরের বাইরে ছিলেন তিনি। লক্ষ্মীরতন শুক্ল। খবর পেয়েছেন সকালেই। বললেন, ‘‘বাংলার ক্রিকেটের এই দুর্দিনে সুখবরটা শুনে সত্যিই খুব ভাল লাগছে। বাংলার রাস্তায় অটো, মিনিবাস চেপে বড় হওয়া ক্রিকেটাররা যখন সাফল্য আনে, তখন সেই সাফল্য অনেক বেশি তৃপ্তির হয়। এটাও সে রকমই একটা।’’

কলকাতায় যখন এমন বাঁধভাঙা খুশির বন্যা, দিল্লিতে তখন ফাঁকা মাঠে চাকচিক্যহীন ফাইনালের পর নিখিল চোপড়ার হাত থেকে ট্রফি নেওয়া ছাড়া বলার মতো আর কোনও কথা নেই বাংলার ছেলেদের। আগের রাতে ৪২ রানের ‘বোঝা’ মাথায় নিয়ে শুতে গিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান সৌরভ সিংহ। বোঝা-ই বটে। এই ৪২টা রান তোলার পিছনে যে কী পরিমান দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই ছিল, তা শোনা গেল ১৯৬ রান করা সৌরভের মুখ থেকেই। লখনউয়ের এক কনস্টেবল-পুত্র ফোনে বললেন, ‘‘কোচ বলে দিয়েছিলেন, ধরে খেলবি, তাড়াহুড়ো করবি না। ইচ্ছে করছিল মেরে রানটা তুলে দিই। আর কতক্ষণ চাপ নেব রে বাবা? কিন্তু কোচের কথা এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলিনি।’’

অন্য দিকে কণিষ্ক শেঠ। কেরিয়ার প্রায় শেষ করে দেওয়ার মতো চোট সারিয়ে ফিরে যে পেস বোলার এই টুর্নামেন্টে আগের দুই ম্যাচে চোদ্দটা উইকেট নিয়েছেন, তাঁর ব্যাট থেকে যে ৯১টা মহামূল্যবান রান পাওয়া যাবে, তা ভাবাই যায়নি। ষষ্ঠ উইকেটে সৌরভের সঙ্গে কনিষ্কের ১৮২ রানের পার্টনারশিপই বাংলাকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। শ্যামবাজার ক্লাবের ক্রিকেটার সৌরভ বলছিলেন, ‘‘কণিষ্ক এত ভাল সঙ্গ না দিলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া হতই না। আমরা ঠিক করেই নিয়েছিলাম, নিশ্চিত না হয়ে কোনও বল ব্যাটে ছোঁয়াব না। রান আপনিই আসবে।’’

দলের সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারি সন্দীপন দাসকে এই ম্যাচে বসিয়ে স্পিনার রাজর্ষি মিত্রকে দলে আনার মাস্টারস্ট্রোকই ফাইনালে কোচ প্রণব নন্দীর সেরা চাল বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন, তাঁকে জুনিয়র দলের কোচ করে আনাটা আরও বড় ওভার বাউন্ডারি। কোচ কিন্তু সমস্ত কৃতিত্ব দলের ছেলেদের দিয়ে বলছেন, ‘‘কোচ তো আর ম্যাজিক করতে পারে না। মাঠে নেমে খেলতে হয় সেই ছেলেদেরই। আমাদের ছেলেরা এ বার দুর্দান্ত খেলেছে। আমি শুধু ওদের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছি মাত্র।’’

শেষ রঞ্জি ট্রফি আনা বাংলার ক্যাপ্টেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘কোচ প্রণব নন্দীকে অসংখ্য অভিনন্দন। ও-ই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করল আমাদের। এই জয়টার চেয়ে বড় খবর আমার কাছে আর কিছু নেই। ছেলেগুলোকে এ বার ঠিকমতো তৈরি করতে হবে। এরাই তো বাংলার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।’’ আর ভবিষ্যতের তারকা তৈরির দায়িত্ব সদ্য পাওয়া সৌরাশিস লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘আগেরবার যখন কোচবিহার ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা, তখন আমি আন্ডার সিক্সটিন খেলতাম। এই ছেলেগুলোর সঙ্গে না খেলতে পারি, কাজ করার সুযোগ তো পাচ্ছি। এটাই বা কম কী?’’

এ বার এই সৌরভদের নিয়েই লড়াই ও স্বপ্ন দেখা শুরু বঙ্গ ক্রিকেটের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: দিল্লি প্রথম ইনিংস ৩১৪ (আকাশ ৪-৯২, রাজর্ষি ৩-৬৫), বাংলা প্রথম ইনিংস ৩৯৩ (সৌরভ ১৯৬, কনিষ্ক ৯১), দিল্লি দ্বিতীয় ইনিংস ৬০-৪। (ম্যাচ ড্র, প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকায় জয়ী বাংলা)।

Cooch Behar trophy Under 19 Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy