Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হেরে বিক্ষোভের মুখে ইস্টবেঙ্গল

তেরো নম্বর ম্যাচেই উলফ-এর গ্রাসে পড়ে সমর্থকদের রোষে ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান! বারাসতে চার্চিল ব্রাদার্সের সেই অ্যান্টনি উলফ গোল করে ও করিয়ে লাল-হলুদের লিগ জয়ের স্বপ্নে এমন ধাক্কা দিলেন যে ম্যাচ শেষে মর্গ্যান অনুগামীরাই ধ্বনি তুললেন, ‘‘মর্গ্যান হঠাও। ইস্টবেঙ্গল বাঁচাও।’’

প্রতিবাদ: ম্যাচের পরে অশান্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রতিবাদ: ম্যাচের পরে অশান্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

চার্চিল ব্রাদার্স ২ : ১ ইস্টবেঙ্গল

তেরো নম্বর ম্যাচেই উলফ-এর গ্রাসে পড়ে সমর্থকদের রোষে ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান!

বারাসতে চার্চিল ব্রাদার্সের সেই অ্যান্টনি উলফ গোল করে ও করিয়ে লাল-হলুদের লিগ জয়ের স্বপ্নে এমন ধাক্কা দিলেন যে ম্যাচ শেষে মর্গ্যান অনুগামীরাই ধ্বনি তুললেন, ‘‘মর্গ্যান হঠাও। ইস্টবেঙ্গল বাঁচাও।’’

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের রণংদেহী এই মেজাজ দেখে মর্গ্যান ড্রেসিংরুমে ফিরলেন হাততালি দিতে দিতে। তার পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তাঁর বিস্ফোরণ, ‘‘প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমাদের রক্ষণ নিয়ে ওরা ছেলেখেলা করল! ছেলেদের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব।’’ কোচের সহকারী ওয়ারেন হ্যাকেট ম্যাচ শেষে আবার রেফারির দিকে তেড়ে গিয়েও বিতর্ক বাড়ালেন।

হোটেলে ফেরার পথে যা শুনে হাইভোল্টেজ হাসি মুখে দিনের অন্যতম নায়ক উলফ বলছিলেন, ‘‘ওদের দুই স্টপারের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবটা শুরুতেই বুঝেছিলাম। অভিজ্ঞতা দিয়ে সেখানে আঘাত করেই ফল পেয়েছি।’’

ক্রিস গেইলের ভক্ত ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর প্রাক্তন বিশ্বকাপার যখন এ কথা বলছেন তখন সমর্থকদের বিক্ষোভের লাভাস্রোত বইছে স্টেডিয়ামের মিক্সড জোনে। একদল সমর্থক সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন মর্গ্যানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে। ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তা তেড়ে গিয়ে প্রতিবাদ করলে আরও তীব্র হয় বিক্ষোভ। এ বার সেই কর্তা ডেকে আনেন এক ক্লাব কর্মীকে। তিনি জটলা থেকে একজনকে কলার চেপে টেনে আনতে গিয়ে মাটিতে ফেলে দিলে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে। কেভিন লোবো আর ওয়েডসনের ভাই জুনিয়র আসরে নেমে হাত জোড় করে সমর্থকদের ঠাণ্ডা না করলে তা অন্য মোড় নিতে পারত। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।

সব দেখে লাল-হলুদ জনতার প্রশ্ন, অতীতের সালগাওকর, ইউনাইটেড স্পোর্টসের মতো এ বারও কি চার্চিল ব্রাদার্স আই লিগের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে গেল?

গোয়ায় গিয়ে এই ম্যাচটাই জিতে ফিরেছিলেন মর্গ্যান। কিন্তু সেই চার্চিল বদলে দিয়েছেন নতুন কোচ ডেরেক পেরিরা। এ দিনের ম্যাচ ধরে চার ম্যাচে তিন জয় আর এবং এগারো গোল হয়ে গেল ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজদের।

শুরু থেকেই এ দিন ডান দিক দিয়ে কোনও আক্রমণ ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। দুই স্টপার আনোয়ার, বুকেনিয়ার মধ্যেও কে ট্যাকলে যাবেন আর কে-ই বা কভার করবেন তার ঠিক ছিল না। সেই সুযোগেই উলফ এবং ক্রোমার গোল। প্রথম গোলের সময় আনোয়ার এবং গোলকিপার রেহনেশ দোনোমোনো করলেন। আর বুকেনিয়ার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। দ্বিতীয়ার্ধে আর তাঁকে মাঠে রাখার ভুল করেননি মর্গ্যান।

ইস্টবেঙ্গল কোচ তা হলে কেন অর্ণবকে শুরু থেকে নামালেন না? কেনই বা জ্যাকিচন্দকে না নামানোর ধনুক ভাঙ্গা পণ করেছেন? কেন সেই মান্ধাতা আমলের রক্ষণ থেকে লম্বা বল রবিনদের জন্য ভাসিয়ে দেওয়ার কৌশল তার উত্তর নেই। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য নিখিল পুজারি ডান দিকে চলে আসায় আক্রমণ বাড়ে লাল-হলুদের। এই সময়েই ক্রিস্টোফার পেইনের গোল। কিন্তু চার্চিল এর পরেই নিজেদের গোলের সামনে ভিড় বাড়িয়ে দেওয়ায় গোল পায়নি ইস্টবেঙ্গল।

সাংবাদিক সম্মেলনে চার্চিল কোচ ডেরেক পেরিরা বলছিলেন, ‘‘এটা ম্যাজিক নয়। কলকাতার দুই প্রধানের থেকে ছয় পয়েন্ট তুলে অবনমন বাঁচানোর দিকে কিছুটা এগোতে পারলাম।’’

এ দিন হেরে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল। সঙ্গে উঠতে শুরু করল প্রশ্নটা—আই লিগে মর্গ্যানের ‘কুখ্যাত’ কপাল কি এ বারও কাজ করতে শুরু করে দিল তেরো নম্বর ম্যাচ থেকে!

ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ, রবিন গুরুং, বুকেনিয়া (অর্ণব), আনোয়ার, রবার্ট, রওলিন (লালরিন্দিকা) মেহতাব, রফিক (প্লাজা), নিখিল, রবিন, পেইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unrest East Bengal Defeat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE