Advertisement
০১ মে ২০২৪

জ়াম্পাকে জবাব দিতে নেটে শটের ফুলঝুরি কোহালির

কেন জানি না, সোমবার দুপুরে কোহালিকে নেটে ব্যাট করতে দেখে মনে হল, আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আরও কঠোর অনুশাসনে নিজেকে ডুবিয়ে রাখছেন ভারত অধিনায়ক। যেন ঠিক করেছেন, তাঁর ‘লোহার দুর্গে’ সামান্যতম ছিদ্র আর রাখবেন না। যাতে কোনও ‘কালনাগিনী’ সুযোগ না পায় ঢুকে এসে ছোবল মারার। কোনও এক জ়াম্পা যেন সুযোগ না পায় তাঁর ‘স্লাইডার’ কাজে লাগানোর।  

জুটি: ভারতীয় শিবিরের দুই স্তম্ভ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহলি। সোমবার নাগপুরে। পিটিআই

জুটি: ভারতীয় শিবিরের দুই স্তম্ভ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহলি। সোমবার নাগপুরে। পিটিআই

কৌশিক দাশ
নাগপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৫
Share: Save:

বিরাট কোহালির কানে কানে কেউ কি বলেছে, ওই যে অস্ট্রেলিয়ার ওই সোনালি চুলের লেগস্পিনারটা আছে না, ও কিন্তু তোমাকে চা-র-বা-র আউট করেছে!

কেউ কি তাঁর কাছে গিয়ে ফাঁস করেছে যে, শ্রীধরন শ্রীরামের পরামর্শে এক বিশেষ অস্ত্রে শান দিয়ে চলেছেন অ্যাডাম জ়াম্পা? যে অস্ত্রে দু’বার কোহালিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই লেগস্পিনার।

কেন জানি না, সোমবার দুপুরে কোহালিকে নেটে ব্যাট করতে দেখে মনে হল, আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আরও কঠোর অনুশাসনে নিজেকে ডুবিয়ে রাখছেন ভারত অধিনায়ক। যেন ঠিক করেছেন, তাঁর ‘লোহার দুর্গে’ সামান্যতম ছিদ্র আর রাখবেন না। যাতে কোনও ‘কালনাগিনী’ সুযোগ না পায় ঢুকে এসে ছোবল মারার। কোনও এক জ়াম্পা যেন সুযোগ না পায় তাঁর ‘স্লাইডার’ কাজে লাগানোর।

শনিবার হায়দরাবাদ ওয়ান ডে খেলে উঠে রবিবার নাগপুরে পা। আজ, মঙ্গলবার দ্বিতীয় ওয়ান ডে। ভারতীয় দলের জন্য তাই এ দিন ঐচ্ছিক প্র্যাক্টিস ছিল বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার মাঠে। কিন্তু সবার আগে নেটে নেমে পড়লেন কোহালি। আলাদা করে ডেকে নিলেন দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা এবং যুজবেন্দ্র চহালকে। এবং দু’জনের বিরুদ্ধে এর পরে ডুবে গেলেন নিবিড় অনুশীলনে।

তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীও যে শান দিয়ে চলেছে বিশেষ ওই অস্ত্রে। কী সেই ডেলিভারি, যা কোহালিকেও দু’বার ফিরিয়ে দিয়েছে?

প্রত্যয়ী: অস্ট্রেলিয়া শিবিরের বড় অস্ত্র অ্যাডাম জ়াম্পা। পিটিআই

জানা গেল, এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের সঙ্গে সিরিজে বা বিগ ব্যাশের মতো প্রতিযোগিতায় জ়াম্পা সাধারণত বড় লেগস্পিন বা গুগলি করানোর দিকে ঝুঁকেছিলেন। তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল ‘ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড’ ডেলিভারি। অর্থাৎ পুরো কব্জির মোচড় দিয়ে, তালুকে বাইরের দিকে রেখে বল ছাড়া। ভারতে এসে সেই স্ট্র্যাটেজি কিছুটা বদলাতে হয়েছে তাঁকে। বলা ভাল, বদলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিন পরামর্শদাতা শ্রীরাম। প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডারের পরামর্শ ছিল, শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে বোলিংয়ে বৈচিত্রটা খুবই দরকার। যে বৈচিত্র আনতে শ্রীরাম-মন্ত্র হল, ‘ফ্রন্ট অব দ্য হ্যান্ড’ ডেলিভারি। অর্থাৎ পুরো কব্জির মোচড় না দিয়ে আঙুল সোজা রেখে ছাড়তে বল ছাড়তে হবে। এই ‘স্লাইডার’ কখনও সোজা ভিতরে চলে আসবে, কখনও বা অল্প লেগস্পিনও করবে।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলতি সিরিজে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ধরে কোহালি এখনও পর্যন্ত তিন ইনিংসে দু’বার আউট হয়েছেন জ়াম্পার বলেই। কেরিয়ারে এই নিয়ে মোট চার বার। জ়াম্পা তাঁর ৫৭টি আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ম্যাচে সব চেয়ে বেশি বার আউট করেছেন কোহালিকেই।

ভারত অধিনায়কের বিরুদ্ধে তাঁর এই সাফল্যের জন্য শ্রীরামকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন জ়াম্পা। স্বীকার করেছেন, ‘‘ভারতের মাটিতে কী ভাবে বল করা উচিত, সেটা শ্রী ভাল জানে। অস্ট্রেলিয়ায় আমি টপস্পিন, গুগলি— এ সব বেশি করতাম। এখানে আমি হাতের সামনে দিয়ে বলটা বেশি ছাড়ছি। একটু সাইড স্পিন করানোর চেষ্টা করছি। স্লাইডারের সঙ্গে একটু স্পিন। নেটে আমি এই ডেলিভারিটা খুব প্র্যাক্টিস করছি। ম্যাচেও কাজে দিচ্ছে,’’ এ দিন সাংবাদিকদের বলছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ২৬ বছর বয়সি রিস্টস্পিনার। বিশাখাপত্তনমে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জ়াম্পাকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন কোহালি। জ়াম্পার ‘স্লাইডার’ ঢুকে আসায় কোহালির ব্যাটের ভিতরের দিকের কানায় লাগে, মিসটাইম হয় শট। ‘‘হায়দরাবাদে আবার আমার স্লাইডারটা একটু সোজা হয়ে কোহালির প্যাডে লেগেছিল,’’ মনে করিয়ে দেন জ়াম্পা। সঙ্গে আরও একটা কথা বলে বসেন, ‘‘কোহালি হয়তো আমার বলে আর আউট হতে চাইবে না। কে জানে, এখন থেকে হয়তো ও আমার কথা একটু বেশিই ভাববে।’’

সত্যিই কি জাম্পাকে নিয়ে ভাবিত কোহালি? রিস্টস্পিনারকে তুলে মারার আগে কি দু’বার ভাববেন? নেটে অবশ্য সে রকম মনে হয়নি। চহালও রিস্টস্পিনার। এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের নিরিখে জ়াম্পার চেয়ে কিছুটা এগিয়েই। সেই চহালের একটা ডেলিভারি এগিয়ে এসে এতটা জোরে তুলে মারলেন যে, নন স্ট্রাইটার এন্ডের কাছে দাঁড়ানো জাডেজা মাটিতে ঝাঁপ মেরে কোনও মতে মাথা বাঁচালেন। ধুলো ঝেড়ে উঠে জাডেজা যখন একটু করুণ হাসি হাসছেন, দেখা গেল পরের বলটা খেলার জন্য দাঁড়িয়ে গিয়েছেন কোহালি। ভারতের বোলিং কোচ বি অরুণ এগিয়ে এসে জাডেজাকে বোঝাতে লাগলেন, কী ধরনের বল করতে হবে কোহালিকে। বোলিং কোচের কথা শুনে জাডেজা নিজেই শ্যাডো করে এক বার কাট করার, এক বার মিড উইকেট দিয়ে বল ওড়ানোর ভঙ্গি করলেন। তার পরে চলে গেলেন বোলিং রান আপে। নেটে আবার শুরু কোহালির শটের ফুলঝুরি!

জ়াম্পা বলেছেন, কোহালি হয়তো তাঁর কথা একটু বেশিই ভাববেন। তবে এটা বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন, বিরাট কোহালি যে বোলারের কথা বেশি ভাবেন, তাঁর রাতের ঘুম উড়ে যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE