Advertisement
E-Paper

India Tour of England: চর্চায় অশ্বিন, ‘বিস্ময়’ পিচের কোহালিয়ানা

অধিনায়ক কোহালি এবং তাঁর তরুণ ব্রিগেড প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে এমন শিঙা ফোঁকাফুঁকি শুরু করেছেন, যা কার্যত নজিরবিহীন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৬
নজরে: অনুশীলনে অশ্বিন। মঙ্গলবার।

নজরে: অনুশীলনে অশ্বিন। মঙ্গলবার।

লর্ডসের বিজয়ী দল পাল্টাতে চান না বিরাট কোহালি। আবার হেডিংলের ঘাসহীন, প্রাণহীন বাইশ গজ দেখেও ভারতীয় শিবির রীতিমতো অবাক। আর আক্রমণাত্মক মেজাজের টপ গিয়ারে থাকা ভারত অধিনায়ক তা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করতেও দেরি করেননি।

প্রাক-ম্যাচ ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে কোহালি শুনিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, পিচে ঘাস থাকবে। প্রাণবন্ত দেখাবে। কিন্তু পিচ তো দেখছি একদম ন্যাড়া। খুবই অবাক হয়েছি দেখে।’’ কে বলবে, কোহালিরা চেন্নাই নয়, হেডিংলেতে নামছেন! বিদেশের মাঠে দাঁড়িয়ে কোনও ভারত অধিনায়ক বিবৃতি দিচ্ছেন, পিচে ঘাস নেই কেন— এমন আগে কখনও দেখা গিয়েছে?

অধিনায়ক কোহালি এবং তাঁর তরুণ ব্রিগেড প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে এমন শিঙা ফোঁকাফুঁকি শুরু করেছেন, যা কার্যত নজিরবিহীন। লর্ডসে জেমস অ্যান্ডারসনের ঘাড়ের কাছে গিয়ে তাঁরা বার বার বলেছেন— বয়স হয়েছে, বুমরার বাউন্সারে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে। একেবারে সিঁটিয়ে গিয়েছে। এ বার পিচ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না যে, নিজেদের মাঠে খেলছ উপমহাদেশের পিচ বানিয়ে। কী হে, আমাদের পেস ব্যাটারিকে এত ভয়!

বাইশ গজ নিয়ে অপ্রত্যাশিত এই নাটকে চলতি সিরিজে ব্রাত্য থাকা আর অশ্বিন হেডিংলে টেস্টের প্রথম একাদশ নিয়ে আলোচনায় ভেসে থাকছেন। কোহালিদের লর্ডস জয়ের বাজনার প্রেক্ষাপটে, অজিত ওয়াড়েকরের দলের ইংল্যান্ডে ১৯৭১ সিরিজ় জয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তির আবেগের রামধনুর মধ্যে আজ, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে হেডিংলে দ্বৈরথ। যে মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নজির রয়েছে ২০০২ সালে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেই টেস্টে টসে জিতে ভিজে পিচে, মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেও ব্যাটিং করার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল। টসের সময়ে ধারাভাষ্যকার হিসেবে আসা ইয়ান বোথাম বিশ্বাস করতে পারেননি। ভেবেছিলেন ভারত অধিনায়ক গুলিয়ে ফেলেছেন। জিজ্ঞেসই করে বসেন, ‘‘কী বললে, তোমরা ব্যাট করছ?’’ তার পর বলে ফেলেন, ‘‘গুড লাক।’’ ৬২৮-৮ ডিক্লেয়ার্ড করে ম্যাচের রাশ তুলে নিয়েছিল ভারত। সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ— তিন জনেই সেঞ্চুরি করেন। এর পর কুম্বলে-হরভজনের ভেল্কিতে ইনিংসে পর্যুদস্ত হয় ইংল্যান্ড। দুই ভারতীয় স্পিনার ম্যাচে মোট নেন এগারো উইকেট।

পঞ্চাশ বছর আগে ওভালে চন্দ্রোদয়। লেগস্পিন কিংবদন্তির সেই ৩৮ রানে ছয় উইকেট ভারতীয় ক্রিকেটের অমর রূপকথা। উনিশ বছর আগে সৌরভের দলের দুই মহাতারকা স্পিনারের সাফল্য। ভারতীয় স্পিনের এমন একটা উৎসবের আবহে হেডিংলের ‘বিস্ময়কর’ পিচ সামান্য হলেও দৌড়ে রেখে দিয়েছে হরভজনের উত্তরসূরিকে।

টেস্ট শুরুর আগের দিন শোনা গেল, ভারতীয় শিবিরে দু’রকম আলোচনা রয়েছে। এক) পিচ যদি শুকনো থাকে, যদি খুব মেঘলা আকাশ না দেখা দেয়, যদি বৃষ্টির পূর্বাভাস না থাকে, তা হলে চার পেসারের ভাবনা থেকে সরে এসে তিন পেসার ও দুই স্পিনারে নামা হবে কি না? সে ক্ষেত্রে কোপ পড়তে পারে ইশান্ত শর্মার উপরে, যিনি লর্ডসে বেশ ভাল বোলিং করেছেন। মহম্মদ সিরাজ তিন নম্বর পেসার নিয়ে তর্ক-বিতর্কের উপরে তালা লাগিয়ে দিতে পেরেছেন, তাই তাঁকে বসানোর প্রশ্ন নেই। দুই) চার পেসার রেখে এক স্পিনারেই নামা। সে ক্ষেত্রে রবীন্দ্র জাডেজার জায়গায় যদি অশ্বিনকে আনা হয়। ঘটনা হচ্ছে, জাডেজা বল হাতে যতই নিষ্প্রভ থাকুন, শেষের দিকে তাঁর ব্যাটিংয়ের উপরে ভীষণ ভাবেই আস্থাশীল দল পরিচালন সমিতি। রোজ রোজ মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরাদের ব্যাটের তাণ্ডব চলবেই, এমন ধরে নেওয়া ভুল। আর রোজ রোজ জো রুটও তাঁদের সোবার্স-কানহাইয়ের মতো সম্মান দিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সব ফিল্ডার ছড়িয়ে রাখার ঐতিহাসিক ভুল করবেন না। যদিও অশ্বিনের পক্ষে পাল্টা যুক্তি রয়েছে যে, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় সারা দিন ব্যাট করে টেস্ট বাঁচিয়েছেন, দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছেন। আর একটা তথ্য থাকছে যে, হেডিংলে টেস্টে ইংল্যান্ড দলে অন্তত তিন জন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান থাকছেন। অশ্বিন যে বিশ্বের সেরা স্পিনার, এই বিশ্বাস কিন্তু এখনও কোহালিদের শিবিরে অটুট। হেডিংলের পিচ তাঁর প্রত্যাবর্তনের দরজা খুলে দেয় কি না, সেটাই দেখার।

ক্রিকেট বিশ্বের নজর যদিও বেশি করে থাকবে কোহালি এবং তাঁর দলের অতি আগ্রাসী শরীরী ভাষার দিকে। এতটাই ঝড় তুলেছে এই তীব্র, ঝাঁঝালো কোহালিয়ানা যে, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও আঁচ পড়েছে। স্টিভ স্মিথদের দেশের নামী ক্রিকেট সাংবাদিক রবার্ট ক্র্যাডক টিভি শো-তে বলছিলেন, ‘‘বিদেশের মাটিতে এত আগ্রাসী ভারতীয় দল আর কখনও দেখিনি। এরা জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবেই না।’’ ক্র্যাডকরা বলাবলি শুরু করেছেন, অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোহালির মতো ডাকাবুকো নেতা দরকার। অস্ট্রেলিয়া বলছে ভারত অধিনায়কের রাস্তায় হাঁটতে, এমন কখনও কেউ কল্পনা করতে পেরেছে! ও দিকে, নাসের হুসেন সোজাসাপ্টা লিখছেন, হে জো রুট, ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করতে নেমেছ, জনপ্রিয়তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামোনি। জোশ দেখাও!

কোহালিদের হাবভাব দেখে মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে, ক্রিকেট নয়, রীতিমতো অ্যাকশন ফিল্ম চলছে। লর্ডস টেস্টের পরে কে এল রাহুলের মন্তব্য নিশ্চয়ই কেউ ভোলেননি। ‘‘আমাদের এক জনকে কিছু বললে এগারো জন মিলে ফুঁসে উঠবে!’’ ক্রিকেটে মাঠের বিবৃতি কোথায়! এ তো সেই ‘তুম অগর এক মারোগে তো হম চার মারেঙ্গে’— শোলের বিখ্যাত সংলাপের রিমেকের মতো শোনাচ্ছিল!

India England Ravichandran Ashwin Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy