Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সচিনের প্রতিভা, রাহুলের দৃঢ়তা মিশেছে বিরাটে

চার জন মোটামুটি তিন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট শাসন করেছেন। গাওস্কর শিখিয়েছেন, কী ভাবে বিদেশের মাঠে বিপক্ষের বিষাক্ত পেস সামলে ম্যাচ বাঁচাতে হয়। নতুন বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং থেকে অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি, জেফ টমসন, ইংল্যান্ডের বব উইলিস, জন স্নো— কাদের সামলাননি গাওস্কর। তাও হেলমেটহীন অবস্থায়।

ভারতীয় ক্রিকেটের চার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান।

ভারতীয় ক্রিকেটের চার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানদের কথা উঠলে চারটে নাম সবার আগে ভেসে উঠবে। সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় এবং বিরাট কোহালি।

এই চার কিংবদন্তির তুলনা করার একটা সমস্যা হল, চার জন মোটামুটি তিন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট শাসন করেছেন। গাওস্কর শিখিয়েছেন, কী ভাবে বিদেশের মাঠে বিপক্ষের বিষাক্ত পেস সামলে ম্যাচ বাঁচাতে হয়। নতুন বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং থেকে অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি, জেফ টমসন, ইংল্যান্ডের বব উইলিস, জন স্নো— কাদের সামলাননি গাওস্কর। তাও হেলমেটহীন অবস্থায়। গাওস্করই প্রথম বিদেশে ভারতীয় ক্রিকেটের মাথা উঁচু করে দেন। আমরা জানতাম, গাওস্কর উইকেটে থাকা মানে সেই টেস্ট বেঁচে যাওয়া।

সচিন তেন্ডুলকর আমাদের শেখান, কী ভাবে বিদেশের মাঠে বিপক্ষকে শাসন করতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড— সব জায়গায় রান পেয়েছেন সচিন। দেখিয়েছেন, কী ভাবে বিদেশে জিততে হয়। তবে সচিনের একটা সুবিধে ছিল। তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানকে। যেমন বীরেন্দ্র সহবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শুরুতে সহবাগ এমন মার মারতেন পেসারদের, যে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যেত। যে সুবিধেটা কোনও দিন গাওস্কর পাননি।

সচিনের পাশাপাশি আমরা একই সময় পেয়ে যাই দ্রাবিড়কে। দ্রাবিড় হয়তো প্রতিভার দিক দিয়ে অন্য দু’জনের চেয়ে একটু পিছিয়ে, কিন্তু সেই ঘাটতিটা পুষিয়ে দিয়েছিলেন কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা আর হার না মানা মনোভাবে। এ রকম ফোকাস আমি খুব কম ব্যাটসম্যানের মধ্যেই দেখেছি। দ্রাবিড়ের দুর্ভাগ্য, কখনওই সে ভাবে প্রচারের আলোটা ওঁর ওপর পড়েনি।

এ বার আসছি বিরাটের কথায়। কী বলব ওঁকে? বিরাট এক কথায় অবিশ্বাস্য। আমার কাছে বিরাট হল, সচিনের প্রতিভা আর দ্রাবিড়ের মানসিক দৃঢ়তার মিশ্রন। আমরা একটা সময় ভাবতে পারতাম না, কেউ কোনও দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশো সেঞ্চুরি করতে পারে! সচিন করেছেন। আমার তখন ভাবতে পারিনি, কেউ এই রেকর্ড ভাঙার দিকে এগোতে পারেন। বিরাট এগোচ্ছেন। কেউ যদি সচিনের এই রেকর্ড ভাঙতে পারেন, সেটা বিরাটই পারবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনই ওর ৫৮টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল। কম করে বছর আটেক এখনও খেলবেন। রেকর্ডটা ভেঙে যেতেই পারে।

বাকি তিন কিংবদন্তিদের চেয়ে বিরাটকে আমি কয়েকটা ব্যাপারে এগিয়ে রাখব। এক, তিন ধরনের ক্রিকেটেই ও সেরা। দুই, ফিটনেসে সবার চেয়ে এগিয়ে। তিন, ওঁর মতো ম্যাচ উইনার ব্যাটসম্যান ভারতীয় ক্রিকেটে আসেনি। টেস্টে কনভার্সন রেট (হাফ সেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরিতে বদল) বাকি তিন জনের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আর সর্বকালের সেরার তালিকায় ডন ব্র্যাডম্যানের খুব কাছে। রান তাড়া করার ব্যাপারে এক নম্বর। চাপের মুখে চতুর্থ ইনিংসে রান করে ম্যাচ জিতিয়েছেন অনেক বার।

দিল্লি ক্রিকেটারদের অনেককে আমি ভাল করে চিনি। অনেকের মধ্যেই একটা চাপা ঔদ্ধত্যের ভাব থাকে। বিরাটকে দেখে আমার আবার অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের কথা মনে পড়ে যায়। একটা চাপা গরগরে রাগ আছে। আগ্রাসী ভাব আছে, হারতে চায় না। অনেকেই এই মনোভাবটাকে ঔদ্ধত্য হিসেবে দেখে। হতে পারে। কিন্তু এই মনোভাবটা তখনই আসে, যখন কেউ জানে, আমিই সেরা। বিরাটও সেটা ভাল করেই জানেন।

বিরাট হলেন ভারতীয় ক্রিকেটের বেতাজ বাদশা। মুকুটহীন সম্রাট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE