Advertisement
E-Paper

সৌরভের ডাকে পুণেতে বাংলার জন্য মাস্টার লক্ষ্মণ

১৯৮৯-৯০ মরসুমের সেই রঞ্জিজয়ী দলের তরুণতম সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট। আর চলতি মরসুমে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে ফের ভারত সেরা হওয়ার দরজায় কড়া নাড়ছে মনোজ তিওয়ারির বাংলা।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
জুটি: সৌরভ ও লক্ষ্মণ। দু’জনে সক্রিয় নেপথ্যে। —ফাইল চিত্র।

জুটি: সৌরভ ও লক্ষ্মণ। দু’জনে সক্রিয় নেপথ্যে। —ফাইল চিত্র।

দিল্লির বিরুদ্ধেই রঞ্জি ফাইনালে তাঁর অভিষেক। তাঁর সেই আবির্ভাব ম্যাচেই স্বাধীনতার পর প্রথম বার রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলার।

১৯৮৯-৯০ মরসুমের সেই রঞ্জিজয়ী দলের তরুণতম সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট। আর চলতি মরসুমে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে ফের ভারত সেরা হওয়ার দরজায় কড়া নাড়ছে মনোজ তিওয়ারির বাংলা। রবিবার থেকে পুণেতে শুরু হতে চলা সেই সেমিফাইনাল ম্যাচে বাংলার প্রতিপক্ষও ফের দিল্লি।

ক্রিকেটার হিসেবে রঞ্জি জয়ের পর এ বার সেই ট্রফি ফের বাংলায় আনতে প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এ বার বের করলেন তাঁর তুরুপের তাস। সেই তাসের নাম ভি ভি এস লক্ষ্মণ। সৌরভের ইচ্ছাতেই বাংলা ক্রিকেটে ‘ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি’র সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যাটিং পরামর্শদাতা সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে মনোজ তিওয়ারির বাংলা দলকে ‘ফোকাস্ড’ রাখতে দু’দিনের জন্য উড়ে এসেছেন পুণেতে। উদ্দেশ্য, ঋষভ পন্থ-গৌতম গম্ভীরদের দিল্লির বিরুদ্ধে নামার আগে বাংলা দলের ব্যাটিং-কে আরও দুর্ভেদ্য করা।

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে দুই তারকা পুত্র

ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি-তে ব্যাটিং কোচ হিসেবে লক্ষ্মণ আসার পরে এই প্রথম রঞ্জি সেমিফাইনালে বাংলা। ব্যাটিং বিভাগে সকলেই ফর্মে। এমনকী, যে অনুষ্টুপ মজুমদার বছর কয়েক আগেও ফর্ম হাতড়াচ্ছিলেন এবং এক সময় ভেবেছিলেন খেলা ছেড়ে দেবেন, সেই অনুষ্টুপের ব্যাটেও চলতি মরসুমে রানের বন্যা বইছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ ম্যাচে তিনটে শতরান করে ফেলেছেন তিনি। গোটা মরসুমে এ পর্যন্ত ১৫টি শতরান করেছেন বাংলার ব্যাটসম্যানরা।

গৌতম গম্ভীরদের দিল্লির বিরুদ্ধে এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ফাইনালে ওঠা যাবে সহজেই। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলা দল পুণেতে পা দেওয়ার আগেই পুণের টিম হোটেলে ঢুকে পড়েছিলেন লক্ষ্মণ। অধিনায়ক-সহ দলের সিনিয়ররা ব্যাপারটা জানলেও দলের কয়েকজন জুনিয়র ক্রিকেটার সকালে ব্রেকফাস্ট টেবলে লক্ষ্মণকে প্রথম দেখেন।

দলের কোচ সাইরাজ বাহুতুলে বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকেলেই হোটেলে ঢুকে পড়েছিল ভিভিএস। এ দিন আমাদের অনুশীলনে আগাগোড়া সব কিছু খুঁটিয়ে দেখার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে যে সব জায়গায় এখনও সমস্যা রয়ে গিয়েছে, সেগুলো ঠিক করে দিতে সারাক্ষণ নেটে সতর্ক নজর নিয়ে ঘুরেছে ও। আলাদা করে সময় দিয়েছে প্রত্যেককে।’’

এ দিন সকাল এগারোটা থেকে অনুশীলন ছিল বাংলার। যেখানে অভিমন্যু ঈশ্বরন থেকে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়— সবাই নেটে ব্যাট করার সময় পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন লক্ষ্মণ। কেউ সামান্য ভুলভ্রান্তি করলেই সেগুলো শুধরে দিচ্ছিলেন। এমনকী, মনোজ তিওয়ারি, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ মজুমদার-সহ বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানকে বল ছুঁড়েও অনুশীলন করাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

শুধু তাই নয়, গত কয়েক মরসুম ধরে যে স্লিপ ক্যাচিং সমস্যা ডেকে এনেছে বাংলার, সেই সমস্যা দূর করতে এ দিন পালা করে স্লিপ ক্যাচিংও অনুশীলন করিয়েছেন লক্ষ্মণ।

দলের অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বলছেন, ‘‘লক্ষ্মণ ভাই আসায় দলের ছেলেদের মোটিভেশন বাড়বে। দলের সবার সঙ্গে কথা বলে উনি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন।’’ হায়দরাবাদের এই প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার নিজে আশাবাদী সেমিফাইনালে বাংলার ভাল ফল করার ব্যাপারে। এ দিন নেট প্র্যাকটিস সেরে হোটেলে ফেরার সময় লক্ষ্মণ বলে যান, ‘‘ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছে। গত ম্যাচে সুদীপ ছিল না। কিন্তু ঋত্বিক ডাবল সেঞ্চুরি করে দারুণ খেলে দিয়েছে। দলে থাকার জন্য একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার এই যে আবহ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ভাল ব্যাপার। দিল্লির বিরুদ্ধে এটাই আমাদের অন্যতম বড় শক্তি। ছেলেদের মোটিভেশনটা ঠিকঠাক রাখতেই দু’দিনের জন্য উড়ে এসেছি এখানে।’’

বাংলার ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি-র ব্যাটিং কোচ সঙ্গে এটাও যোগ করলেন, ‘‘বড় ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাস থাকলেই যুদ্ধ অর্ধেক জেতা হয়ে যায়। আর ছেলেরা যদি মাঠে নামার আগে জেনে যায়, কী করা চলবে না, তা হলে ওদের কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেই কাজটাই করার চেষ্টা করেছি।’’

কিন্তু হঠাৎ সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে লক্ষ্মণকে বাংলা শিবিরে হাজির করার নেপথ্য নায়ক কে?

সিএবি-র যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়া বলছেন, ‘‘নক-আউটের সময় লক্ষ্মণকে দিয়ে দু’দিনের ক্লাস করানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেটা এ বার হয়ে গেল। পুরো বিষয়টা দেখছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।’’ আর সৌরভ নিজে কী বলছেন? পুণে থেকে ফোনে ধরা হলে সিএবি প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘‘দিল্লির বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে লক্ষ্মণ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেদের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে দিলে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সেটা ভেবেই লক্ষ্মণকে পুণে পাঠিয়েছি। ফাইনালে উঠলে বলা যাবে প্রয়াসটা সার্থক।’’

এ দিকে, শুক্রবার রাতেই বাংলা শিবিরে চলে এলেন দলের দুই প্রধান পেসার মহম্মদ শামি ও অশোক ডিন্ডা। অর্থাৎ শনিবার পুরো দল নিয়ে প্রস্তুতিতে নেমে পড়বে বাংলা।

V.V.S. Laxman Sourav Ganguly Cricket সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভি ভি এস লক্ষ্মণ Ranji Trophy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy